Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

ভোটে জিততে সাহায্য নয় কেন্দ্রের, তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে হবে দলকে, শাহের বার্তা শুভেন্দু-সুকান্তদের

দিনভর অনেক কর্মসূচি থাকলেও শাহ এবং নড্ডার যৌথ কলকাতা সফরের মূল কর্মসূচিই ছিল রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক। সেই বৈঠকে শাহের বার্তায় রাজ্য নেতাদের জন্য খুব একটা খুশির খবর মেলেনি বলেই জানা গিয়েছে।

অমিত শাহ ছাড়াও রাজ্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন জেপি নড্ডা।

অমিত শাহ ছাড়াও রাজ্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন জেপি নড্ডা। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৪০
Share: Save:

লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে কি কিছুটা হতাশ করে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ? কারণ, মঙ্গলবারের কলকাতা সফরের ফাঁকে বৈঠকে তিনি স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার বা কোনও তদন্তকারী সংস্থার উপরে নির্ভর করে নির্বাচনে লড়ার কথা ভাবলে চলবে না। রাজ্য নেতৃত্বকে নিজেদের জোরেই ভোট লড়তে হবে! তৃণমূলের মোকাবিলায় সংগঠন মজবুত করেই ভোটে নামতে হবে! কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পাশে আছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার নয়।

অনেকের মতে, শাহের এই বার্তা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছে হতাশাজনক। কারণ, দীর্ঘ দিন ধরেই তৃণমূলকে দুর্বল করতে কেন্দ্র ‘কড়া পদক্ষেপ’ করবে বলে আশা করছিলেন তাঁরা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ‘তারিখ’ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও সবুরে মেওয়া ফলেনি। বিজেপি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সেই বার্তাই আবার স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন শাহ। যার মর্মার্থ— সংগঠন শক্তপোক্ত করে তৃণমূলকে রাজনৈতিক ভাবে হারাতে হবে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
বড়বাজারের গুরুদ্বারে শাহ এবং নড্ডা।

বড়বাজারের গুরুদ্বারে শাহ এবং নড্ডা। —নিজস্ব চিত্র।

সোমবার মধ্যরাতে কলকাতায় আসেন শাহ। তাঁর সঙ্গেই আসেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। সকালে বড়বাজারের গুরুদ্বার এবং কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যান দু’জনে। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এর পরে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজ এবং বৈঠক চলে নিউ টাউনের হোটেলে। সেখানে মূলত ডাকা হয়েছিল রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক বিষয় যাঁরা দেখেন তাঁদের। সুকান্ত, শুভেন্দু ছাড়াও ছিলেন পাঁচ সাধারণ সম্পাদক। উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ধন্দ।

বৈঠকের আগে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যান নড্ডা ও শাহ।

বৈঠকের আগে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যান নড্ডা ও শাহ। ছবি: পিটিআই।

বর্তমানে কোনও সাংগঠনিক দায়িত্বে না থাকলেও ডাক পেয়েছিলেন দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এবং দিলীপ ঘোষ। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বৈঠকে কারা আসবেন, তা শাহ-নড্ডাই ঠিক করে দিয়েছিলেন। রাহুল এবং দিলীপকে ডাকার মধ্যে দিয়ে তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছে, দলের খারাপ সময়ে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেতাদেরও গুরুত্ব দেওয়া হবে লোকসভা নির্বাচনে। প্রসঙ্গত, রাহুল রাজ্য সভাপতি থাকার সময়ে ২০১৪ সালে বাংলা থেকে দু’টি আসনে জেতে বিজেপি। আর দিলীপের জমানায় ১৮টি আসন পায়। বিধানসভা নির্বাচনেও ৭৭ আসনে জয় এসেছিল দিলীপের সময়ে।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে উপস্থিত সকলেরই মতামত শুনেছেন শাহ ও নড্ডা। লোকসভা নির্বাচনে কী কী করা দরকার, তা নিয়ে সকলের পরামর্শও শুনতে চান তাঁরা। তবে এটাও স্পষ্ট করে দেন যে, শুধু পরামর্শ দিলেই হবে না। কাজ করে দেখাতে হবে সবাইকে। নেতারা কাজ না করলে কর্মীরা পথে নামবেন না বলেও বুঝিয়ে দেন শাহ। একই সুর ছিল নড্ডারও। অতীতে শাহ রাজ্য এসে বার বার বুথ স্তরের সংগঠন মজবুত করার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ‘নির্ভরতা’ কমিয়ে বুথে বুথে সংগঠন মজবুত করতে বলেছিলেন শাহ। দিল্লির নির্দেশে রাজ্যে ‘মেরা বুথ, সব সে মজবুত’ কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছিল। এ বারেও ‘বুথ সশক্তিকরণ’ কর্মসূচি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সে ‘কাজ’ কতটা হয়েছে, তার হিসাবও শাহ-নড্ডা মঙ্গলবারের বৈঠকে চেয়েছেন বলে খবর। রাজ্য নেতারা সে হিসাব দিয়েছেন। তবে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতার মতে, তাতে দুই শীর্ষনেতা খুব খুশি হননি। পরে দিল্লিতে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরেই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব তড়িঘড়ি বুধবারেই নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে বিধানসভা নির্বাচনের মতো কেন্দ্রীয় নেতারা লোকসভা ভোটেও বাংলায় বেশি করে সময় দেবেন বলে রাজ্য নেতাদের নিশ্চিন্ত করেছেন শাহ। বৈঠকে রাজ্য নেতারা জানুয়ারি থেকেই বাংলায় বড় বড় সমাবেশ করার আর্জি জানান। ওই সব সমাবেশে শাহ-নড্ডার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এলে বাংলায় কর্মীদের মনোবল বাড়বে বলে দাবি করেন তাঁরা। এ ব্যাপারে কোনও দিনক্ষণ না জানালেও নড্ডা বুঝিয়ে দেন, এমন পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও। আর শাহ বুঝিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্যই আসবেন। কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধে আসল লড়াইটা করতে হবে রাজ্য নেতাদেরই। তাঁদেরই উদ্যোগী হতে হবে, যাতে সংগঠন মজবুত হয়, বসে যাওয়া এবং বিক্ষুব্ধ কর্মীরা মাঠে নামেন। যে সব নেতা-কর্মীরা দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছেন, তাঁদের কী ভাবে কাজে ফেরানো যায়, তা দেখার জন্যও রাজ্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন নড্ডা।

মঙ্গলবারের বৈঠকে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত চার কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্য এবং আশা লাকড়াও ছিলেন। বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এই চার জনই যে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন, বৈঠকে তা-ও জানিয়ে দেন শাহ-নড্ডা। তবে বারে বারেই তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলার লড়াই রাজ্য বিজেপিরই! এখনই অবশ্য রাজ্যের জন্য কোনও নির্বাচন পরিচালনার কমিটি গঠন করা হয়নি। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতার কথা অনুযায়ী শাহ এমনও বলেন যে, তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে রাজনৈতিক ভাবেই। সেই রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। রাতারাতি কোনও বদল সম্ভব নয়। এমনটা আশা করাও ঠিক নয়!

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Amit Shah JP Nadda BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE