রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি না-করে উত্তরবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার প্রতিবাদে উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেসকে টানা আন্দোলনে নামার নির্দেশ দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। জেলা কংগ্রেসের উদ্যোগে রবিবার রায়গঞ্জের বিধানমঞ্চে আয়োজিত একটি রাজনৈতিক কনভেনশনে যোগ দিয়েছিলেন অধীর। সেখানেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রধান স্বপ্ন ছিল রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি করা। তাই জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বকে বলছি, আপনারা জেলা জুড়ে টানা আন্দোলনে নেমে পড়ুন।”
অধীরের অভিযোগ, তৃণমূল-পরিচালিত রাজ্য সরকার গত তিন বছরে রায়গঞ্জে এইম্সের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ না করে উত্তরবঙ্গবাসীর সঙ্গে বঞ্চনা করেছে। পানিশালা এলাকার চাষিরা স্বেচ্ছায় জমি দিতে রাজি থাকলেও রায়গঞ্জে হাসপাতাল তৈরি হলে প্রিয়বাবু, তাঁর স্ত্রী তথা রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ দীপা দাশমুন্সি ও রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের সুনাম হবে। এই আশঙ্কা থেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি অধিগ্রহণ করতে চাননি বলে প্রদেশ সভাপতির অভিযোগ।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য অবশ্য দাবি করেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী আবেদন জানানো সত্বেও কংগ্রেস চাষিদের দিয়ে জেলাশাসকের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের কাছে লিখিত ভাবে স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার আবেদন জানাতে পারেনি। কেন তা হয়নি, ঘোষণা করার জন্য অধীরবাবুকে অনুরোধ করছি। নয়তো জেলাবাসী হাসপাতালের নামে কংগ্রেসের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আন্দোলনকে ব্যর্থ করে দেবেন!” জেলা কংগ্রেস নেতাদের পাল্টা দাবি, মুখ্যমন্ত্রী ওই চাষিদের দেখা করার সময়ই দেননি!
কংগ্রেস সূত্রের খবর, এ দিনের কনভেনশনে জেলা ও ব্লক কংগ্রেস নেতাদের একাংশ অধীরবাবুকে জানান, রায়গঞ্জে এইম্সের ধাঁচের হাসপাতালের দাবিতে দল জেলা জুড়ে টানা জোরদার আন্দোলন করতে পারেনি। সেই কারণেই বাসিন্দাদের এইম্সের গুরুত্ব বোঝানো যায়নি। রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে দীপার পরাজয়ের সেটাই অন্যতম বড় কারণ। তাঁদের মত শুনেই অধীর এর পরে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বকে জেলা জুড়ে টানা আন্দোলনে নামার নির্দেশ দেন। তবে দীপার পরাজয়ের জন্য অধীর কনভেনশনে কংগ্রেস কর্মীদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকেও দায়ী করেছেন।
প্রকাশ্যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অবশ্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকেই কটাক্ষ করেছেন। তাঁর মন্তব্য, “দিদি ও মোদী গোপন বোঝাপড়া করে রায়গঞ্জ থেকে কল্যাণীতে এইম্সের ধাঁচে হাসপাতাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু রাজ্য ও কেন্দ্রের উদ্যোগে আগে রায়গঞ্জে জমি অধিগ্রহণ করে হাসপাতালের কাজ শুরু না হলে কংগ্রেস উত্তরবঙ্গ জুড়ে আন্দোলন শুরু করবে।” পরে শিলিগুড়ির ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আর একটি কর্মিসভায় গিয়েও অধীর বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, আরেকটা না হয় এইম্স উত্তরবঙ্গে করে দেওয়া যাবে! তিনি জানেন কি না জানি না যে, এইম্স প্রতিটি রাজ্যে নেই। সেখানে উনি চাইলেই প্রতিটি জেলায় জেলায় এইম্স হয় না! উত্তরবঙ্গে এইম্স হলে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি হোত।”
তবে এইম্স নিয়ে জোরালো আন্দোলন করার ব্যর্থতায় হতাশা গোপন করেননি জেলা ও ব্লক স্তরের কিছু কংগ্রেস নেতা। রায়গঞ্জ শহর কংগ্রেস সভাপতি রণজয়কুমার দাস বলেন, “তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতা দখল করার পরে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে কংগ্রেস পথ অবরোধ, রেল অবরোধ-সহ এমন কোনও আন্দোলন করেনি, যাতে পুলিশকে লাঠি ও গুলি চালাতে হয়েছে। আমরা মানুষকে হাসপাতাল তৈরির গুরুত্ব বোঝাতে পারিনি বলেই লোকসভা নির্বাচনে দলের খারাপ ফল হয়েছে।” দলীয় সূত্রের খবর, ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে দীপা জেলায় না-থাকায় দলের নিচু তলার কর্মী-সমর্থকদের অনেকের মনোবল তলানিতে ঠেকেছে বলেও কেউ কেউ এ দিন কনভেনশনে দাবি করেন।
তবে অধীরের বক্তব্য, “দীপাদেবী দিল্লিতে সরকারি আবাসন ছেড়ে নতুন বাড়ির খোঁজ শুরু করেছেন। তাঁর স্বামী গুরুতর অসুস্থ। ছেলে একাদশ শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। এ সব কারণে দীপাদেবী ব্যস্ত থাকায় জেলায় ফিরতে একটু দেরি হচ্ছে।” উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক মোহিতবাবু পরে জানান, প্রদেশ সভাপতির পরামর্শ মেনে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে কী ধরনের টানা আন্দোলন হবে, খুব শীঘ্রই জেলা নেতৃত্ব আলোচনা করে ঠিক করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy