Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
mahalaya

‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’র নতুন রূপে এ বার অজানা অতীত

একদা আকাশবাণীর সংগ্রহশালার দেখভালের সঙ্গে জড়িত অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক সৌম্যেন বসু এই অনুষ্ঠানের বেশ কয়েকটি বিস্মৃত সংস্করণ খুঁজে বের করেছিলেন।

নতুনের ছোঁয়ায় ভরে উঠল অলৌকিক ভোর।

নতুনের ছোঁয়ায় ভরে উঠল অলৌকিক ভোর। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:২১
Share: Save:

আগাম ঘোষণা ছিল, মহালয়ার সকালে ১৯৬২-র রেকর্ডিং শোনাবে আকাশবাণী। নতুনের ছোঁয়ায় ভরে উঠল অলৌকিক ভোর। কিছু পুরনো প্রিয় গান শোনা গেল না। তবে নতুনের ভাঁড়ার উপচে পড়ল। রবিবার নতুন করে মহালয়ার সকালটিকে আবিষ্কার করলেন অনেকেই।

অনুষ্ঠান শেষে আকাশবাণীর ফেসবুক পেজে অনেকের দাবি, পারলে ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’র আরও পুরনো রূপ শোনান! আজকের অনুষ্ঠানটিতে বেশ কয়েকটি গান বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, পঙ্কজ মল্লিক, বাণী কুমারদের অমর সৃষ্টির অচেনা সম্পদের হদিস দিয়েছে বলে পুলকিত বিদগ্ধ থেকে সাধারণ স্মৃতিকাতর বাঙালি। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের ‘জাগো দুর্গা’-র বদলে ‘মোহ আবরণ খোল’ গানটি আগে অনেকেই শোনেননি। মানবেন্দ্রের ‘তব অচিন্ত্য রূপ চরিত’ বা শিপ্রা বসুর ‘ওগো আমার আগমনি’-ও এ দিন শোনা যায়নি। আবার শেষ গান ‘শান্তি দিলে ভরি’ উৎপলা সেনের বদলে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে বেজেছে। ‘চারুপূর্ণা পূর্ণ শশী’ গানটিতে শ্যামল মিত্রের সঙ্গে আরতি মুখোপাধ্যায় নেই। রয়েছেন অসীমা ভট্টাচার্য। শচীন গুপ্তের কণ্ঠে ‘আকাশ যে মধুময় ছন্দে’-ও এ সকালের একটি প্রাপ্তি।

বিমলভূষণ নেই এ দিনের শিল্পী-তালিকায়। কিন্তু অম্বুজ মল্লিক নামটি শুনে অনেকেই বুঝেছেন তিনি পঙ্কজ মল্লিকের ভাই। ‘নমো চণ্ডী’ তাঁরই গাওয়া। এক সত্তরোর্ধ্ব প্রবীণ শ্রোতা সকালেই ফেসবুকে লিখেছেন, “এ সকালে কিছু চেনা গানে আবেগের বাঁধ মানে না। কিন্তু নতুন গানে সকালটিকে নতুন ভাবে পেলাম।” সেই সঙ্গে বীরেন ভদ্রকেও অন্য ভাবে পেয়েছে বাঙালি। তাঁর কণ্ঠে ‘জাগো মহিষাসুরমর্দিনী অমল কিরণে তুমি জাগো’ দিয়ে শুরু ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’-র এই সংস্করণটি। ভাষ্যের অংশ কিছুটা বেশি। তরুণতর কণ্ঠের বীরেন্দ্র ভদ্রের উপস্থাপনা কয়েকটি মুহূর্তে তাঁকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে।

একদা আকাশবাণীর সংগ্রহশালার দেখভালের সঙ্গে জড়িত অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক সৌম্যেন বসু এই অনুষ্ঠানের বেশ কয়েকটি বিস্মৃত সংস্করণ খুঁজে বের করেছিলেন। তখনই সিদ্ধান্ত হয় ঘুরেফিরে বিভিন্ন বছরের রেকর্ডিং বাজবে। গত কয়েক বছর ১৯৬৬ সালের রেকর্ডিং বাজাচ্ছিল আকাশবাণী। তাতে প্রথমে শ্রোতাদের একাংশের ধাক্কা লাগে। এ যাত্রা আগাম জানিয়েই ১৯৬২-র সংকলনটি বাজানো হয়। এ বারের পরিবর্তনটি নিয়ে অভিযোগ সামান্যই। বাঙালির ‘বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভোর’ নিয়ে গবেষণাধর্মী একটি গ্রন্থপ্রণেতা মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলছেন, “৯০ বছরের পুরনো অনুষ্ঠানটির স্রষ্টারা তৃপ্ত না হয়ে বছর, বছর আরও ভালর চেষ্টা করতেন। বার বার নতুন রেকর্ডিং বা সম্পাদনা হয়েছে। প্রতিটি সংস্করণের ইতিহাসমূল্য রয়েছে।” তাঁর কথায়, “১৯৫৯ নাগাদ একটি লেখায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ আক্ষেপ করেন, এ অনুষ্ঠানে হরিমতি, আভাবতী, পারুল চৌধুরীর মতো কত শিল্পীর কণ্ঠ হারিয়ে গেল। অনুষ্ঠানটি বছর, বছর সংরক্ষণের কথাও তিনি বলেন।” জানা যাচ্ছে, ১৯৬০ থেকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার হলেও পাশাপাশি রেকর্ডিং-ও শুরু হয়। কিন্তু ১৯৬২-র চিন-ভারত যুদ্ধের পরে বাজেটের টানাটানিতে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ পুরনো রেকর্ডিং বাজাতে থাকেন। যদিও ১৯৬৬ এবং ১৯৭২-এ নতুন রেকর্ডিং হয়েছিল। নবীনতম রেকর্ডিংটিরও আবার সম্পাদনা হয়েছে। পরে ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’-র একটি সম্পাদিত সংকলন বহুদিনই ক্যাসেট, সিডি হয়ে বাজারে বিকিয়েছে। আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ চাইছেন, অপরিচিত সংকলন বা রেকর্ডিংও শ্রোতাদের শোনাতে।

আকাশবাণী সূত্রের খবর, সংগ্রহশালায় রাখা ‘কিউশিট’ অনুযায়ী এ বারের সংকলনটি ২১/০৯/১৯৬২ তারিখের রেকর্ডিং, ২৮/০৯/১৯৬২-এ সম্প্রচারিত। তবে আকাশবাণীর প্রাক্তন কর্তা সৌম্যেন বসু বলছেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। এমন হতে পারে ১৯৬২-তে সম্প্রচারিত অংশের সঙ্গে অন্য বছরের কোনও গান বা ভাষ্য মিশেছে। সব মিলিয়ে এই অনুষ্ঠানের আরও অচেনা সম্পদও থাকতে পারে।” ১৯৭৬-এ বীরেন ভদ্র, পঙ্কজ মল্লিকদের সরিয়ে উত্তম কুমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠানটিও গ্রহণ করেনি আমবাঙালি। কিন্তু ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’-র স্রষ্টাদের নিরীক্ষার রূপ দেখে আজও রোমাঞ্চিত অনেকে। সব পরিবর্তনে মোটেই জড়তা নেই বাঙালির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mahalaya All India Radio Durga Puja 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE