সেই বাঘ। আলিপুরদুয়ারের সুরজিৎ দত্তের তোলা ছবি।
নেওড়া ভ্যালি, লালগড়ের পরে রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য এ বার বক্সার জঙ্গলে। আলিপুরদুয়ার জংশনের বাসিন্দা এক ঠিকাদার বন দফতরকে দিলেন বাঘের ছবি। দাবি করলেন, রাজাভাতখাওয়ার কাছ দিয়ে যাওয়ার সময়ে তিনি তো বটেই, তাঁর গাড়ির অন্য সব সদস্য, উল্টো দিকের গাড়ির লোকজনও দেখেছে বাঘবাবাজিকে। বন দফতর এই নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু ছবির সত্যতা নিয়ে এখনও সংশয় কাটেনি।
২০১৪ সালে বাঘসুমারি হয়েছিল বক্সায়। তখন ৩টে বাঘের অস্তিত্ব জানা গিয়েছিল বলে বন দফতরের দাবি। গত বছর ফের বাঘসুমারি হয়। কিন্তু তার কোনও রিপোর্ট এখনও জানা যায়নি। এর মধ্যে অসম থেকে হেলিকপ্টারে চাপিয়ে বাঘ এনে বক্সা ব্যাঘ্রপ্রকল্পের জঙ্গলে ছাড়া হবে বলেও ঠিক হয়। অনেকেরই দাবি, এর ফলে বন দফতর কার্যত মেনে নিল যে এই জঙ্গলে বাঘ নেই।
এর মধ্যেই এই বাঘা কাণ্ড!
আলিপুরদুয়ারের সুরজিৎ দত্তের ক্যামেরায় ধরা ছবিই এখন বন দফতরের হাতে। সুরজিতের দাবি, গত মঙ্গলবার রাতে আটিয়াবাড়ি চা বাগান থেকে আলিপুরদুয়ার ফেরার পথে রাজভাতখাওয়া রেল গেট এবং ডিমা সেতুর মাঝখানে তিনি ছবিটি তুলেছেন। রাত তখন সাড়ে এগারোটা। একটি ভাড়া গাড়ির সামনের আসনে বসেছিলেন তিনি। জঙ্গল থেকে বাঘ বের হতে দেখেই পকেট থেকে মোবাইল বের করে ছবি তোলেন।
বনকর্তারা শনিবার ডেকে পাঠান সুরজিৎকে। যেখানে বাঘের ছবি তোলা হয়েছে বলে দাবি, সেখানে তাঁকে নিয়েও যাওয়া হয়। সুরজিতের দাবি, ভাড়া গাড়ির অন্য যাত্রীরাও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে রাস্তা পার হতে দেখেছেন। তাঁরাও মোবাইলে ছবি তুলেছেন। বন দফতর এ বার সুরজিতের সহযাত্রী এবং ভাড়া গাড়ির চালকের খোঁজ চালাচ্ছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপ ক্ষেত্র অধিকর্তা কল্যাণ রাই বলেন, ‘‘আমরা সুরজিৎবাবুকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ঘটনার সত্যতা যাচাই করছি।’’
কতটা মিল পেয়েছে বন দফতর? বনকর্মীদের দাবি, ছবিতে রাস্তার ধারে রুক্ষ মাটিতে বাঘটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। বর্তমানে সেখানে সবুজ ঝোপ। রাস্তার উপর সাদা রং দিয়ে সীমানা চিহ্নিতকারী দাগ আছে ছবিতে। বাস্তবে সেই দাগের অধিকাংশই মুছে গিয়েছে। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বাঘের পায়ের ছাপ সেখানে পাননি বনকর্মীরা।
তা হলে? বন আধিকারিকেরা বলছেন, প্রয়োজনে সুরজিতের মোবাইল সেটটি পরীক্ষা করা হবে। যদিও তাঁরা বাঘ থাকার সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, যেখানে বাঘটি দেখা গিয়েছে বলে সুরজিতের দাবি, তার খুব কাছে ভুটান সীমান্ত। পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা সেই এলাকায় পাহারাও কম। ভবিষ্যতে বাঘ আনা হলে তাদের খাদ্যের যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য সম্প্রতি প্রচুর হরিণ ছাড়া হয়েছে বক্সায়। সেই টানে পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে বাঘ বক্সায় চলে এল কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সুরজিৎ অবশ্য এখনও বলছেন, ‘‘প্রথমে বাঘ দেখে বিশ্বাসই করতে পারিনি আমরা।’’ কিন্তু বাঘই যে দেখেছেন, সেই দাবিতে অনড় তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy