Advertisement
০৪ মে ২০২৪
school

West Bengal Schools Reopening: পদে পদে প্রশ্নের কাঁটা নিয়েই দেড় বছরেরও বেশি সময় পরে রাজ্যে খুলল স্কুল-কলেজ

কোভিড বিধি যথাযথ ভাবে মেনে চলার মতো আর্থিক সংস্থান সব স্কুলের রয়েছে কি না, সেই বিষয়ে শিক্ষকদের একাংশের সংশয় আছে।

শুরুর ঘণ্টা: করোনা যুঝে দরজা খোলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দক্ষিণ কলকাতার এক স্কুলে।

শুরুর ঘণ্টা: করোনা যুঝে দরজা খোলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দক্ষিণ কলকাতার এক স্কুলে। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৫৯
Share: Save:

করোনার চোখরাঙানির মধ্যে ক’জন পড়ুয়া ক্লাসে হাজির হবে? যারা আসবে না, অনলাইনে তাদের পড়াশোনা চলবে কি? অতিমারির স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস চালিয়ে যাওয়া যাবে তো? যে-সব স্কুলের মেরামতি শেষ হয়নি, সেখানে সেই কাজ কবে সাঙ্গ হবে? কবেই বা শুরু হবে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পঠনপাঠন? পদে পদে এমনই সব প্রশ্নের কাঁটা নিয়ে, দেড় বছরেরও বেশি সময় পরে আজ, মঙ্গলবার সারা পশ্চিমবঙ্গে খুলল স্কুল। খুলছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়-সহ সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানও।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর আশ্বাস, পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য আগে, তাই স্কুলে হাজিরার ব্যাপারে জোরাজুরি করা হবে না। শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, সংক্রমণের আশঙ্কায় বহু অভিভাবক ছেলেমেয়েদের স্কুলে না-ও পাঠাতে পারেন। এই অবস্থায় স্কুল খোলা নিয়ে উৎসাহ যতটা, উৎকণ্ঠা তার থেকে কম কিছু নয়। সেই জন্যই অনলাইন-পাঠ চালিয়ে যাওয়াটা জরুরি বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের অভিমত। আবার কঠোর সত্য হল, রাজ্যের অধিকাংশ স্কুলে একসঙ্গে অফলাইন ও অনলাইন দুই পদ্ধতিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকাঠামোই নেই। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, “একই সঙ্গে অনলাইন ও অফলাইন চালানোর সুযোগ কিছু বেসরকারি স্কুল এবং শহরাঞ্চলের কিছু সরকারি স্কুলে থাকলেও বেশির ভাগ স্কুলেই নেই। সে-ক্ষেত্রে পঠনপাঠনে অগ্রগতির প্রশ্নে স্কুলে উপস্থিত পড়ুয়াদের সঙ্গে অনুপস্থিতদের ফারাক একটা থেকেই যাবে। যারা আসবে না, তাদের অনলাইন ক্লাস নিতে হবে— এমন কোনও নির্দেশিকাও শিক্ষা দফতর থেকে এখনও পর্যন্ত আসেনি।”

সর্বোপরি কোভিড বিধি যথাযথ ভাবে মেনে চলার মতো আর্থিক সংস্থান সব স্কুলের রয়েছে কি না, সেই বিষয়ে শিক্ষকদের একাংশের সংশয় আছে। তাঁদের প্রশ্ন, যে-ভাবে নিয়মিত স্যানিটাইজ়েশন বা জীবাণুনাশের কথা বলা হচ্ছে, শৌচালয় পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হচ্ছে, তার জন্য পর্যান্ত টাকা ক’টি স্কুলের তহবিলে আছে? প্রধান শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, পড়ুয়াদের জন্য অ্যাক্টিভিটি টাস্কের ফোটোকপি থেকে শুরু করে সব কাজ চলে স্কুলের কম্পোজিট ফান্ডের টাকায়। নানা খাতে খরচ করতে করতে অনেক স্কুলেই সেই তহবিল তলানিতে পৌঁছেছে। কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “রোজ স্কুল জীবাণুমুক্ত করার টাকা অনেক স্কুলেরই কম্পোজিট ফান্ডে নেই। বহু স্কুলে সাফাইকর্মী থেকে স্কুলের শিক্ষাকর্মীর পদ ফাঁকা। এই অবস্থায় নিয়মিত জীবাণুনাশ বা রোজ স্কুলের গেটে পড়ুয়াদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার কাজ হবে কী ভাবে?” কোভিড বিধি মেনে ক্লাস করার জন্য প্রতিটি শ্রেণির সেকশন ভেঙে পৃথক পৃথক শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। তার জন্য পর্যাপ্ত ঘর এবং যথেষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকা রাজ্যের ক’টি স্কুলে আছে, সেটাও খুব বড় প্রশ্ন।

পরিকাঠামোর উন্নয়নে শিক্ষা দফতর যে-সব স্কুলের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছিল, সেই ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনও টাকা পৌঁছয়নি বলে শিক্ষক সংগঠনগুলির একাংশের অভিযোগ। অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু স্কুল এখনও পরিকাঠামো উন্নয়নের টাকা পায়নি। ফলে স্কুলভবন মেরামতির কাজ শুরুই হয়নি। সেই সব স্কুলে কী ভাবে ক্লাস শুরু হবে, প্রশ্ন থাকছেই।” নামখানা ব্লকের হরিপুর গদাধর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রনীল প্রধান বলেন, “পরপর দুই ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের স্কুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। পরিকাঠামোর উন্নয়নে শিক্ষা দফতর ৬৬,৪৩৮ টাকা মঞ্জুর করেছিল। এখনও তা মেলেনি। তা ছাড়া এটা পর্যাপ্ত অর্থও নয়। এমন ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলবাড়িতে কী ভাবে পড়ুয়াদের বসাব, তা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।” ইন্দ্রনীলবাবু জানান, তাঁদের স্কুলের পুরনো বাড়ির অবস্থা খুব খারাপ। অথচ সেখানেই নবম থেকে দ্বাদশের ক্লাস হয়। সম্প্রতি স্কুলের ওই অংশে আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়ে দু’টি কেউটে সাপের দেখা মিলেছিল।

হাজারো প্রশ্ন আর প্রবল দুশ্চিন্তার মধ্যেই অবশ্য স্কুল খোলার তোড়জোড় চলছে সারা রাজ্যে। শিক্ষা দফতরের সাম্প্রতিক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্কুলের গেটে তিন জনকে অবশ্যই মোতায়েন করতে হবে। পড়ুয়ারা মাস্ক পরে এসেছে কি না, জীবাণুনাশের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেগুলো দেখার পাশাপাশি মাপতে হবে পড়ুয়াদের শরীরের তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে এত দিন পরে ছেলেমেয়েরা স্কুলে ফিরছে। তাই তাদের পেন বা ফুল দিয়ে স্বাগত জানাতে হবে। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকেরা আজ বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে যাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

school Coronavirus in West Bengal Covid 19 corona
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE