E-Paper

বাংলাদেশে বাজিমাত চোরাই ফোন চক্রের

সম্প্রতি পার্ক সার্কাস স্টেশনে এক কলেজছাত্রীর সাধের আইফোনটি ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে হাত থেকে ছিটকে পড়ে যায়। তার পরে সেটি বেমালুম উধাও হয়ে গিয়েছে। ভিড়ের মধ্যে ফোনটি আর খুঁজে পাননি ওই কলেজছাত্রী।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:০০
কুলটিতে উদ্ধার চোরাই সামগ্রী।

কুলটিতে উদ্ধার চোরাই সামগ্রী। — নিজস্ব চিত্র।

মুশকিল আসান বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গের কিনারে পড়শি দেশের সঙ্গে সম্পর্কে যা-ই টানাপড়েন চলুক, চোরাই চক্রের মোবাইল কারবারিদের জন্য সীমান্তের ও-পারে যেন স্বর্গের ঠিকানা। এ রাজ্যে চুরি হওয়া মোবাইল ফোনের অন্তত ৩০-৩৫ শতাংশ বাংলাদেশে পাড়ি দিচ্ছে বলে রাজ্যের পুলিশমহলে ধারণাটি ক্রমশপোক্ত হচ্ছে।

সম্প্রতি পার্ক সার্কাস স্টেশনে এক কলেজছাত্রীর সাধের আইফোনটি ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে হাত থেকে ছিটকে পড়ে যায়। তার পরে সেটি বেমালুম উধাও হয়ে গিয়েছে। ভিড়ের মধ্যে ফোনটি আর খুঁজে পাননি ওই কলেজছাত্রী। বালিগঞ্জের জিআরপি থানায় সেই আইফোন-১৫-এর হ্যান্ডসেটটি হারিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে উঠে আসে, গত ৩ ডিসেম্বর হারানো মোবাইল ফোনটি খুলনায় রয়েছে। বাংলাদেশের সিম ভরে তা ব্যবহার করা হচ্ছে বলেই পুলিশ জানতে পারে।

আইফোনের যা প্রযুক্তি, তাতে এমনিতেই তা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া কঠিন। নিখোঁজ আইফোনের হ‍্যান্ডসেটের নম্বর অন‍্য কারও ফোনে সেভ থাকলেই তার হদিস চলে আসবে। সেই হ‍্যান্ডসেটে অন‍্য একটি সিম ভরামাত্র সেটির লোকেশন বা অবস্থান, যেখানে যেখানে পুরনো নম্বর সেভ করা ছিল, ফুটে উঠবে। পার্ক সার্কাস স্টেশনে কলেজছাত্রীর হারানো আইফোনের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। রেল পুলিশের তদন্তকারী এক অফিসারের দাবি, “সাত দিনের মধ্যে খোয়া যাওয়া ফোনটি হাতবদল করে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে বিক্রিও হয়ে গিয়েছে। ওই হ্যান্ডসেটে অন‍্য সিম ভরে ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। কিন্তু সব কিছু জেনেও ফোনটি ফেরত আনা সম্ভব নয়।”

রাজ্য পুলিশের এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, “সাধারণত চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনের ৬৫-৭০ শতাংশই উদ্ধার করা যায়। কিন্তু ৩০-৩৫ শতাংশ চোরাই ফোন উদ্ধার করা যাচ্ছে না। ওই সব ফোন বাংলাদেশে পাচার হয়ে গিয়েছে বলে কিছু তথ‍্যসূত্র মিলছে।” সীমান্তে দুই দেশের চোরাই ফোন পাচার চক্রের দুষ্কৃতীদের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে বলেও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে। চোরাই মোবাইল ফোন এ রাজ্যের বাসিন্দাদের বিক্রি করলে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। আর মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত হলে চুরি চক্রের পান্ডারাও চিহ্নিত হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে চোরাই ফোন বিক্রি করতে পারলে এ রাজ্যের দুষ্কৃতীরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, “বছরখানেক ধরে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অশান্ত। কিন্তু রেল পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, মাত্র দিন সাতেকেই কলকাতা থেকে চুরির আইফোন বাংলাদেশের খুলনায় মসৃণ ভাবে পৌঁছে গিয়েছে। সীমান্তের নজরদারি টপকে চোরাই হ‍্যান্ডসেট বাংলাদেশে পাচারের বিষয়টি আমাদের চিন্তায় রেখেছে।”

সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক কর্তা অবশ্য দাবি করছেন, “সীমান্তে যথেষ্ট নজরদারি রয়েছে। সীমান্ত পেরোনোর সময়ে কারও কাছে একাধিক মোবাইল ফোন দেখলেই খোঁজ নেওয়া হয়। নথিপত্র না-থাকলে ফোন বাজেয়াপ্তও করা হয়।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mobile Theft Smuggling India-Bangladesh Border Bangladesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy