তৃণমূলে যোগ দিলেও বিধানসভায় কংগ্রেসের সদস্যপদ এখনও আঁকড়ে রয়েছেন মানস ভুঁইয়া। কবে তা ছাড়বেন, আদৌ ছাড়বেন কিনা, এখনও স্পষ্ট নয়! কিন্তু খাতায়-কলমে সেই জটিলতা থাকলেও সবংয়ের রাজনৈতিক দখল নিয়ে স্থানীয় রাজনীতির হাওয়া গরম হতে শুরু করে দিল। সবংয়ে দাঁড়িয়ে ‘দলবদলু’ মানসবাবুকে যেমন তৃণমূলের ‘গোডাউনের গেটকিপার’ বলে কটাক্ষ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, তেমনই অধীর-মান্নানদের পাল্টা জবাব দিয়ে মানসবাবুও জানিয়ে দিলেন, ‘জগাই-মাধাইয়ের ঘৃণার মঞ্চে’ থাকার তুলনায় তিনি তৃণমূলের ভাঁড়ারের দ্বাররক্ষী হয়েই গর্বিত!
মানসবাবু কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর শনিবারই প্রথম সবংয়ে এলেন অধীরবাবু। ব্লক কংগ্রেসের সম্মেলনে অধীরবাবু ছাড়াও ছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, হাঁসনের বিধায়ক মিল্টন রশিদ প্রমুখ। ওই মঞ্চ থেকেই মানসবাবুকে কটাক্ষ প্রদেশ সভাপতির, ‘‘মানস ভুঁইয়া ছাড়াও কংগ্রেসের কয়েক জন তৃণমূলে গিয়েছেন। কিন্তু ওঁদের দলে নেওয়ার পর গোডাউনে ফেলে রেখেছে তৃণমূল। ঠুঁটো করে রেখেছে। ওই গোডাউনেরই গেটকিপার করা হয়েছে মানস ভুঁইয়াকে।’’ মানসবাবুর কড়া সমালোচনা করেন মান্নানও। তাঁর কথায়, “উনি কোন দলে, সেটাই বলতে পারছেন না। এটা দুর্ভাগ্যের।” মান্নানের আরও সংযোজন, “কেউ যখন খুনিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন কিছু পাওয়ার লোভে, তখন মাথা হেঁট হয়ে যায়। উনি এখন পিসি-ভাইপোর পদতলে আশ্রয় নিয়েছেন।’’
কংগ্রেসের এ দিনের ব্লক সম্মেলনে দলের নিচুতলার নেতারা সকলে যাতে উপস্থিত থাকেন, সে জন্য প্রদেশ নেতৃত্বের তরফে আগে থেকেই বার্তা পাঠানো হয়েছিল। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মনোবল বাড়াতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এ দিন আরও বলেন, ‘‘সবং মানেই মানস ভুঁইয়া আর মানস ভুঁইয়া মানেই সবং, এই ধারণাটা যে ভুল, আজকের সম্মেলন তা বুঝিয়ে দিয়েছে। সবংয়ের মানুষ মানস ভুঁইয়াকে সম্মানিত করেছেন। এখান থেকে বার বার তাঁকে জিতিয়েছেন। কিন্তু মানস ভুঁইয়া তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যে নেতা শুধু নিজের স্বার্থের কথা ভাবেন, তিনি মানুষের কথা ভাববেন কী ভাবে?
বস্তুত, মানসবাবু তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় শাসক দলের স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মীই অসন্তুষ্ট। এ দিন তাঁদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে অধীরবাবু বলেন, “কংগ্রেসের দরজা খোলা। যদি মনে করেন সম্মান-ইজ্জত নিয়ে রাজনীতি করবেন, কংগ্রেস আপনাদের সেই সুযোগ দেবে।”
তবে অধীর-মান্নানদের জবাব দিতে এ দিন প্রস্তুত ছিলেন মানসবাবুও। তেমাথানিতে তৃণমূলের ছাত্র-যুব সমাবেশ থেকে খাতায়-কলমে এখনও কংগ্রেস বিধায়ক বলেন, “কংগ্রেস ছাড়িনি। কংগ্রেসই আমাকে সাসপেন্ড করেছে। কংগ্রেস ভালবাসার মঞ্চ ছিল। কিন্তু জগাই-মাধাইয়ের হাত ধরে তা আজ ঘৃণার মঞ্চে পরিণত হয়েছে।” অধীরবাবুকে এক হাত নিয়ে মানস আরও বলেন, ‘‘তৃণমূলের ভাঁড়ারের দায়িত্ব যদি সামলাতে হয়, তা হলে মাথা উঁচু করে গর্ব ভরে সেই দায়িত্ব পালন করব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আমার মা-বোন-নেত্রী। অভিষেক আগামী প্রজন্মের উজ্জ্বল নক্ষত্র, টগবগে নেতা। ওঁর হাত থেকে পতাকা নিয়ে আমি পুলকিত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল এমন একটা দল যেখানে হাজার দুয়ার নেই। একটাই দুয়ার, একটাই পতাকা, এক জনই নেত্রী। তাই ভেবেছি, হাজার দুয়ারে গিয়ে আর গান গাইব না।” মানসবাবুর কাছে এ দিনও জানতে চাওয়া হয়, কংগ্রেসের বিধায়ক পদে কবে ছাড়বেন? সে ব্যাপারে অবশ্য তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy