Advertisement
১৪ জুন ২০২৪
মানসদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা, ফুঁসছে বিরোধীরা

শাসক-পুলিশ যোগসাজশে হেনস্থার নালিশ

মিথ্যা মামলায় বিরোধীদের ফাঁসানোর অভিযোগ ছিলই। তৃণমূল কর্মী খুনে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, তাঁর ভাই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া ও সবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমল পণ্ডার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরে শাসক দলের বিরুদ্ধে সুর চড়াল বিরোধীরা। সোমবার দিনভর পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা রাজনীতির বৃত্ত এই আলোচনাতেই সরগরম।

বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০০:৫৩
Share: Save:

মিথ্যা মামলায় বিরোধীদের ফাঁসানোর অভিযোগ ছিলই। তৃণমূল কর্মী খুনে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, তাঁর ভাই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া ও সবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমল পণ্ডার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরে শাসক দলের বিরুদ্ধে সুর চড়াল বিরোধীরা। সোমবার দিনভর পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা রাজনীতির বৃত্ত এই আলোচনাতেই সরগরম।

মানসবাবুদের বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারির পিছনে তৃণমূল আর পুলিশের যোগসাজশ দেখছে বিরোধী দলগুলি। কারণ, সবংয়ের দুবরাজপুরে তৃণমূল কর্মী জয়দেব জানা খুনের মামলায় মানসবাবু-সহ তিন কংগ্রেস নেতার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন পুলিশের তরফেই মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে জানানো হয়েছি। গত শনিবার করা সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারক। এ নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে তাঁর সঙ্গে মানসবাবুর পুরনো বিরোধ কারও অজানা নয়। তাই বিরোধী-শিবিরের নিশানায় ফের ভারতীদেবীর পুলিশই। কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী হেমা চৌবের বক্তব্য, “মানস ভুঁইয়া এই জেলার লড়াকু নেতা। পুলিশ দিয়ে তাঁকে হেনস্থা করলে কংগ্রেস ভেঙে পড়বে এই আশায় ভোটের
আগেই চক্রান্ত করেছিল তৃণমূল। সরকার গঠনের পরে সেই চক্রান্ত কার্যকর করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসক দল।”

একই সুরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “শাসক দলের নির্দেশে সাজানো মামলায় বিরোধী নেতা-কর্মীদের পুলিশ হেনস্থার চেষ্টা করছে। এটা শুধু মানস ভুঁইয়ার ব্যাপার নয়। আমাদের জেলাতে এমন অজস্র উদাহরণ রয়েছে।’’ সোমবারই একটি মামলায় হাজিরা দিতে মেদিনীপুর আদালতে গিয়েছিলেন তরুণবাবু। বিজেপির জেলা সভাপতি ধীমান কোলের সুরও চড়া। তাঁর কথায়, “মানস ভুঁইয়া কি খুন করতে গিয়েছিলেন? এটা বিশ্বাসযোগ্য? এটা পুলিশ সুপারও জানেন, মুখ্যমন্ত্রীও জানেন, আমিও জানি, সাধারণ মানুষও জানেন।’’ ধীমানবাবুর দাবি, বাম-আমলে অনেক অত্যাচার হয়েছে। তবে এত মিথ্যা মামলা হয়নি।

ভোট-পর্বে মানসবাবুদের নাম একাধিক মামলায় জড়িয়েছে। কখনও জয়দেবের স্ত্রী মানসী অভিযোগ করেছেন, মানসবাবুদের পরামর্শে সশস্ত্র লোকজন খুনের মামলা তোলার হুমকি দিচ্ছে, কখনও আবার প্রচার মিছিল থেকে তৃণমূল সমর্থক মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে মানসবাবুর নামে। এ সব দৃষ্টান্ত সামনে রেখে কংগ্রেসের অভিযোগ,

একাংশ পুলিশ অফিসার পক্ষপাতদুষ্ট। তাই একের পর এক মিথ্যা মামলা রুজু হচ্ছে।

এ দিন চেষ্টা করেও জেলা পুলিশ সুপার ভারতীদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি, এসএমএস-রও জবাব দেননি। জেলা পুলিশের এক কর্তার অবশ্য সাফাই, “অভিযোগ হলে মামলা রুজু হয়। তদন্ত শুরু হয়। পুলিশ কী ভাবে তদন্ত করবে, সেটা পুলিশের ব্যাপার। চক্রান্তের অভিযোগ ভিত্তিহীন।” সবংয়ের তৃণমূল নেতা, জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতিরও বক্তব্য, “এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে অনেক আগেই পুলিশের আবেদন জানানো উচিত ছিল। মানস ভুঁইয়াদের উচিত আত্মসমর্পণ করা।”

সবংয়ে ভোট ছিল গত ১১ এপ্রিল। তার আগে, ৮ এপ্রিল রাতে দুবরাজপুরে খুন হন তৃণমূল কর্মী জয়দেব জানা। খুনের মামলা রুজু হয় মানসবাবু-সহ ২৩ জন কংগ্রেস এবং বাম নেতা-কর্মীর নামে। নিহত জয়দেবের স্ত্রী মানসীদেবী পুলিশে অভিযোগে জানান, মানসবাবুরাই লোকজন দিয়ে খুন করিয়েছেন তাঁর স্বামীকে। এই মামলায় ১১ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতেরা এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন। পুলিশ চাইলে মানসবাবুদেরও আগেই গ্রেফতার করতে পারত। কারণ, গত ১৪ জুন মানসবাবুদের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে মেদিনীপুর জেলা আদালত। জয়দেবের স্ত্রী মানসী এ দিনও দাবি করেন, “ঘটনার দিন দুবরাজপুরেই ছিলেন মানস ভুঁইয়া, বিকাশ ভুঁইয়ারা। দুবরাজপুর বাজারের সকলে তাঁদের দেখেছিল। পুলিশের উচিত অবিলম্বে ওঁদের গ্রেফতার করা।”

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরে এ বার কী করবেন মানসবাবুরা?

মানসবাবুদের আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্যের জবাব, ‘‘বিচার ব্যবস্থায় আস্থা রয়েছে। আইনি পথেই লড়ব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police ruling party
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE