Advertisement
E-Paper

পুরভোট থেকেই পরিবর্তন চাইলেন অমিত

বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ নিয়ে কলকাতায় আসার কথা নরেন্দ্র মোদীর। হেমন্তেই মোদীর কাজ এগিয়ে রাখলেন তাঁর প্রধান সেনাপতি! ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিগেড থেকে এ রাজ্যে ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’-এর ডাক দেবেন মোদী। তার তিন মাস আগেই ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে থেকে পুরসভা ও বিধানসভায় ভোটযুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২০
লক্ষ্যে স্থির। ধর্মতলা এলাকা ছাপানো থিকথিকে ভিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ডাক দিলেন অমিত শাহ। রবিবার দেবাশিস রায়ের তোলা ছবি।

লক্ষ্যে স্থির। ধর্মতলা এলাকা ছাপানো থিকথিকে ভিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ডাক দিলেন অমিত শাহ। রবিবার দেবাশিস রায়ের তোলা ছবি।

বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ নিয়ে কলকাতায় আসার কথা নরেন্দ্র মোদীর। হেমন্তেই মোদীর কাজ এগিয়ে রাখলেন তাঁর প্রধান সেনাপতি!

ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিগেড থেকে এ রাজ্যে ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’-এর ডাক দেবেন মোদী। তার তিন মাস আগেই ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে থেকে পুরসভা ও বিধানসভায় ভোটযুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। রবিবার বিজেপির ‘উত্থান দিবস’-এর সভায় উপস্থিত জনতার প্রতি তাঁর আহ্বান “কলকাতায় এক বার আপনারা বিজেপির মেয়র দিন। বিজেপি আপনাদের রাজ্যে সরকার দেবে!” অল্প কথাতেই অমিত ছকে দিয়ে গেলেন দলের রোডম্যাপ। ২০১৫-য় পুরভোটের সেমিফাইনাল হয়ে ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে ফাইনাল। সেই রূপরেখা ধরেই এখন প্রতিটি পা ফেলছে বিজেপি।

এ দিন অমিত, বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, দলের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য এবং দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ সকলেই কোনও সংশয়, বিভ্রান্তি না রেখে বুঝিয়ে দিয়েছেন এ রাজ্যের তখ্ত থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করাই আপাতত তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য।

ফি বছর যেখানে তৃণমূল নেত্রী ২১ জুলাইয়ের ‘শহিদ সমাবেশ’ করেন, সেখানে দাঁড়িয়ে এ দিন সারদা থেকে খাগড়াগড়, নানা ঘটনাকে হাতিয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধেছেন অমিত। মোদীর কায়দায় বারংবার ‘দিদি, দিদি’ বলে সম্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে সংসদে যে দল বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তার নেত্রী কেন সারদা-কাণ্ডের ‘কালো’ মুখদের আড়াল করছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। তেমনই অভিযোগ করেছেন, সারদা-কাণ্ডের টাকাই খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ ঘটানো জঙ্গি গোষ্ঠীদের হাতে গিয়েছে।

শুরু করলেন ‘দিদিইইইই’ বলে ডেকে। দ্রুত বক্তৃতা শেষ করলেন
কিশোরকুমারকে নিয়ে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বিমান ধরতে হবে বলে।
তার মাঝেই রবিবার বাবুল সুপ্রিয় বলে গেলেন, ২০১৬-এ তৃণমূল কংগ্রেসকে
‘নির্মূল কংগ্রেস’ করতে এসেছেন। ছবি: দেবাশিস রায়

দুর্নীতি, অপশাসন এবং সন্ত্রাসবাদে মদতের সূত্র ধরেই তৃণমূলের শিকড় উপড়ে ফেলার কথা বলেছেন অমিত। দলের কর্মী-সমর্থকদের জন্য তাঁর নির্দেশ, ২০১৫ সালের পুরভোট থেকেই রাজ্যে ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’ ঘটানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অমিতের কথায়, “আগে গোটা দেশের পরিবর্তনে কলকাতা পথ দেখাত। সামনে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। কলকাতা পুরসভায় বিজেপি-কে এনে গোটা পশ্চিমবঙ্গকে পথ দেখাক কলকাতা! সেখান থেকেই শুরু হোক তৃণমূলের পতন।” মোদী যেমন কংগ্রেসমুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়েছিলেন লোকসভা ভোটের আগে, অমিতও তেমন এ দিন তৃণমূলমুক্ত বাংলা গড়ার কথা বলেছেন। ধর্মতলার এ দিনের এই সমাবেশের জন্য প্রথমে অনুমতি দিতে চায়নি পুরসভা এবং প্রশাসন। আদালতে গিয়েছিল বিজেপি। তার পরেও টানাপড়েন চলেছিল সভার ২৪ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত আদালতের লড়াইয়ে জয় এসেছে দলেরই যে আইনজীবীর হাতযশে, সেই কৌশিক চন্দকে এ দিন সংবর্ধনা দিয়েছেন অমিত।

