Advertisement
E-Paper

পাহাড়ে বৃষ্টির জেরে ফের ধস, তিস্তায় হলুদ সঙ্কেত

রবিবার রাত থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় এবং সিকিম জুড়ে ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ায় অবস্থার অবনতি শুরু হয়েছে। উত্তর সিকিমের কয়েকটি এলাকায় নতুন করে ধস নেমেছে। পাশাপাশি সমতলে তিস্তার অসংরক্ষিত অঞ্চলে জল ঢোকা শুরু করেছে। রবিবার থেকেই তিস্তা নদী করোনেশন সেতু এলাকা থেকে দোমহনি এলাকা পর্যন্ত হলুদ সংকেত জারি করেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০২:৫২
বৃষ্টি ভেজা শহরে। (বাঁ দিকে) জলপাইগুড়ি ও (ডান দিকে) শিলিগুড়িতে সোমবার রাতে সন্দীপ পাল ও বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

বৃষ্টি ভেজা শহরে। (বাঁ দিকে) জলপাইগুড়ি ও (ডান দিকে) শিলিগুড়িতে সোমবার রাতে সন্দীপ পাল ও বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

রবিবার রাত থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় এবং সিকিম জুড়ে ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ায় অবস্থার অবনতি শুরু হয়েছে। উত্তর সিকিমের কয়েকটি এলাকায় নতুন করে ধস নেমেছে। পাশাপাশি সমতলে তিস্তার অসংরক্ষিত অঞ্চলে জল ঢোকা শুরু করেছে। রবিবার থেকেই তিস্তা নদী করোনেশন সেতু এলাকা থেকে দোমহনি এলাকা পর্যন্ত হলুদ সংকেত জারি করেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতেও বৃষ্টি চলছে। এ দিন সন্ধ্যার পরও তুমুল বৃষ্টি হয়েছে দুই শহরে। শিলিগুড়িতে এ দিনই বর্ষা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মহকুমা প্রশাসন বৈঠক করেছে।

তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় জল ঢুকে প্লাবিত হয় মালবাজার ব্লকের চাঁপাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। মাস্টারপাড়া, সেনপাড়া, বাসুসুবার এলাকায় জল ঢুকে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। জলবন্দি হয়ে পড়েছেন ১৮০টি পরিবার। রবিবার গভীর রাত থেকেই এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করে বলে বাসিন্দারা জানান। চাপাডাঙা এলাকার তিস্তার ৮ নম্বর স্পারটিও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বাসিন্দারা দাবি করেন। সোমবারেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নির্বাহী বাস্তুকার জয়প্রকাশ পাণ্ডে। তবে এ দিন জলবন্দী পরিবারদের জন্যে কোনও ত্রাণ না পাঠানোয় প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।

গত বছরেও একমাসেরও বেশি সময় ধরে চাঁপাডাঙা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছিল। একটি প্রাথমিক স্কুলও ভেঙে যায়। চাপাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের ভারপ্রাপ্ত প্রধান রমণীকান্ত রায় জানান এ বার তিস্তায় জল বাড়তেই গ্রামে জল ঢুকেছে। স্থায়ী বাঁধ দ্রুত তৈরি না হলে সমস্যা আরও বাড়বে। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সুপারিনটেন্ডন্ট বাস্তুকার শুভঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এলাকাটিতে একটি মাটির বাঁধ রয়েছে। তবে নদী বাঁ দিকে চেপে আসায় সমস্যা হচ্ছে। স্থায়ী সমাধানের জন্যে দ্রুতই পাথর এবং তারজালি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।‘‘

উল্লেখ্য গত রবিবার দিনভর সিকিমে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় তিস্তায় জল বেড়ে যায়। সেই বাড়তি জলই তিস্তার নিম্ন অববাহিকায় থাকা বাসুসুবা এলাকাতে এসে গ্রামে ঢুকে পড়েছে বলেই সেচকর্তারা মনে করছেন। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান গৌতম দত্ত অবশ্য আতঙ্কিত হবার মত কিছু নেই বলে জানিয়েছেন, তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত দিকেই নজর রাখা হয়েছে।‘‘

ভারি বৃষ্টির জেরে ধসের আতঙ্ক বাড়ছে উত্তর সিকিমে মঙ্গন,চুংথাম, লাচুং এলাকায়। ওই সমস্ত এলাকায় ৩১-এ নম্বর জাতীয় সড়কের নানা জায়গায় ফের নতুন করে ধস নেমেছে। রবিবার রাত থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত মঙ্গন থেকে গ্যাংটকে ফেরার পথে চুংথামে যাতায়াতের রাস্তায় লাংচেখোলায় নতুন করে ধস নেমেছে। বৃষ্টির জেরে ধস সরানোর কাজও ব্যাহত হয়ে পড়ায় সমস্যা বেড়েছে। পরিস্থিতির জেরে রবিবার থেকেই ওই এলাকায় নতুন করে পর্যটকদের আসার অনুমতি দিচ্ছে না সিকিমের পুলিশ প্রশাসন। আটকে পড়া পর্যকদের সাহায্য করছে সেনা।

এ দিন ধস বিধ্বস্ত এলাকায় অনেক পযর্টকই চার-পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছচ্ছেন। সেখান থেকে বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার গাড়ি করে তাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার রাতেই চুংথাম এবং লাচুংয়ের রাস্তায় তুংসুঙে বড় ধরনের ধস পড়েছে। লাচুং যাওয়ার পথে আটকে পড়েন অন্তত ৪০০ পর্যটক। তিন দিন ধরে তাঁদের অনেকেই আটকে রয়েছেন। চুংথামের কাছে একটি গুরুদ্বারে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন।

বর্ষায় দার্জিলিঙের ধস-সহ রাস্তাঘাটের মোকাবিলায় প্রশাসন তৈরি বলে জানিয়ে দেওয়া হল। সোমবার দার্জিলিঙের অতিরিক্ত জেলাশাসক রচনা ভকত জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন দফতরগুলিকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সমস্ত দফতরকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দ্রুত কন্ট্রোল রুম খুলে দেওয়া হবে। দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও কালিম্পং মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও দিনভর কুয়াশায় ঢেকে থাকছে এলাকা।

রাতভর ঝড়বৃষ্টিতে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হল কোচবিহারে। রবিবার রাতে কয়েক দফায় বৃষ্টি ও ঝড় হয়। তাতে কোচবিহার ১ নম্বর ব্লক, শীতলখুচির বেশ কিছু এলাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাসিন্দারা। ভুট্টা, ধান ও পাটের ক্ষতি হয়েছে। সোমবারও বহু এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে ছিল। বেশ কিছু খুটি উপড়ে পড়েছে। তার ছিঁড়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির কোচবিহারের আধিকারিক বিষ্ণু দত্ত জানান, পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিন কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের পুটিমারী ফুলেশ্বরী, চান্দামারি এলাকা পরিদর্শনে যান বিডিও স্বপন মাইতি এবং পূর্ত দফতরের কর্মাধক্ষ্য খোকন মিয়াঁ। বিডিও জানান, এলাকায় ১০৬ টি বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। বেশ কিছু জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

Sikkim landslide tourist Darjeeling rain storm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy