Advertisement
E-Paper

রোজ ভ্যালির বিক্ষোভ ঘিরে বিতর্ক, দুর্ভোগ

সারদা-সহ বিভিন্ন লগ্নিসংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই এবং ইডি-র তদন্তকে ‘কেন্দ্রীয় চক্রান্ত’-র তকমা দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। কার্যত একই অভিযোগ তুলে এ বার রাস্তায় নামলেন রোজ ভ্যালির কর্মী-এজেন্টরা, যার মধ্যে দু’পক্ষে আঁতাঁতের ছায়া দেখছে বিরেধীরা। আর রবিবার দুপুরে ধর্মতলায় ওই বিক্ষোভ সমাবেশের জেরে যানজটের শিকার হয়ে ভোগান্তি পুইয়েছে আমজনতা। রোজ ভ্যালির কর্মীদের অভিযোগ, তিন মাস ধরে অধিকাংশের বেতন বন্ধ। এজেন্টরাও টাকা পাচ্ছেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৮
রোজ ভ্যালির সমর্থকদের জমায়েত। রবিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

রোজ ভ্যালির সমর্থকদের জমায়েত। রবিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

সারদা-সহ বিভিন্ন লগ্নিসংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই এবং ইডি-র তদন্তকে ‘কেন্দ্রীয় চক্রান্ত’-র তকমা দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। কার্যত একই অভিযোগ তুলে এ বার রাস্তায় নামলেন রোজ ভ্যালির কর্মী-এজেন্টরা, যার মধ্যে দু’পক্ষে আঁতাঁতের ছায়া দেখছে বিরেধীরা। আর রবিবার দুপুরে ধর্মতলায় ওই বিক্ষোভ সমাবেশের জেরে যানজটের শিকার হয়ে ভোগান্তি পুইয়েছে আমজনতা।

রোজ ভ্যালির কর্মীদের অভিযোগ, তিন মাস ধরে অধিকাংশের বেতন বন্ধ। এজেন্টরাও টাকা পাচ্ছেন না। এরই সুরাহার দাবিতে এ দিনের সমাবেশ। দাবি ওঠে, কোর্টের নির্দেশে রোজ ভ্যালির ‘সিল’ করা সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে হবে। পাশাপাশি সংস্থার বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তি, বিশেষত জমি-জমা বিক্রির অনুমতি দিতে হবে, যার মাধ্যমে আমানতকারীদের বকে‌য়া ফেরানো যাবে।

এবং ছুটির দিনে যানজট বাধিয়ে সাধারণের দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সেই সমাবেশে জনসমাগমের বহর দেখে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের অভিযোগ, এর নেপথ্যে রয়েছে শাসকদল তৃণমূলই, যে কারণে পুলিশি ছাড়পত্র মিলতেও অসুবিধে হয়নি। ‘‘এটা আসলে ভোটের আগে তৃণমূলের রোজ ভ্যালি শাখার সভা।’’— কটাক্ষ করছেন বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা গোড়া থেকে বলেছি, সিপিএম হল চিটফান্ডের পিতা, তৃণমূল মাতা। তৃণমূল মাতৃস্নেহে রোজ ভ্যালিকে লালন-পালন করেছে।’’ সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘আড়ালে থেকে কারা এ সব করাচ্ছে, মানুষ কি আর বুঝতে পারছে না? ফুলের গন্ধে চতুর্দিক ভরে উঠছে।’’ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন, সিবিআই-বিরোধিতায় সরাসরি রাস্তায় নামলে এ বার দলের স্বীকৃতি বাতিল হতে পারে। তাই রাজনৈতিক রং ছাড়া এঁদের নামিয়েছেন।’’ মান্নানের পর্যবেক্ষণ, পাড়ায় পাড়ায় খোঁজ নিলে দেখা যাবে, বিক্ষোভকারীরা তৃণমূলেরই কর্মী।

শাসকদল কী বলে?

তৃণমূল নেতৃত্ব স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগ ফুৎকারে ওড়াচ্ছেন। ‘পাগলের প্রলাপ! কোনও দিন বাংলায় ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন সফল হবে না জেনেই ওঁরা এ সব বলছেন।’’— মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অরূপ বিশ্বাস। এ দিনের সমাবেশের উদ্যোক্তা ‘জয়েন্ট ফোরাম অফ রোজ ভ্যালি এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ও তৃণমূল-সংশ্রবের কথা মানতে চাননি। ‘‘বরং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চক্রান্তের মধ্যে পড়েই আমাদের এই অবস্থা।’’— অভিযোগ তাঁর।

এ দিনের সমাবেশে অনেকে প্ল্যাকার্ড এনেছিলেন। তাতে লেখা ছিল: ‘সিবিআই, ইডি— এরা কারা?’ মিছিলে ‘রাজনৈতিক চক্রান্তের’ বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে। আসানসোল থেকে এসেছিলেন রোজ ভ্যালির এজেন্ট পিন্টু সাহা। বললেন, ‘‘আমরা রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। ইডি-সিবিআইয়ের ঝামেলায় জীবন শেষ হয়ে গেল।’’ হুগলির মধুমিতা চক্রবর্তীর আক্ষেপ, ‘‘আমাদের কোম্পানি শেষ দিন পর্যন্ত কারও টাকা বাকি রাখেনি। ষড়যন্ত্রে আমাদের সামাজিক সম্মান নষ্ট হতে বসেছে।’’

ইডি সূত্রের অবশ্য দাবি, রোজ ভ্যালি কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু নিজেই আমানতকারীদের টাকা বাকি রাখার কথা স্বীকার করেছেন। প্রসঙ্গত, গৌতম ইতিমধ্যে ইডি’র হাতে গ্রেফতার, আপাতত অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্ত। সংস্থার অন্য কর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

অমিতবাবুর দাবি, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলা, এমনকী অসম-ত্রিপুরা-ওড়িশা থেকেও প্রতিনিধিরা এ দিন ধর্মতলার সমাবেশে এসেছিলেন। অদূর ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে আন্দোলনের পরিকল্পনা চলছে। এ দিন আগরতলাতেও রোজ ভ্যালির এজেন্টরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁদের নেতা মহম্মদ নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘‘সিল করা অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দিলে আমানতকারীরা টাকা ফেরত পাবেন। আমরাও নিজেদের সংসার চালাতে পারব।’’

Rose Valley Rani Rashmoni Avenue Goutam kundu chit fund Traffic jam Samik bhattacharya Trinamool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy