Advertisement
০১ মে ২০২৪
Dilip Ghosh

টানাপড়েনের মাঝেই বঙ্গ বিজেপির চার শীর্ষনেতাকে দিল্লিতে তলব অমিত শাহের

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায় ছাড়াও এ রাজ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা বর্তমানে কেন্দ্রীয় সম্পাদক পদে থাকা রাহুল সিংহকেও তলব করেছেন অমিত শাহ।

দিল্লিতে ডাক পড়ল দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায় ও রাহুল সিংহর।—ফাইল চিত্র

দিল্লিতে ডাক পড়ল দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায় ও রাহুল সিংহর।—ফাইল চিত্র

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২০:৪৬
Share: Save:

দলের রাজ্য শাখায় তোলপাড় চলছিল গত কয়েক দিন ধরে। বিচ্ছিন্ন কিছু মন্তব্যের আকারে উঠে এলেও আসলে সামগ্রিক ভাবে তৈরি হচ্ছিল পুরনো এবং নতুনদের দ্বন্দ্বের ছবিই। এই রকম এক সময়েই বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে ডেকে পাঠালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়-সহ রাজ্য বিজেপির চার নেতাকে নিয়ে বুধবার নয়াদিল্লিতে বৈঠকে বসছেন তিনি।

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি কোনও একটি রাজ্যের শীর্ষনেতাদের ডেকে আলাদা করে বৈঠকে বসছেন দিল্লিতে— এটা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বিজেপিতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এই ধরনের বৈঠক হয়েই থাকে। কিন্তু এ বারের বৈঠকটি অনেক দিন আগে থেকেই নির্ধারিত থাকার কোনও খবর বিজেপি সূত্রে মেলেনি। বরং অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ের নোটিসেই বঙ্গ বিজেপির শীর্ষনেতাদের দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায় ছাড়াও এ রাজ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা বর্তমানে কেন্দ্রীয় সম্পাদক পদে থাকা রাহুল সিংহকেও তলব করেছেন অমিত শাহ। পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনের পরিস্থিতি এবং দল পরিচালনার বিষয় নিয়েই অমিত শাহ কথা বলতে চান বলে মুরলীধর সেন লেন সূত্রে জানা গিয়েছে।

বাংলার বিজেপিতে পুরনো এবং নতুনদের দ্বন্দ্বের খবর অনেক দিন ধরেই শিরোনামে আসছে। দলে মুকুল রায়ের পথও শুরুতে খুব একটা মসৃণ ছিল না। পরে তিনি দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য হন এবং গত লোকসভা নির্বাচনে বড় দায়িত্ব পালন করেন ঠিকই, কিন্তু বিজেপির পুরনো নেতাদের অনেকের কাছেই মুকুল এখনও পূর্ণমাত্রায় গ্রহণযোগ্য নন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কখনও রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার, কখনও জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কখনও আবার মহিলা মোর্চার কোনও নেত্রী নানা বিরূপ মন্তব্য করেছেন শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে।

এই জয়প্রকাশ মজুমদার বা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়রা যে বিজেপির খুব পুরনো নেতা, তা-ও কিন্তু নয়। এঁরাও গত কয়েক বছরেই বিজেপিতে শামিল হয়েছেন। কেউ কংগ্রেসে ছিলেন, কেউ ছিলেন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ। কিন্তু রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়কে বিজেপিতে নেওয়ার প্রশ্ন ঘিরে যে বিতর্ক, তার এক মেরুতে এখন জয়প্রকাশ-জয়রা, অন্য মেরুতে শোভন-বৈশাখী। এবং ওই প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই গত এক সপ্তাহে বিজেপির অন্দরে টানাপড়েন তুঙ্গে ওঠে। পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতে শুরু করেন বিজেপি নেতা-নেত্রীরা। পূর্ব বর্ধমানের একটি জনসভায় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য আপত্তিকর পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুধু পুরনো আর নতুনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। একেবারে নতুনদের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত কম নতুনদের দ্বন্দ্বের অবকাশও যে তৈরি হয়েছে, তা-ও স্পষ্ট।

লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এ রাজ্যে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ঝোঁক বেড়েছে বিভিন্ন দলের কর্মীদের মধ্যেও। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের শীর্ষস্তরেই টানাপড়েন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে নীচের স্তরে পরিস্থিতি কোথায় গড়াতে পারে, তা আঁচ করা শক্ত নয়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ যথেষ্টই।

এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ চাইছিলেন যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হস্তক্ষেপ করুক দিল্লি। সেই কারণেই অমিত শাহ তলব করলেন বঙ্গ বিজেপির চার শীর্ষনেতাকে— এমন কোনও কথা বিজেপি সূত্রে জানানো হয়নি। কিন্তু দলেরই কয়েকজন নেতার মধ্যে প্রকাশ্য বাগ্‌যুদ্ধ যখন চরমে, ঠিক সেই সময়েই দিলীপ-মুকুল-সুব্রত-রাহুল দিল্লির তলব পাওয়ায় রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা বেড়েছে স্বাভাবিক কারণেই।

আরও পড়ুন: জলে কি নতুন বিপদ বৌবাজারে

সঙ্ঘের একাংশ মনে করছে, এ রাজ্যে বিজেপির অন্দরে যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে, তা অস্বাভাবিক নয়। দল হঠাৎ খুব দ্রুত বাড়তে শুরু করলে এই রকম পরিস্থিতি তৈরি হতেই পারে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে সঙ্ঘ নেতৃত্বও সন্দিহান বলে জানা গিয়েছে। চলতি মাসের গোড়ায় কলকাতাতেই ছিলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। তিনি দিলীপ ঘোষ এবং সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে আলাদা করে বৈঠক করেন সে সময়ে। সাংগঠনিক বিষয়ে দিলীপ-সুব্রতকে ভাগবত বেশ কিছু পরামর্শ দিয়ে যান বলে খবর। তার দিন দশেকের মধ্যেই অমিত শাহ বৈঠকে বসছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির চার শীর্ষনেতাকে নিয়ে।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘বিভিন্ন রাজ্যকে নিয়ে এ রকম বৈঠক সর্বভারতীয় সভাপতি মাঝেমধ্যে করে থাকেন। সাধারণত মাস দু’য়েক অন্তর এই রকম বৈঠক হয়।’’এ বারের বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হবে? দিলীপ বলেন, ‘‘এই ধরনের বৈঠকে আলোচ্য বিষয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই স্থির করেন। তবে দলের প্রস্তুতি, পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচন— এই সব নিয়েই মূলত কথা হবে বলে মনে হয়।’’

আরও পড়ুন: ব্যাঘ্রচর্মেই বেঁচে রইল পূর্বপুরুষের স্মৃতি

অমিত শাহের এই তলব নিয়ে রাহুল সিংহ কিন্তু মুখ খুলতে চাননি। বৈঠক যে হচ্ছে এবং সেখানে যে তিনিও ডাক পেয়েছেন, সেটুকুও বলতে চাননি রাহুল। তিনি যে দিল্লিতেই রয়েছেন, সে কথা রাহুল স্বীকার করেছেন। কিন্তু কী কারণে দিল্লি গিয়েছেন, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dilip Ghosh Rahul Sinha BJP Amit Shah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE