Advertisement
E-Paper

ক্ষতিপূরণের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে উত্তাল দেগঙ্গা

আমপানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ক্ষতিপূরণের টাকা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন, এই অভিযোগে বিক্ষোভ, অবরোধ চলছেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২০ ০২:০৮
পথের দাবি: বারাসত-টাকি রোড অবরোধ করে চলছে বিক্ষোভ। (ইনসেটে) বিডিও অফিসের সামনে সন্ধ্যায় ফের প্রতিবাদ। সোমবার, দেগঙ্গায়। নিজস্ব চিত্র 

পথের দাবি: বারাসত-টাকি রোড অবরোধ করে চলছে বিক্ষোভ। (ইনসেটে) বিডিও অফিসের সামনে সন্ধ্যায় ফের প্রতিবাদ। সোমবার, দেগঙ্গায়। নিজস্ব চিত্র 

আমপানে ঘর ভাঙার পরে ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি তাঁরা। তাই ক্ষোভ বাড়ছিলই। এ বার এলাকার ওই বাসিন্দাদের দাবি, যাঁরা টাকা পেয়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা চাই। এ নিয়ে সোমবার সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠল উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই পথে নামলেন হাজার দুয়েক মানুষ। প্রশাসনিক দফতর ঘেরাও ও ভাঙচুরের পাশাপাশি বিডিও-কে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। দফায় দফায় চলে রাস্তা অবরোধ। গোলমাল চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

আমপানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ক্ষতিপূরণের টাকা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন, এই অভিযোগে বিক্ষোভ, অবরোধ চলছেই। এ দিন সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে দেগঙ্গায়। সকাল ১০টায় চিত্ত বসু মার্কেটের সামনে ভিড় জমান শয়ে শয়ে মানুষ। ১১টা নাগাদ হাজার দুয়েক মানুষ হাতে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই মিছিল করে পৌঁছন বিডিও-র দফতরে। সেখানে মোতায়েন থাকা পুলিশবাহিনী ওই দফতরের মূল ফটক বন্ধ করে দেয়। ভিতরে ঢুকতে না-পেরে আন্দোলনকারীরা ফিরে এসে বারাসত-টাকি রোড অবরোধ করেন।

বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে আড়াই ঘণ্টা বাদে কোনও মতে অবরোধ তোলা গেলেও বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ ফের বিডিও অফিসে এসে ঘেরাও করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ছোড়া ইটে ওই দফতরের জানলার কাচ ভাঙে বলে অভিযোগ। অবস্থা বেগতিক দেখে বিডিও বেরিয়ে এসে কথা বলেন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। সকলের কাছ থেকে ফের আবেদনপত্র জমা নেওয়া হবে বলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

তবে কিছু ক্ষণ পরেই ফের উত্তেজনা ছড়ায়। বিকেল ৫টা নাগাদ বিডিও-র কাছে আবেদনপত্র জমা দিচ্ছিলেন বিক্ষোভকারীরা। দাবি ছিল, যাঁরা টাকা পেয়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা দিতে হবে। ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল। তা পেরিয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা দাবি তোলেন, উপস্থিত ৫০০ জন মহিলার জন্য বিডিও অফিসের শৌচাগার খুলে দিতে হবে। প্রশাসন সে কথা না-শোনায় ক্ষিপ্ত লোকজন ফের সন্ধ্যা ৭টা থেকে বারাসত-টাকি রোড অবরোধ করেন। সারা রাত অবরোধের জন্য বাসনকোসন নিয়ে এসে শুরু হয় রান্নার প্রস্তুতিও। এর মধ্যেই কিছু বহিরাগত এসে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ গিয়ে লাঠি চালায় বলেও অভিযোগ।

অবরোধে অংশ নেওয়া, দেগঙ্গার চাঁপাতলা পঞ্চায়েতের মামুরাবাদের জ়রিনা বিবি বলেন, ‘‘ঘর ভেঙেছে। ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিপূরণ পেতে পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে বারবার গিয়েও লাভ হয়নি।’’ ওই এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গির মণ্ডল বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্য কিছু না করায় প্রধানের কাছে যাই। তিনি বললেন, তোমাদের গ্ৰামে কারও কোনও ক্ষতি হয়নি। কেন ক্ষতিপূরণ চাইছ?’’ রেশমা বিবি নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত কিছু না করায় বিডিও দফতরে আবেদন করি। এক মাস হতে চলল, কোনও খবরই নেই।’’ দেগঙ্গা-২ পঞ্চায়েতের তেলিয়ার বাসিন্দা কুতুবউদ্দিন মণ্ডলের কথায়, ‘‘ঘর ভেঙেছে। তার উপরে টানা বৃষ্টি। প্রধানের কাছে পলিথিন চাইতে গেলেও তাড়িয়ে দিচ্ছেন।’’

বিডিও সুব্রত মল্লিক বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা হবে। যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত না-হওয়া সত্ত্বেও টাকা পেয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে।’’

Scam Amphan Protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy