Advertisement
E-Paper

বাংলার কারাগারে বন্দিদের পরিচয় জানতে চায় কেন্দ্র, সাক্ষাৎ করতে এলেও নিয়ম মানার নির্দেশ শাহি মন্ত্রকের

রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কারা দফতরকে পাঠানো নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সংশোধনাগারে থাকা যে কোনও বন্দি এবং তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা ব্যক্তিদের আধার কার্ডের সত্যতা যাচাই করতে হবে।

অমিত রায়

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:২৬
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

দেশের সব রাজ্যের সংশোধনাগারে থাকা বন্দি ও তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা ব্যক্তিদের আধার কার্ড যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছে অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সেই নির্দেশ এসে পৌঁছেছে পশ্চিমবঙ্গের কারা দফতরের কাছেও। সম্প্রতি সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কারা দফতরকে ওই নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। সেই নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, সংশোধনাগারে থাকা যে কোনও বন্দি বা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা ব্যক্তিদের আধার কার্ডের সত্যতা যাচাই করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, সে সব তথ্য ‘দ্য ন্যাশনাল ইনফর্মেশন সেন্টার (এনআইসি) ই-প্রিজ়নারস’-এ নথিভুক্ত করাতে হবে। ফলে সরাসরি সেই তথ্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেও নথিভুক্ত হবে।

এমনিতে সংশোধনাগারে নতুন কোনও বন্দি এলে তাঁর যাবতীয় পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখার রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু এ বার নতুন নিয়মে সংশ্লিষ্ট বন্দির আধার নম্বর যাচাই করাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে সংশোধনাগারে বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখা হত। সে ক্ষেত্রেও এ বার আধার নম্বর যাচাই করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদিও নির্দেশিকায় ‘বাধ্যতামূলক’ শব্দটি লেখা হয়নি। কিন্তু নির্দেশ যে কার্যকর করতেই হবে, তা নির্দেশনামা হাতে পাওয়ার পর বুঝেছেন রাজ্য কারা দফতরের কর্তারা।

রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনাক্রমের কারণেই এমন নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। গত বছর ২৯মে পঞ্জাবে গুলি করে হত্যা করা হয় জনপ্রিয় গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকে। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে জানা যায় জেলবন্দি গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই ওই হত্যাকাণ্ডের পিছনে রয়েছেন। তদন্ত করে জানা যায়, জেলে বসেই লরেন্স কানাডায় থাকা গোল্ড ব্রারের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছিলেন। তদন্তে প্রকাশ পায়, ওই সময় যাঁরা সংশোধনাগারে বন্দি লরেন্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন, তাঁদের মারফতেই যাবতীয় পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছিল মুসেওয়ালাকে। জেল থেকে বসে এমন একজন ‘হাই প্রোফাইল’ ব্যক্তিত্বকে হত্যা করার ঘটনায় নড়েচড়ে বসে দেশের প্রশাসন। প্রসঙ্গত, সেই হত্যাকাণ্ডের পর আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কেন্দ্রীয় সরকার প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। সঙ্গে মুম্বই-সহ আরও বেশ কিছু রাজ্য থেকে জেলে বসেই গ্যাংস্টারদের বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও নানা রকম অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সেই নির্দেশিকা।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সেই নির্দেশিকা।

বিভিন্ন রাজ্য থেকে একই ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর জেলবন্দি ও তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের আধার কার্ডের সত্যতা যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পাশাপাশিই ওই সিদ্ধান্তের পিছনে আরও একটি কারণ রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলে বন্দি রয়েছেন বহু বিদেশি নাগরিক। তাঁদের সঙ্গে জেলে সাক্ষাৎ করতে আসা ব্যক্তিদের মারফত এক ধরনের মাদক পাচার চক্র ‘সক্রিয়’ বলেও জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এ বছর স্বাধীনতা দিবসের আগে বিভিন্ন রাজ্যের সংশোধনাগারে বিদেশি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বিদেশি বন্দিদের পরিচয় জানতে চাওয়ায় মুক্তিপ্রক্রিয়া আটকে গিয়েছিল শেষ মুহূর্তে। যা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল নবান্ন-রাজভবনের। সে সব ঘটনা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়েই এ বার গোড়া থেকে জেলবন্দি ও তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা ব্যক্তিদের উপর নজর রেখে তাঁদের পরিচয় জানার পক্ষপাতী শাহের অধীনস্থ মন্ত্রক। যাতে আগামী দিনে মুসেওয়ালার মতো কোনও বড় হত্যার ঘটনা বা কোনও অপরাধের ঘটনার সঙ্গে জেলবন্দি বা তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা ব্যক্তিদের যোগ মিললে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

Amit Shah Prisoners
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy