উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া নয়। কন্যাশ্রী প্রাপক স্কুলের ছাত্রীরা সাবলম্বী হতে কী ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী, সেটা তাদের থেকেই জেনে সেই মতো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। ‘কন্যাশ্রী-সাবলম্বী প্রকল্প’-এ এই উদ্যোগ নিয়েছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।
সম্প্রতি রাজ্যর নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা পুরুলিয়ায় এসে জেলার জন্য কন্যাশ্রী-সাবলম্বী নামের এই মডেল প্রকল্প শুরু করেন। তারপরেই জোরকদমে কন্যাশ্রীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলার অন্য মহকুমাগুলির চেয়ে এ ব্যাপারে এগিয়ে রঘুনাথপুর মহকুমা। নিতুড়িয়া ব্লকে ৭৪ জন ছাত্রী তথা কন্যাশ্রী প্রাপককে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় কিসান মান্ডিতে জেলার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর আনন্দধারা প্রকল্পে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়, মহিলা বা স্কুলের ছাত্রীদের চাহিদার বদলে প্রশিক্ষণের বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফলে অনেকের মন থাকে না সেই প্রশিক্ষণে। সাবলম্বী হওয়ার লড়াইতেও সেই প্রশিক্ষণ কাজে লাগে না। কন্যাশ্রী-সাবলম্বী প্রকল্পে প্রশিক্ষণের এই চেনা ছকটা বদলাতে চাইছে প্রশাসন। এই প্রেক্ষিতেই তৈরি করা হয়েছে কন্যাশ্রী কার্ড। জেলার বিভিন্ন স্কুলে সেই কার্ড ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে। অন্য বিবরণ ও তথ্যের সঙ্গে তাতে জানতে চাওয়া হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কন্যাশ্রী প্রাপক ছাত্রী কী ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী। প্রশাসনের দাবি, এতে আশাতীত সাড়া পাওয়া গিয়েছে। বিশেষ করে রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় এই কাজ অনেকটাই এগিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর মহকুমার ছ’টি ব্লকের প্রায় তেরোশো ছাত্রী প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সেলাই, হাতের কাজ, বিউটিশিয়ান, স্পোকেন ইংলিশ, ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন, কম্পিউটার-সহ আত্মরক্ষার মতো বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ওই ছাত্রীরা। তবে মূলত উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রী তথা কে-টু পর্যায়ের কন্যাশ্রী প্রাপকদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তার চাইতে কমবয়সী ছাত্রীরা প্রশিক্ষণ পাবে না, বিষয়টি এমন নয়। তবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ষোলো থেকে আঠারো বছরের ছাত্রীদের ক্ষেত্রেই।
কন্যাশ্রী-সাবলম্বী নামের এই পাইলট প্রোজেক্ট পুরুলিয়ায় শুরুর আগেই ছাত্রীদের চাহিদা জেনে সেই মতো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নিয়েছিল রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন। ফলে কাজের ক্ষেত্রেও এগিয়ে এই ব্লক। ইতিমধ্যে স্কুলগুলিতে কন্যাশ্রী কার্ড পাঠিয়ে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করে ফেলেছে ব্লকগুলি। তাতে দেখা যাচ্ছে, সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিতে চেয়েছে ৪২৪ জন ছাত্রী। হাতের কাজের প্রশিক্ষণে আগ্রহ দেখিয়েছে ২২২ জন। বিউটিশিয়ানের কোর্স করে সাবলম্বী হতে চাইছে ১৮৪। স্পোকেন ইংলিশের প্রশিক্ষণ চেয়েছে ১৬ জন, আর ব্যাক্তিত্ব বিকাশের প্রশিক্ষণে আগ্রহী হয়েছে ২৫ জন। কম্পিউটার শিখতে চেয়েছে ৩৮৮ জন। আর সেল্ফ ডিফেন্স-এর পাঠ নিতে চেয়েছে জনা কুড়ি ছাত্রী।
ইতিমধ্যে নিতুড়িয়া ব্লক প্রশাসন সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ শুরু করিয়ে কন্যাশ্রী-সাবলম্বী প্রকল্পে এগিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি মহকুমার ছ’টি ব্লকের বিডিও ও কয়েক’টি দফতরের জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত স্কুলকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তথ্য নেওয়ার কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। আমরা চাইছি ডিসেম্বরের মধ্যে মহকুমায় প্রশিক্ষণের কাজ পুরোদমে শুরু করে দিতে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে ছাত্রীদের চাহিদা মতো প্রশিক্ষণ দেবে স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ, পঞ্চায়ত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের মতো চারটি দফতর। তবে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ কারা দেবে, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলোকেশপ্রসাদ রায় জানান, প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজ সেরে দ্রুত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ মহকুমাশাসকদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।