মাত্র ২৪ ঘণ্টায় সব ওলটপালট।
দিন দু’য়েক আগেই ঘিরে ছিল অনুগামীরা। এখন লক আপে। বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে এমন ভাবে থানার হাজতেই অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে রাত কাটালেন দুই কিশোরকে গুলি করে খুনের ঘটনায় মুল অভিযুক্ত ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পবিত্র রায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘনিষ্ঠ অফিসারদের কাছ থেকে তিনি বারবার জানতে চাইছেন, ঘটনায় তাঁর কী সাজা হতে পারে? তাঁকে কি ফাঁসি দেওয়া হবে?
গত রবিবার পবিত্রবাবুর গুলি চালানোর ঘটনায় তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। দলের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে তড়িঘড়ি তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করে রাজ্য নেতৃত্ব। ফলে দলের জেলার নেতারাও তাঁর মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছেন। এ বার তাঁর সভাপতি পদ থেকে সরানোর জন্য তোড়জোড় শুরু হল দলের অন্দরে। মঙ্গলবার দুপুর দু’টো নাগাদ ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কক্ষে দলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা জরুরি বৈঠক করেন।
পঞ্চায়েত সমিতির পরের সভাপতি কে হবেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী।
তবে এখনই সভাপতি কে হচ্ছেন তা স্পষ্ট হয়নি। ইংরেজবাজারে মোট ৩২টি আসন রয়েছে। তার মধ্যে তৃণমূলের হাতে রয়েছে ২৩টি, কংগ্রেসের ৯টি। সভাপতির আসনটি তফসিলি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মধ্যে একমাত্র পবিত্রবাবুই ছিলেন তফসিলি সম্প্রদায়ের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। এ ছাড়া রয়েছেন তিন মহিলা। জবা চৌধুরী, সঙ্গীতা মণ্ডল ও মমতা নিয়োগী। এই তিন মহিলার মধ্যে কাউকে সভাপতি করা হবে।
ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির দলনেতা স্বপন মিশ্র বলেন, ‘‘আমরা দলের ২২ জন সদস্যকে নিয়ে আলোচনা করেছি।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পবিত্রবাবুকে আমরা পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য বলব। উনি রাজি না হলে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনব। আর সভাপতি কে হবেন, তা আমরা দলীয় স্তরে আলোচনা করব। এখনই কিছু ঠিক হয়নি।’’ কৃষ্ণেন্দুবাবু এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
থানার হাজতে প্রথম দিন কাটানোর পরই ভেঙে পড়েছেন পবিত্রবাবু। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিনে রাতে অন্যদের সঙ্গে তাঁকে তিনটি রুটি ও সব্জি খেতে দেওয়া হয়েছিল। রাতে মাত্র একটি রুটি খেয়েই থাকেন তিনি। এ দিন দুপুরে তাঁকে খেতে দেওয়া হয়েছে মাছ-ভাত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, থানার হাজতে পবিত্রবাবু ছাড়াও রয়েছে আরও তিন জন।
ইংরেজবাজারের খাসিমারি এলাকায় পবিত্রবাবুর বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। পুরো বাড়িটি মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি। বাড়ির পাশে সুন্দর বৈঠক খানা-সহ দোলনা সবেরই ব্যবস্থা রয়েছে। পবিত্রবাবুকে সব সময় তাঁর বেশ কিছু অনুগামী ঘিরে থাকতেন। বাড়িতে সব সময় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ভিড় জমাতেন। কখনও দলের কাজ নিয়ে, আবার কখনও পঞ্চায়েতের কাজ নিয়ে হাজির হতেন বহু মানুষ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন আত্মীয় স্বজন ছাড়া বাড়িতে আর কেউ আসছেন না। যদিও এ দিন আর মুখ খুলতে চাননি পবিত্রবাবুর পরিবার।
এমনিতে থানাতে তাঁর সঙ্গে পরিবারের কেউ দেখা করতে আসেননি বলে জানা গিয়েছে। পবিত্রবাবুর মা বলেন, ‘‘আমার শারীরিক অবস্থা ভাল নেই। আমি কিছু বলতে পারব না।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পবিত্রবাবুর কাছ থেকে তাঁর পিস্তলটি উদ্ধার করার পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে মোবাইলটিও। ওই মোবাইলটি থেকে ঘটনার পরই দলের একাধিক নেতৃত্বকে ফোন করেছিলেন পবিত্রবাবু। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পবিত্রবাবু প্রথমে ফোন করে বলেছিলেন কংগ্রেস কর্মীদের হামলার মুখে পড়েছেন তিনি। আর কংগ্রেস কর্মীদের হাত থেকে বাঁচতে প্রাণভয়ে গুলি চালিয়েছেন তিনি।
তবে কাদের ফোন করা হয়েছিল, তা স্পষ্ট করে
বলছেন না ইংরেজবাজারের পুলিশকর্তারা।