E-Paper

যুক্তভারতের পীড়ন নিয়েই সরব অমর্ত্য

ক্ষিতিমোহনের যুক্তসাধনার সূত্রে অমর্ত্য কথিত ‘যুক্তভারত’ শব্দটি এ দিন বারে বারেই উঠে এসেছে।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৫ ০৬:০৪
অমর্ত্য সেন।

অমর্ত্য সেন।

এ দেশের বিভিন্ন প্রদেশে বাঙালির হেনস্থা, রুটিরুজির সঙ্কট তৈরি হওয়া নিছকই বাঙালির সমস্যা বলে দেখছেন না অমর্ত্য সেন। শুক্রবার অমর্ত্য সেন রিসার্চ সেন্টারে তিনি বলেন, “যে কোনও জায়গা থেকে মানুষ আসুক, সবার সম্মান পাওয়ার অধিকার আছে। ভারতের এই দিকটি ভুললে চলবে না! তিনি পঞ্জাবি, তামিল যা-ই হোন— ভারতীয়ত্বকে সম্মান করতেই হবে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে ভিন্-রাজ্যে বাধা দিলে, অসম্মান করলে বড় করে প্রতিবাদ করতে হবে।” তাঁর দাদামশায় ক্ষিতিমোহন সেনের ‘ভারতে হিন্দু-মুসলমানের যুক্ত সাধনা’ বইটি এ দিন প্রকাশ করেছে প্রতীচী (ইন্ডিয়া) ট্রাস্ট। বইটির ভূমিকা লিখেছেন অমর্ত্য। আজকের ভারতে বাঙালির সঙ্কটও তাঁর কাছে কার্যত ভারতের যুক্তসাধনার সঙ্কট বলেই দেখা দিয়েছে।

ক্ষিতিমোহনের যুক্তসাধনার সূত্রে অমর্ত্য কথিত ‘যুক্তভারত’ শব্দটি এ দিন বারে বারেই উঠে এসেছে। কখনও বাঙালি, কখনও এ দেশের মুসলিমের দুর্গতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে এই যুক্তভারতের সঙ্কট বা ভারতের যুক্তসাধনা ব্যাহত হওয়ার কথাই বলেন প্রবীণ অধ্যাপক। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, “বহু লোকের ডকুমেন্টস (নথি) নেই। অনেকে ভোট দিতে পারে না। একটু ভাল করার অজুহাত দেখিয়ে অনেকের ক্ষতি করলে বড় ভুল থেকে যাবে। একটা ভুল শুধরোতে আরও সাতটা ভুল মানা যায় না। গরিবের অধিকারে হাত দিয়ে কোনও ব্যবস্থাকে সুব্যবস্থা করা যায় না।”

প্রতীচী ট্রাস্টের আয়োজনে ‘ভারতের যুবসমাজ ও তাদের প্রাপ‍্য সামাজিক সুযোগ’ শীর্ষক আলাপচারিতায় এ দিন নোবেলজয়ী চিন্তাবিদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন শহর, মফস্সল, জেলার স্কুল-কলেজের একঝাঁক শিক্ষার্থী। এ দেশের সমাজজীবনে জাত, ধর্মের বৈষম‍্য, সবার জন্য শিক্ষাজীবনের সুযোগ, কম বয়সে বিয়ের ফাঁদে পড়া বা নিরুপায় হয়ে ভিটেমাটি ছাড়ার মতো নানা দিক আলোচনায় এসেছে। আর সব কিছুর মধ্যে যুক্তভারতের মর্মবাণীটি বুনে দিয়েছেন অমর্ত্য। নবীনদের প্রশ্ন করার ছলে দারাশিকোর ফার্সিতে কঠোপনিষদ তর্জমা বা তাজমহলের স্থাপত্যে হিন্দু, মুসলিমের অবদানের কথা শুনিয়েছেন।

হিন্দু-মুসলিমে একসঙ্গে কাজ করা, জ্ঞান আহরণ থেকে সামাজিক সংগঠন তৈরি ভারতের ঐতিহ্য বলেই মনে করান অমর্ত্য। আক্ষেপের সুরেই তিনি বলেন, “হিন্দুদের সৌভাগ্য চাই, মুসলিমদের না হলেও চলবে— এমনটা ভাবতে লোকে আগে লজ্জা পেত। কিন্তু আজ এটা ভাবতে লজ্জা হয় না, তার জন‍্য আমাদের লজ্জা পাওয়ার কারণ আছে।” নিরুপায় হয়ে ঘরছাড়া হওয়ার সমস্যার দিকটি স্বীকার করেও ‘মাইগ্রেশন’-এর মধ্যে নিহিত এক ধরনের প্রগতির সূত্রের কথাও বলেন অমর্ত্য। এ প্রসঙ্গে প্রাচীন বৌদ্ধ গ্রন্থ প্রজ্ঞাপারমিতা সূত্র বা গণিতবিদ ব্রহ্মগুপ্তের লেখা নানা ভাষায় ছড়িয়ে পড়ার কথাও বলেন। সব আলোচনাই এতটা গম্ভীর চালে হয়নি অবশ্য। অমর্ত্য সরস ভঙ্গিতে বলেন, “বাংলা বললে বাংলাদেশে পাঠাবে বলছে। তা আমার বাড়ি তো ঢাকায়! ভেবেছিলাম আজ ফরাসিতে বলব। কিন্তু ফরাসি ভাষাটা আমি জানি না!”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

migrant labour

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy