Advertisement
E-Paper

বকেয়া ডিএ দিক কেন্দ্র, চিঠি অমিতের

টাকা নেই। তাই রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দিতে তাঁরা অপারগ বলে মঙ্গলবার বিধানসভায় জানিয়ে দিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সাধারণ নিয়মে কেন্দ্রীয় সরকার বছর দু’বার ডিএ দেয়। দেশের বেশির ভাগ রাজ্যও সেই পথে চলে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বছরে এক বার করে ডিএ দিচ্ছে। ফলে প্রতি বছর বকেয়া ডিএ-র পরিমাণ বাড়তে বাড়তে এখন ৪৯% ছুঁয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৯

টাকা নেই। তাই রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দিতে তাঁরা অপারগ বলে মঙ্গলবার বিধানসভায় জানিয়ে দিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।

সাধারণ নিয়মে কেন্দ্রীয় সরকার বছর দু’বার ডিএ দেয়। দেশের বেশির ভাগ রাজ্যও সেই পথে চলে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বছরে এক বার করে ডিএ দিচ্ছে। ফলে প্রতি বছর বকেয়া ডিএ-র পরিমাণ বাড়তে বাড়তে এখন ৪৯% ছুঁয়েছে। অমিতবাবুর যুক্তি, রাজ্যের ৮ লক্ষ ৯০ হাজার সরকারি কর্মীকে বকেয়া ডিএ মেটাতে গেলে প্রায় ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। বাম আমলের আর্থিক ঋণের বোঝা সরকারের ঘাড়ে চেপে বসায় এত টাকা খরচ করার ক্ষমতা রাজ্যের নেই।

কী চায় রাজ্য? অধিবেশনের বাইরে অর্থমন্ত্রীর দাবি, “কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে বলেছি, তোমরা ১০০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করেছ। তোমাদেরই বকেয়ার টাকা দিতে হবে। রাজ্য দিতে পারবে না। ডিএ ঘোষণার আগে তোমরা রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করোনি। এর সম্পূর্ণ দায় তোমাদেরই নিতে হবে।” একই দাবি সপ্তম অর্থ কমিশনের কাছেও করেছেন বলে জানান অমিতবাবু।

অর্থমন্ত্রীর এই দাবি নিয়ে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ বিস্মিত। তাঁদের প্রশ্ন, রাজ্য কর্মীদের ডিএ-র দায়িত্ব কেন্দ্র নেবে কেন? তা হলে সব রাজ্য থেকে এই দাবি উঠবে। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে সরকারি কর্মীদের নানা সংগঠন। তাদের প্রশ্ন, ফূর্তি করতে দেদার খরচ করছে যে সরকার, কর্মীদের প্রাপ্য বকেয়া দিতে তারা অপারগ কেন? ডিএ না পেয়ে সরকারি কর্মী পরিবারের প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান কর্মীনেতারা।

তাঁর সরকারের কর্মীদের কত ডিএ বকেয়া হয়েছে, সভায় প্রথমে তা সঠিক জানাতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। এ দিন বিধানসভায় প্রথমার্ধে প্রশ্নোত্তর পর্বে অর্থমন্ত্রী জানান, রাজ্যে এখন সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা ৮ লক্ষ ৯০ হাজারের মতো। তাঁদের বকেয়া ডিএ-এর পরিমাণ ৩৯%। এই বক্তব্যের পরে সভার বাইরে থাকা সরকারি কর্মীদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়। অনেকেরই বিস্মিত প্রশ্ন ছিল, তা হলে কী ১০% ডিএ উবে গেল? অর্থমন্ত্রীর দেওয়া এই তথ্য নিয়ে সাংবাদিকরাও তাঁকে প্রশ্ন করেন। এর পর সভার দ্বিতীয়ার্ধে অমিতবাবু নিজের ভুল শুধরে নিয়ে বলেন ৪৯% ডিএ বকেয়া রয়েছে। এ জন্য দুঃখপ্রকাশও করেন তিনি।

বকেয়া ডিএ না-দিতে পারার কারণ হিসাবে যে যুক্তি দেন অর্থমন্ত্রী, প্রশাসনের একাংশ ও কর্মী সংগঠনগুলি তা মানতে নারাজ। তাঁদের যুক্তি— গত তিন বছর ধরে দান-খয়রাতি এবং বেহিসেবি খরচের পরিমাণ বাড়িয়েই চলেছে রাজ্য। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প তো আছেই, সঙ্গে নানা ক্লাবকে অনুদান, চলচ্চিত্র উৎসব, রত্ন-ভূষণ প্রদানের মতো নানা কারণে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করেছে অমিত মিত্রর অর্থ দফতর। সদ্য শেষ হওয়া কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মহিলা পরিচালিত সেরা ছবিকে পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয়েছে ৫১ লক্ষ টাকা, যা ভূ-ভারতে কোথাও নেই। এ দিকে ডিএ না-দিতে পারায় আর্থিক সঙ্কটের কথা বলছেন অর্থমন্ত্রী। কর্মী ইউনিয়নগুলির বক্তব্য, কেন্দ্র, রাজ্য সব সরকারই কমবেশি ঘাটতিতে চলে। অন্য রাজ্য ডিএ দিতে পারলে পশ্চিমবঙ্গ পারে না কেন?

অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণা জানার পরে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোজ গুহ বলেন, “গত শুক্রবার বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে যৌথ কনভেনশন করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ডিএ-সহ আরও কিছু দাবিতে ১১ ডিসেম্বর থেকে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। কলকাতার নানা প্রান্তেও সভা হবে।”

ফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের নেতা সঙ্কেত চক্রবর্তী বলেন, “আগে এই সরকারই বলেছিল বকেয়া নেই। সব ক্লিয়ার করে দিয়েছে। এখন বলছে দেব না। তার মানে বকেয়া ছিল।” তাঁর কথায়, “ভারতের সব রাজ্যই নিজেদের ভাণ্ডার থেকে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দেয়। এই সরকার কেন্দ্রের দোহাই দিচ্ছে কেন? কর্মীরা এর জবাব দেবেন। আন্দোলন হবে।”

কর্মী সংগঠনের নেতারা এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তৃণমূল প্রভাবিত স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের নেতারা প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করার সাহস দেখাননি। সংগঠনের নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অর্থমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করি। বাম সরকারের আর্থিক বোঝার দায় বহন করতে গিয়ে বর্তমান সরকারকে জেরবার হতে হচ্ছে।” পার্থবাবু অবশ্য কর্মীদের ক্ষোভের কথাও মেনে নেন।

amit mitra owing da dearness allowance state news central government online state news finance minister west bengal state government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy