E-Paper

বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই খরচ মামলার, তির রাজভবনকে

গত ১৭ অক্টোবর রাজ্যপালের সচিবালয়ের একটি চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের নির্দেশের কথা বলেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এই টাকা চাওয়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৬
রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস।

রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রাজ্যপাল একক ভাবে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগের পরে মাস কয়েক ধরে রাজ্য-রাজ্যপাল সম্পর্ক চরম তিক্ত। বিরোধ সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। রাজ্যের সঙ্গে সেই মামলার খরচ জোগাতে রাজ্যপাল তথা আচার্য রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকেই টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করল প্রাক্তন উপাচার্যদের একটি মঞ্চ।

অভিযোগ, গত ১৭ অক্টোবর রাজ্যপালের সচিবালয়ের একটি চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের নির্দেশের কথা বলেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এই টাকা চাওয়া হয়। সেই চিঠিটি তুলে ধরেই প্রাক্তন উপাচার্যদের একটি মঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ এডুকেশনিস্টস ফোরাম প্রশ্ন তুলেছে, কোন আইনি অধিকারের বলে রাজ্যপাল তথা আচার্য এমন ফরমান জারি করেছেন। এই নির্দেশ একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অবমাননা এবং বেআইনি ও অনৈতিক বলে ওই মঞ্চ সরব হয়েছে। ছাত্র, শিক্ষক শিবিরের আরও অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তবে রবিবার রাতে রাজভবন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ নিয়ে কেউ প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি।

১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যদের উদ্দেশে রাজ্যপালের বিশেষ সচিবের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, আচার্যের নির্দেশ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ায় আইনজীবীদের খরচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ভাগাভাগি করে নিতে হবে এবং তাদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিক লেনদেনের ভার নিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু রবিবার বলেন, ‘‘এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।” ইতিমধ্যে কলকাতা, যাদবপুর-সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে তহবিল গড়ার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এডুকেশনিস্টস ফোরামের তরফে ওমপ্রকাশ মিশ্র, রঞ্জন চক্রবর্তী, আশুতোষ ঘোষদের প্রশ্ন, “রাজ্যের অনুদানপুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা কী ভাবে রাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা লড়তে ব্যবহার করা হবে? এই অর্থের সংস্থান কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স কমিটি বা সিন্ডিকেট বা এগ্‌জ়িকিউটিভ কাউন্সিলের অনুমোদন পেয়েছে? ২০১৭ সালের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষা দফতরের অনুমতিও কি নেওয়া হয়েছে?” রাজ্যের জনগণের টাকায় রাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা লড়া প্রসঙ্গে ব্রাত্যও বলেন, “রাজ্যপাল তো মাছের তেলে মাছ ভাজতে চাইছেন।”

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে রবিবার বলেন, “প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই রাজ্যপাল তথা আচার্য মামলা লড়ছেন। তাঁকে সুরক্ষা দিতে আমরা সাহায্য করছি। কোনও অস্বাভাবিকত্ব নেই!” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তবর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ বলেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তো আগেও বিভিন্ন মামলায় আইনি খরচ বহন করেছে। এমনকি লাভ হবে না এমন মামলাতেও খরচ করেছে। আচার্যের থেকে নির্দেশ এলে আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করব।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভাঁড়ে মা ভবানী দশায় এই মামলার খরচের ঝক্কিতে অনেক শিক্ষকই মর্মাহত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায় যন্ত্রপাতি কেনাকাটা আটকে দেওয়া হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা নেই বলে বিভাগগুলির কেনাকাটায় ৪০% নিষেধাজ্ঞা রয়েছে—অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার একতরফা ভাবে কোনও আলোচনা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দিচ্ছেন আচার্যের হয়ে মামলা লড়ার জন্য! সে টাকা পাঠানো হচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাকাউন্টে। এ তো আর্থিক দুর্নীতির শামিল।”

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) সাধারণ সম্পাদক সনাতন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের খরচার বিলে সই করার কেউ নেই। শিক্ষক, গবেষকদের সমূহ ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু এই বিষয়ে এত তৎপরতা দেখে অবাক লাগছে!” ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়ও এই খরচের সঙ্গে ছাত্র স্বার্থের যোগ নেই বলে ক্ষোভ জানান।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

C V Ananda Bose

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy