Advertisement
E-Paper

সীতারামনকে বলে কপ্টার আনালেন অধীর, প্রিয়কে ঘিরে মিলল শাসক-বিরোধী

রাজনীতির সক্রিয় ময়দানে শেষ পর্যন্ত আর ফিরতে পারলেন না প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। কফিনবন্দি হয়ে ফিরলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যু যেন দেখিয়ে দিল, তিনি এত দিন মৃত ছিলেন না। অসংখ্য অনুগামীর মধ্যে বেঁচে তো ছিলেনই, বেঁচে ছিলেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মাঝেও।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ১৪:৫৭
প্রদেশ কংগ্রেস সদর দফতরে প্রিয়রঞ্জনের দেহে অন্তিম শ্রদ্ধা কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র এবং তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের। রয়েছেন দীপা দাশমুন্সি এবং আবদুল মান্নান। —নিজস্ব চিত্র।

প্রদেশ কংগ্রেস সদর দফতরে প্রিয়রঞ্জনের দেহে অন্তিম শ্রদ্ধা কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র এবং তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের। রয়েছেন দীপা দাশমুন্সি এবং আবদুল মান্নান। —নিজস্ব চিত্র।

টানা ন’বছর সক্রিয় রাজনীতি থেকে অনেক দূরে ছিলেন। ফিরে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই জেনেও অনুগামীরা আশায় বুক বাঁধতেন। আর অন্যেরা স্বস্তি বা অস্বস্তি নিয়ে বলতেন, ‘প্রিয়রঞ্জন জীবন্মৃত, আর ফিরতে পারবেন না’।

রাজনীতির সক্রিয় ময়দানে শেষ পর্যন্ত আর ফিরতে পারলেন না প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। কফিনবন্দি হয়ে ফিরলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যু যেন দেখিয়ে দিল, তিনি এত দিন মৃত ছিলেন না। অসংখ্য অনুগামীর মধ্যে বেঁচে তো ছিলেনই, বেঁচে ছিলেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মাঝেও। দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে কালিয়াগঞ্জ— শাসক, বিরোধী, স্বপক্ষ, বিপক্ষ— সব হিসেব গুলিয়ে দিলেন তিনি। কংগ্রেস, বাম, বিজেপি, তৃণমূল— সবাই কোনও না কোনও ভাবে সামিল প্রিয়রঞ্জনের শেষযাত্রায়।

সোমবার প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর। প্রিয়রঞ্জনের দেহ কলকাতায় আসার পর রাতে পিস হাভেনে ছিল। মঙ্গলবার সকালে প্রথমে প্রদেশ কংগ্রেস সদর দফতরে এবং তার পরে দক্ষিণ কলকাতার রানি ভবানী রোডে প্রিয়রঞ্জনের বাড়ি হয়ে দেহ রায়গঞ্জের উদ্দেশে রওনা হবে বলে জানানো হয়েছিল। সেই অনুযায়ীই এ দিনও এগিয়েছে কর্মসূচি। তবে, দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি থেকে বেহালা ফ্লাইং ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল প্রিয়র কফিন। সেখান থেকে রাজ্য সরকারের দেওয়া কপ্টারে রায়গঞ্জের উদ্দেশে রওনা হবে দেহ, তেমনটাই জানা গিয়েছিল নবান্ন সূত্রে। তা কিন্তু শেষ পর্যন্ত হল না। দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে ফোন করে সেনাবাহিনীর কপ্টার আনালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। সেই কপ্টারেই কলকাতা বিমানবন্দর থেকে রায়গঞ্জে পাঠানোর ব্যবস্থা হল কফিন।

বাম, বিজেপি, তৃণমূল, নকশাল— সব দলই এ দিন বিধান ভবনে হাজির হয়েছিল প্রিয়রঞ্জনের মরদেহে অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে। —নিজস্ব চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কপ্টারের ব্যবস্থা করেছিলেন, তাতে কেন গেল না প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির কফিন?

আরও পড়ুন: মতান্তর হয়েছে, মনান্তর হয়নি, লিখলেন মমতা

কংগ্রেস সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই কপ্টারটি ছোট। তাতে কফিনের সঙ্গে প্রিয়র স্ত্রী দীপা দাশমুন্সি এবং ছেলে মিছিল ছাড়া আর কেউ যেতে পারতেন না। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বও শেষযাত্রায় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির কফিনের সঙ্গেই থাকতে চাইছিলেন। তাই অধীর চৌধুরী নিজে সক্রিয় হন। তিনি ফোন করেন প্রতিরক্ষী মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে। সেনাবাহিনীর কপ্টার দেওয়ার অনুরোধ জানান তাঁকে। সীতারামনও দ্রুত দু’টি কপ্টারের ব্যবস্থা করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর শেষযাত্রার জন্য। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির দেহ এবং কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে সেই দু’টি কপ্টার রায়গঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে। বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে রাজ্য সরকারের দেওয়া কপ্টারে আরও কয়েক জন কংগ্রেস বিধায়ক এবং নেতা যাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।

দীপা দাশমুন্সি বললেন, ‘‘সেনাবাহিনী যে দু’টি কপ্টার দিয়েছে, তার একটাতে কফিন যাবে। সঙ্গে থাকব আমি, আমার ছেলে মিছিল, আমার ভাগ্নে। অধীর চৌধুরী, আবদুল মান্নান, মনোজ চক্রবর্তী, সন্তোষ পাঠকও ওই কপ্টারেই যাবেন। সেনার দেওয়া অন্য কপ্টারটিতে যাবেন কংগ্রেসের অন্য নেতারা।’’ বিকেল ৩টে নাগাদ কলকাতা থেকে রায়গঞ্জের দিকে উড়বে কপ্টার, জানা গিয়েছিল প্রথমে। কিন্তু দীপা দাশমুন্সি জানালেন, তার অনেকটা আগেই রওনা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ‘আজ আবার আমার পিতৃবিয়োগ হল’

মঙ্গলবার সকালে প্রদেশ কংগ্রেস সদর দফতর বিধান ভবনে গিয়ে প্রিয়রঞ্জনের দেহে অন্তিম শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, রায়গঞ্জের সাংসদ মহম্মদ সেলিম। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ সৌগত রায়। বিজেপির তরফে জয়প্রকাশ মজুমদার, নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়ও গিয়েছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে

মাল্যদানে, শেষযাত্রায়, স্মৃতিচারণে এবং সহযোগিতায় যে ভাবে এ দিন মিলে গেল কেন্দ্রীয় সরকার এবং দেশের প্রধান বিরোধী দল, যে ভাবে মিলে গেল রাজ্যের শাসক এবং পুরো বিরোধী পক্ষ, তা শুধু প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে ঘিরেই সম্ভব। বলছে রাজনৈতিক শিবির।

Priya Ranjan Dasmunsi Death Final Journey Condolence প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy