সব ধর্মের মানুষই তাঁর কাছে সমান। কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম বা সম্প্রদায়কে তিনি তোষণ করে চলেন না বলে বুধবার মন্তব্য করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘অনেকে বলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু সংখ্যালঘুদের জন্য কাজ করে। মুসলিমদের তোষণ করার কথা বলে। তাদের জানা উচিত, এ রাজ্যের জনসংখ্যার ৩০%-এর উপরে লোক মুসলিম।... আমি কোনও একটি সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করি না। আমি কোনও উত্তেজনা তৈরি করতে মন্দিরে যাই না।’’
বামেদের অভিযোগ, বিজেপি-র সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকতার মোকাবিলায় তৃণমূলের তরফে সংখ্যালঘু মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া মেরুকরণের রাজনীতিকে তীব্র করছে। বিজেপি আরও সরাসরি অভিযোগ করে, মুখ্যমন্ত্রীর নীতি মুসলিম তোষণের। কলকাতায় এ দিন একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সেই প্রসঙ্গ তোলায় বিরোধীদের দাবি, তোষণের অভিযোগই আসলে স্বীকৃতি পেল মমতার বক্তব্যে!
কোনও নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ না করেই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, বাংলায় খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ, শিখ—সব ধরনের মানুষ থাকেন। সরকারকে সবার খেয়াল রাখতে হয়।
আরও পড়ুন: পরোয়ানা তো হলো, গুরুঙ্গ কোথায়
কিন্তু বিরোধীরা সেই দাবি মানতে নারাজ। তাঁরা বিজয়া দশমীর সন্ধ্যায় বিসর্জন বন্ধ রাখার নির্দেশ এবং তিন তালাক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তৃণমূলের নীরবতা নিয়ে সরব। বিসর্জন সংক্রান্ত নির্দেশ ঘিরে ইতিমধ্যেই মামলা হয়েছে। আর রাজ্যের মন্ত্রী হয়েও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী প্রকাশ্যে তিন তালাক সংক্রান্ত রায়ের বিরোধিতা করেছেন। যদিও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে বলা হয়েছে, সিদ্দিকুল্লার বক্তব্য দলের নয়, একান্ত ভাবেই তাঁর সংগঠনের। কিন্তু এই দুই প্রসঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় ছিল বলেই তিনি এ দিন নিজে থেকে তোষণের প্রসঙ্গ এনেছেন, এমনই ধারণা বিরোধী নেতাদের।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘আমরা যা বলছি, মুখ্যমন্ত্রীর কাজে ও কথায় সেটাই স্পষ্ট! আমরা চার দিন উৎসব করি, ওরা এক দিন করলে ক্ষতি কী— এমন মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী করেন কী ভাবে? প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে তৃণমূলের জন্যও। মুখ্যমন্ত্রীর এই ব্যাখ্যা দেওয়ায় সেটারই স্বীকৃতি মিলল।’’ বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘হৃদয় ও মস্তিষ্কের দ্বন্দ্ব থেকেই মুখ্যমন্ত্রী এই কথা বলে ফেলেছেন। উনি নিজেও জানেন, উনি কী করছেন। অস্বীকার করে সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।’