শুধু তাই নয়। ক্ষমতায় এলে যে এ রাজ্যে মোদীর নকশা মেনেই উন্নয়ন হবে, অমিত দিয়েছেন সেই বার্তাও। তাঁর বক্তব্য, মোদী লোকসভা ভোটের আগেই বলেছিলেন, দেশের পশ্চিম ভাগে উন্নয়ন হলেও পূর্ব দিক বঞ্চিত। এ রাজ্যে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান যিনি (মমতা) ঘটিয়েছেন, তাঁর কাছে মানুষের উন্নয়নের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বিজেপির দাবি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কর্মসংস্থান কোনও ক্ষেত্রেই মমতা জনগণের আশা পূরণের ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেননি। অতএব, মোদীর উন্নয়ন প্রকল্পের শরিক করতে হবে বাংলাকে। অমিতের কথায়, “মোদীজি-র সরকার মূল্যবৃদ্ধি কমিয়েছে। ১২ বার পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমেছে। জনধন যোজনা চালু হয়েছে।” এই প্রেক্ষিতেই অমিতের হুঁশিয়ারি, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করে মমতা জনতাকে বোকা বানাতে পারবেন না। অমিতের কটাক্ষ, “আপনি বাংলাদেশের মুখ্যমন্ত্রী নন! পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আপনাকে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করেছে।”

যুবসমাজ যে কাজ চায়, শিল্প চায়, বলতে ভোলেননি অমিত। এবং উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার পথেই বাংলা জয় করতে আসা নেতা এর পরে জানতে চেয়েছেন, “কিন্তু মমতা মোদীজিকে এ রাজ্যে উন্নয়ন করতে দেবেন, এ কথা আপনারা বিশ্বাস করেন?” জনতা জবাব দেয়, “না।” তখন অমিত বলেন, “তা হলে উন্নয়নের জন্য কী করতে হবে? এ রাজ্যে বিজেপি সরকার গড়তে হবে!”

কয়েক মাস আগে লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে ১৭% ভোট পেয়েছিল বিজেপি। তার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে দ্রুত উত্থান ঘটছে তাদের। তৃণমূল-বিরোধিতার সুর চড়িয়ে রাজ্যে বিরোধী রাজনীতির পরিসর এখন অনেকটাই গেরুয়া বাহিনীর দখলে। রাজ্যে দলের সম্ভাবনা বুঝতে পেরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও বিশেষ নজর দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দিকে। অমিত এ দিন আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বাংলায় ক্ষমতা দখলকে ঠিক কতটা গুরুত্ব তাঁরা দিচ্ছেন। বিজেপি সভাপতি বলেছেন, লোকসভা ভোটে জিতে দেশে সরকার গড়ার পরে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার মতো রাজ্যে জয় পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সেই সব কোনও জয়ই জয় নয়! অমিতের কথায়, “২০১৪-র লোকসভা ভোট থেকে মোদীজির বিজয়রথ যাত্রা শুরু করেছে। ঝাড়খণ্ড, জম্মু-কাশ্মীর, দিল্লি এবং বিহারেও জয় হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালে বিজেপি-র সরকার না গড়া পর্যন্ত সেই জয়যাত্রা সম্পূর্ণ হবে না!”

সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে তাল রেখে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুলবাবু ডাক দিয়েছেন, মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের মতো তাঁরা বাংলায় সাফাই অভিযান শুরু করবেন। যার লক্ষ্য হবে তৃণমূলকে সাফ করা! রাহুলবাবুর আরও মন্তব্য, “তৃণমূল আগে বলেছিল, উল্টে দিন, পাল্টে দিন। দু’টো এক সঙ্গে হয় না। তৃণমূল ২০১১ সালে সিপিএমকে উল্টে দিয়েছিল। পরের বার আমরা তৃণমূলকে পাল্টে দেব!” দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ আবার বলিউডি ছবির প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, সারদা তদন্তে সিবিআই যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে ২০১৪-য় ‘ভাগ মদন ভাগ’ হবে। সেটাই ২০১৫-য় ‘ভাগ মুকুল ভাগ’, ২০১৬-য় ‘ভাগ মমতা ভাগ’ হয়ে দাঁড়াবে!

বিজেপি নেতৃত্বের এই হুমকিকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আগে দিল্লি সামলান। তার পর কলকাতা। পরে বাংলা সামলানোর কথা ভাববেন।” সিদ্ধার্থনাথকে কটাক্ষ করে তাঁর প্রশ্ন, মিডিয়ার উপরে ভরসা করেই কি ওঁরা বাংলা দখল করবেন? সুব্রত মুখোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “তৃণমূল মানুষের তৈরি দল। একে হেলানো মুশকিল।” পার্থবাবুর অভিযোগ, বিজেপি পুলিশকে কাজে লাগিয়ে, অর্থব্যয় করে আঞ্চলিক দল ভাঙতে চাইছে। যার জবাবে রাহুলবাবু বলেছেন, “পুলিশ তো রাজ্যের হাতে। মানে ওঁদের হাতে। আর টাকা? আমাদের সারদা নেই। টাকাও নেই!”

bjp rally bjp meeting amit shah victoria house siddharth nath singh changes in Bengal babul supriyo amit rally in kolkata tmc state news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy