রূপশ্রী প্রকল্পে ভুয়ো তথ্য দেওয়ার অভিযোগ।
কারও শখ স্কুটি, কেউ চায় দামি মোবাইল, কারও ইচ্ছা বেড়ানোর। সেই ইচ্ছাপূরণেই রাতারাতি ভোল পাল্টাচ্ছেন রূপশ্রী প্রকল্পের আবেদনকারীদের একাংশ। সংসার করেও কেউ নিজেকে বলছেন স্বামীবিচ্ছিন্না, কেউ আবার ইঞ্জিনিয়ার বাবাকে বানিয়ে দিচ্ছেন দিনমজুর!
দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিয়ের আয়োজনের জন্যই চলতি আর্থিক বছর থেকে রূপশ্রী প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য। সেই প্রকল্পে জমা পড়া আবেদন খতিয়ে দেখতে গিয়েই ঘাটাল মহকুমার প্রশাসনিক কর্তাদের চক্ষু ছানাবড়া। যেমন, ঘাটাল শহরের এক যুবতীর বাবা পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার। অথচ তিনি আবেদনে লিখেছেন, ‘‘বাবা দিনমজুর। পারিবারিক আয় দেড় লক্ষ টাকা।’’ দাসপুর-১ ব্লকের আর এক বিবাহিত তরুণী আবার দিব্যি সংসার করেও দাবি করছেন, ‘‘সম্প্রতি আমার ডিভোর্স হয়েছে। ফের বিয়ে করতে চাই।’’ টাকা পেতে নকল বিয়ের কার্ডও জমা দিচ্ছেন কেউ কেউ।
ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “আবেদন যাচাই করতে গিয়েই অনিয়ম সামনে আসছে। গরমিল পেলে আবেদন বাতিল করা হচ্ছে।” টাকা পেতে যাঁরা ভুয়ো তথ্য দিয়েছেন, তাঁদের ডেকে কথাও বলেছেন মহকুমাশাসক। তিনি বলেন, ‘‘কথা বলে জেনেছি, কেউ স্কুটি বা দামি মোবাইল কেনার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। কারও ওই টাকায় বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল।”
নিয়মমতো বার্ষিক আয় দেড় লক্ষ টাকার বেশি নয়, এমন পরিবারের বিবাহযোগ্য মেয়েরাই রূপশ্রী-র ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পাবেন। প্রথম বার বিয়ের ক্ষেত্রেই এই প্রকল্পে টাকা মিলবে। পাত্র-পাত্রীর বয়সের প্রমাণপত্র, বিয়ের কার্ড জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে। জানাতে হবে পরিবারের বার্ষিক আয়। তবে প্রাথমিক ভাবে তার সমর্থনে নথি জমার প্রয়োজন নেই। প্রশাসন আবেদন খতিয়ে দেখার সময় তা যাচাই করবে।
ভুয়ো তথ্য দেওয়ার এই প্রবণতা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন না সমাজতত্ত্বের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রশান্তকুমার রায়। তাঁর মতে, ‘‘পরিশ্রম না করে টাকা পাওয়ার সুযোগ থাকলে এক শ্রেণির লোক এমনটা করবেই। তাই আবেদন যাচাইয়ের প্রক্রিয়া ন্যায্য হওয়া জরুরি।’’ তবে প্রভাবশালীদের চাপে ভুয়ো তথ্য দিয়েও কেউ টাকা পেতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রশান্তবাবুর।
বিরোধীদেরও আশঙ্কা, শাসকদলের চাপে ভুয়ো আবেদন পাশ হয়ে যেতে পারে। বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রতন দত্ত বলেন, ‘‘গরিব মানুষের কথা বললেও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্দেশ্য আসলে দলের লোককে টাকা পাইয়ে দেওয়া। রূপশ্রীও ব্যতিক্রম নয়।’’ তবে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির বক্তব্য, ‘‘আবেদন ভুয়ো হলে প্রশাসন খারিজ করে দেবে।
আমাদের নেতার সইয়ে তো আর টাকা মিলবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy