যেন এই দিনটার অপেক্ষাতেই ছিলেন। কাশ্মীরে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত সেনা জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের নদিয়ার তেহট্টের পাথরঘাটার বাড়িতে বুধবার আলো ফোটার পরেই পৌঁছয় ভারতীয় সেনার পাকিস্তানে জঙ্গি শিবির গুঁড়িয়ে দেওয়ার খবর। ঝন্টুর দাদা, ভারতীয় সেনার সুবেদার রফিকুল শেখ বলেন, “সেনার প্রতি ধৈর্য রাখতে বলেছিলাম। বদলা নেওয়া হল।” তবে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর এই প্রত্যাঘাতের আবহে পাকিস্তান রেঞ্জার্সের হাতে বন্দি হুগলির রিষড়ার বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউয়ের মুক্তির কী হবে, তা নিয়ে চিন্তায় তাঁর স্ত্রী।
পহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ পর্যটক খুন হওয়ার দু’দিন পরেই, গত ২৪ এপ্রিল কাশ্মীরের উধমপুরে তল্লাশি অভিযানে জঙ্গিদের গুলিতে মারা যান ৬ প্যারাশুট রেজিমেন্ট স্পেশাল ফোর্সের হাবিলদার ঝন্টু। পরদিন, তাঁর স্ত্রী শাহনাজ পারভিন দুই নাবালক ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাঁদের আগরার বাসস্থান থেকে নদিয়ায় ফেরেন। চলে আসেন রফিকুলও। ২৬ এপ্রিল ঝন্টুর কফিনবন্দি দেহ গ্রামে ফেরে। গান স্যালুটের পরে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
জঙ্গি-নিধনের খবর পেয়ে ঝন্টুর বাবা সবুর আলি শেখ এ দিন বলেন, “আমি খুশি। তবে ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না!” রফিকুল কাশ্মীরেই কর্মরত, ঝন্টুর মৃত্যুর পরে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সেনা জওয়ানের ছুটি বাতিল করে তাঁদের দ্রুত কর্মস্থলে ফিরতে বলা হয়েছে। তাঁর কাছে এখনও তেমন নির্দেশ আসেনি জানিয়ে রফিকুল বলেন, “আমার ব্যাগ তৈরি। বাহিনী ডাকলেই কর্মস্থলে পৌঁছে যাব।”
পহেলগাম হামলার রাতেই (২২ এপ্রিল) পূর্ণমের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল তাঁর ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনীর। পরদিন দুপুরে ভুল করে পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে সে দেশের রেঞ্জার্সের হাতে বন্দি হন ওই জওয়ান। গত ২৮ এপ্রিল আট বছরের ছেলে এবং অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে হিমাচলের কাংড়ায় বিএসএফের সদর দফতর এবং পঞ্জাবের পঠানকোটের ফিরোজপুরে স্বামীর কর্মস্থলে গিয়ে তাঁকে দ্রুত দেশে ফেরানোর ব্যাপারে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কর্তাদের আর্জি জানিয়েছিলেন রজনী। এ দিন তিনি বলেন, “এখন যা অবস্থা, এই পরিস্থিতিতে ওঁকে ছাড়ানোর কী হবে? বিএসএফের কর্তাদের সঙ্গে সোমবার শেষ কথা হয়েছে। ওঁরা আরও দু’-এক দিন ধৈর্য ধরতে বলেছিলেন। এখন কী হবে বুঝতে পারছি না!”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)