বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের বাজেট বক্তৃতার সময় টিভির সামনে ঠায় বসেছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মী সোমনাথ মণ্ডল। বক্তৃতা শেষ হতে বিরক্তির স্বরে বললেন, ‘‘বেতন কমিশন নিয়ে একটি কথাও নেই!’’
শুধু সোমনাথবাবুই নন, বাজেট ভাষণে বেতন কমিশনের কোনও কথা না থাকায় কমবেশি হতাশ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের একটি বড় অংশই। ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর রাজ্য সরকার অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারকে চেয়ারম্যান করে তৈরি করেছিল ষষ্ঠ বেতন কমিশন। কথা ছিল, ২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বরের মধ্যে কমিশন তার রিপোর্ট দাখিল করবে। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় এর মধ্যেই কমিশনের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। সরকারি কর্মীদের আশা ছিল, আগামী অর্থবর্ষে ওই রিপোর্ট হাতে পেয়ে তা কার্যকর করবে রাজ্য সরকার। বাজেটেও তার উল্লেখ রাখা হবে। এক সরকারি কর্মীর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার এর মধ্যেই সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করেছে। এতে কেন্দ্রের কর্মীদের মোট বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশের মতো। ফলে, একই পদমর্যাদার রাজ্য সরকারের কর্মীর বেতন কেন্দ্রীয় কর্মীর প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ভেবেছিলাম, এ বার বাজেটে এ নিয়ে কোনও আশার কথা শোনাবেন অর্থমন্ত্রী।’’
বাজেটে বেতন কমিশন নিয়ে কোনও কথা না বলার জন্য অর্থমন্ত্রীকে বিঁধতে ছাড়েননি বিরোধীরাও। রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তও বলেছেন, ‘‘বাম আমলে বছরে দু’টো ডিএ দেওয়া হতো। এখন তা-ও দেওয়া হচ্ছে না। বাজেট ভাষণেও বেতন কমিশন নিয়ে একটি কথাও বললেন না অর্থমন্ত্রী।’’ ক্ষোভ গোপন করেননি তৃণমূলের কর্মী সংগঠনের নেতারাও। তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভাষণে বেতন কমিশন নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থাকলে ভাল হতো।’’ অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশের কথায়, ‘‘এখনই বেতন বা়ড়ানোর অবস্থা নেই। ডিএ দেওয়ার পরিস্থিতিই যেখানে নেই সেখানে বেতন বাড়বে কী ভাবে?’’ মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এ দিন বলেন, ‘‘১০ শতাংশ ডিএ দিয়েছি। এর বেশি ক্ষমতা নেই।’’ কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
তবে, বাজেটে বাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ঋণের সংস্থান আছে। সরকারি কর্মীদের একাংশের আশা, এই বাড়তি ঋণ বেতন কমিশনের সুপারিশ চালু করার পথ খোলা রাখছে। শেষ পর্যন্ত হয়তো ২০১৭ সালেই বেতন বৃদ্ধি হতে পারে কর্মীদের। শুধু বেতন কমিশনই নয়, বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রীর সওয়া ১৩ লক্ষ কর্মসংস্থানের দাবি নিয়ে সমালোচনা করতে ছাড়েননি অসীমবাবু। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘শ্রম মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দেড় লক্ষের মতো কর্মসংস্থান হচ্ছে। সেখানে একটি রাজ্যেই কী করে ১৩ লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থানের কথা বলা হচ্ছে!’’ কোন কোন ক্ষেত্রে এত কর্মসংস্থান হবে, তার কোনও উল্লেখও বাজেট ভাষণে রাখা হয়নি নেই বলে অসীমবাবু অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘শিল্পে বিনিয়োগের উপরেও মোট উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান নির্ভর করে। কিন্তু বাজেটে রাজ্যে কতগুলি নতুন শিল্পপ্রকল্প বাস্তবায়িত হল, তা বলা হচ্ছে না। একই ভাবে পরিকল্পনা ব্যয় চার গুণ বৃদ্ধি হচ্ছে বলে দেখানো হলেও, এর মধ্যে কেন্দ্রের অংশ কতটা আর রাজ্যের কতটা—তা-ও আলাদা করে দেখানো হয়নি।’’ এই বাজেটকে ‘দিশাহীন’, ‘ভাঁওতাসর্বস্ব’ ও ‘দেউলিয়া’ বলে কটাক্ষ করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। আর বিজেপি বিধায়ক তথা দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্রোক্তি, ‘‘এটা মোদীর টাকায় দিদির বাজেট!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy