Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফের বিস্ফোরণ ব্রাহ্মণবাড়ে, প্রশ্নের মুখে পুলিশ

বিস্ফোরণ স্থলেই ফের বিস্ফোরণ, তা-ও আবার বামপন্থী বিশিষ্টজনদের সামনে! বৃহস্পতিবার দুপুরে পিংলার ব্রাহ্মণবাড় গ্রামে ভস্মীভূত বেআইনি বাজি কারখানা চত্বরে পরপর তিন বার বোমা ফাটার শব্দ পাওয়া যায়। দেখা যায় ধিকিধিকি আগুন। বিস্ফোরণের তীব্রতা তেমন না থাকলেও, ঘটনাস্থলে রাজনৈতিক উপস্থিতির দরুন ফের চড়েছে উত্তেজনার পারদ। গত ৬ মে রাতে ব্রাহ্মণবাড়ে বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যুর পরে অভিযোগ উঠেছে, শাসক তৃণমূলের প্রশ্রয়েই ওখানে বেআইনি বাজি-বোমার কারবার চলত। তাই চুপ ছিল পুলিশ। ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্তভার সিআইডিকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পিংলায় বিস্ফোরণে নিহত শুভেন্দু ভক্তার মা চন্দনাদেবীর সঙ্গে কথা বলছেন ভারতী মুৎসুদ্দি। বৃহস্পতিবার রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।  (ইনসেটে) বিস্ফোরণস্থলে জ্বলছে আগুন। ছবি: এবিপি আনন্দের সৌজন্যে।

পিংলায় বিস্ফোরণে নিহত শুভেন্দু ভক্তার মা চন্দনাদেবীর সঙ্গে কথা বলছেন ভারতী মুৎসুদ্দি। বৃহস্পতিবার রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি। (ইনসেটে) বিস্ফোরণস্থলে জ্বলছে আগুন। ছবি: এবিপি আনন্দের সৌজন্যে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

বিস্ফোরণ স্থলেই ফের বিস্ফোরণ, তা-ও আবার বামপন্থী বিশিষ্টজনদের সামনে!

বৃহস্পতিবার দুপুরে পিংলার ব্রাহ্মণবাড় গ্রামে ভস্মীভূত বেআইনি বাজি কারখানা চত্বরে পরপর তিন বার বোমা ফাটার শব্দ পাওয়া যায়। দেখা যায় ধিকিধিকি আগুন। বিস্ফোরণের তীব্রতা তেমন না থাকলেও, ঘটনাস্থলে রাজনৈতিক উপস্থিতির দরুন ফের চড়েছে উত্তেজনার পারদ।

গত ৬ মে রাতে ব্রাহ্মণবাড়ে বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যুর পরে অভিযোগ উঠেছে, শাসক তৃণমূলের প্রশ্রয়েই ওখানে বেআইনি বাজি-বোমার কারবার চলত। তাই চুপ ছিল পুলিশ। ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্তভার সিআইডিকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প বসেছে। বিস্ফোরণস্থল ঘিরেও রাখা হয়েছে। তা-ও ফের বিস্ফোরণ কেন? পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের জবাব, “ঘেরা এলাকায় তুবড়ি বা পটকার মধ্যে বারুদ হয়তো থেকে গিয়েছিল। প্রচণ্ড গরমে সেটাই ফেটে গিয়েছে।”

কিন্তু এ ধরনের বিস্ফোরণস্থল তো দাহ্যবস্তুমুক্ত করাই নিয়ম?

দু’ধরনের জবাব মিলেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা দফতরের কাছ থেকে। এক গোয়েন্দা-কর্তার দাবি, দমকল বাহিনীকে গোটা এলাকা জল ছড়িয়ে ভেজানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাশের পুকুরে পানা ও পাঁক থাকায় জল পেতে অসুবিধা হচ্ছিল। সম্ভবত সে কারণেই দু-একটি দাহ্য পদার্থ থেকে গিয়েছে।

আবার সিআইডি-র এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের পরে আমরা পরীক্ষা করার মতো নমুনা না রেখে হাতে পাওয়া সব আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) নষ্ট করে দেওয়ায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) নানা প্রশ্ন তুলেছিল। পিংলাতেও এনআইএ তদন্ত চেয়ে মামলা হয়েছে। তাই বিস্ফোরণস্থল পুরো পরিষ্কার করা হয়নি।’’

সে ক্ষেত্রে বিপদের ঝুঁকি নেই? সিআইডি-র দাবি, ঘটনাস্থলে উচ্চশক্তির কোনও বিস্ফোরক নেই। এ দিনের বিস্ফোরণও বড় কিছু নয়।

ভারতী মুৎসুদ্দি, চন্দন সেন, কিন্নর রায়, সমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বামপন্থী বিশিষ্টজনদের ১৩ জনের দল এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ যখন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনই বাজি কারখানার ধ্বংসস্তূপে পরপর তিন বার বোমা ফাটার শব্দ হয়। আতঙ্কে শুরু হয় ছুটোছুটি।

পরে ভারতীদেবী বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা বারবার বলেছেন, এখানে বাজির আড়ালে বোমা তৈরি হত। সব জেনেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। ঘটনাস্থলে এসেও একই ছবি দেখলাম।’’ বিশিষ্টজনেরা পিংলা থানার সামনে অবস্থানেও বসেন। তাঁদের অভিযোগ, বিস্ফোরণের কারণ জানতে চাইলে গ্রামে মোতায়েন পুলিশকর্মীরা তাঁদের বলেছেন, ‘‘বিয়েবাড়ির বাজি ফাটছে।’’

৬ মে-র বিস্ফোরণের পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রীও বিয়েবাড়ির বাজি বানানোর তত্ত্বই দিয়েছিলেন। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার কটাক্ষ, ‘‘পিংলায় কি আবার বিয়ের আসর বসেছে!’’ এলাকার বিধায়ক প্রবোধ সিংহ ঘটনার জন্য আঙুল তুলেছেন ‘পুলিশের গাফিলতি’র দিকে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘পিংলায় ১৪৪ ধারা জারি করে বিরোধীদের আটকানো হচ্ছে। অথচ, পুলিশ বিস্ফোরণ ঠেকাতে পারছে না।’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ফের এনআইএ-তদন্তের দাবি তুলেছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের অবশ্য বক্তব্য, “পিংলা নিয়ে অপপ্রচার করছে বিরোধীরা।”

ফের বোমা ফাটার আওয়াজ পেয়ে আতঙ্কিত ব্রাহ্মণবাড়। স্থানীয় বাসিন্দা শম্ভুনাথ টুডু, শিখা মুর্মু, পুষ্প টুডুরা এক কথায় বলছেন, ‘‘এ রকম চললে রাতে আর ঘুমোতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE