Advertisement
E-Paper

‘২০২৩-এ মায়ের সঙ্গে দেখা হোক’

ইরিনার মা-বাবা চাইলে ইউক্রেন ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারতেন। কিন্তু তাঁদের ছেলে সের্গেইকে (ইরিনার ভাই) সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয়েছে বলে তাঁরাও দেশে বন্দি।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৩
ছেলে আদ্রিয়ান ও মেয়ে দিয়ানার সঙ্গে ইরিনা। নিজস্ব চিত্র

ছেলে আদ্রিয়ান ও মেয়ে দিয়ানার সঙ্গে ইরিনা। নিজস্ব চিত্র

অনাগতের অপেক্ষাতেই শুরু হয়েছিল ২০২২। সে বড় সুখের অপেক্ষা ছিল।

২০২৩-এর প্রথম সকালেও থাকছে অন্য এক করুণ অপেক্ষা। শনিবার, বছর শেষের প্রাক্কালে ইউক্রেন-কন্যা ইরিনা দে বলছিলেন, “আমার ছেলেটার জন্মের জন্যই ২০২২-কে মনে রাখব। মনপ্রাণ দিয়ে চাইছি, বছরটার অন্য সব স্মৃতি খারাপ স্বপ্নের মতো মুছে যাক!”

বিবাহসূত্রে গত এক দশক এ রাজ্যের বাসিন্দা ইরিনা। মেয়ে দিয়ানার পরে ২০২২-এর মার্চে কোলে এসেছে ছেলে আদ্রিয়ান। ইউক্রেনের টার্নোপিলের মেয়ে ইরিনা আর তাঁর ডাক্তার স্বামী সৌরভ দে-র দমদমের সংসার শুধুই পূর্ণতায় ভরে থাকার কথা ছিল। এর বদলে তাড়া করছে যুদ্ধধ্বস্ত দেশে রক্তপাত, শিশুদের কান্না, প্রিয়জনের জন্য উৎকণ্ঠা। ইরিনা বলছেন, “আমাদের অদ্ভুত ভাগ্য! ২০২৩-ও অন্য এক অপেক্ষার মধ্যে শুরু হচ্ছে। কে জানে আমার মা, বাবা, ভাইয়ের সঙ্গে কবে দেখা হবে! বছর ঘুরে গেল, তবু টেনশন আর মন খারাপে পৃথিবীটা যেন এক জায়গাতেই থমকে আছে।”

আদ্রিয়ান ও দিয়ানার মা কথা বলেন ঝরঝরে বাংলায়। শুধু যা একটু ‘স’য়ে ইংরেজির ‘এস’এর টান, আর ‘ট’কে ‘ত’ বলেন। কোলের ছেলেটাকে ইউক্রেনিয় ভাষায় গ্লিনচেক (প্যানকেক বা আস্কে পিঠে), মালাইংকি (ছোট্ট সোনা) বলতে বলতেই আজকাল ‘বাবু’, ‘সোনা’ এ সবও বলে ফেলেন ইরিনা। আর টার্নোপিল শহরে ভিডিয়ো কলে পুঁচকে নাতিকে দেখে কাঁদেন ইরিনার মা নাদিরা প্রিতোলিউক, ‘আর কত দিন তোকে এমন দূর থেকে ভালবাসতে হবে!’

ইরিনার মা-বাবা চাইলে ইউক্রেন ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারতেন। কিন্তু তাঁদের ছেলে সের্গেইকে (ইরিনার ভাই) সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয়েছে বলে তাঁরাও দেশে বন্দি। টার্নোপিল শহরের অবস্থা তুলনায় ভাল। দরকারি জিনিস, খাবার-টাবার মিলছে।

মারিয়োপোল, দনেৎস্ক, এমনকি কিভ থেকেও অনেকে বোমাবাজিতে ঘরবাড়ি খুইয়ে শহরটায় চলে এসেছেন। কিন্তু টার্নোপিলেও দিনে বাধ্যতামূলক ৮-৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। যখন থাকে তখনই রোজ মা, বাবার সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা হয় ইরিনার। কলকাতার স্কুলে ক্লাস ফোরের মেয়ে ন’বছরের দিয়ানাও বাবুশা ও দিদুশ (দিদিমা ও দাদু) অন্ত-প্রাণ। প্রথমে যুদ্ধের খবর শুনে সে প্রার্থনা করত, ঠাকুর, পুতিনকে সুবুদ্ধি দাও! ইরিনা বলেন, “আমি মেয়েকে শোক, দুঃখের সত্যিটা থেকে আড়াল করতে চাই না! ভিডিয়োয় দেখাই ওদের দেশের ছোটরা কত কষ্টের মধ্যে আছে। বাঙ্কারে ঘুমোচ্ছে। মাথার উপরে জঙ্গি বিমানের গোঙানি।” মেয়েকে খুশি করতেই ওর সঙ্গে হাত লাগিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়েছেন ইরিনা। আর ঘোর সান্তাক্লজ বিশ্বাসী মেয়েকে শুনিয়েছেন, ইউক্রেনের বড়দিনে সেনারাই সান্তাক্লজের উপহার এনে ওদেশের ছোটদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

ইরিনার বর, শ্বশুর, শাশুড়ি পাশে রয়েছেন এ শোকে। দমদমের বাড়িতে বর্ষবরণের প্রহর কাটবে নিচু তারেই। বাখমুতের পতনের খবর, মোদীকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ফোন এ সব খবরে ডুবে আছেন ইরিনা। বলছেন, “বুঝতে পারছি খুব সহজে যুদ্ধ শেষ হবে না! তবু ২০২৩ শান্তির দিন ফিরিয়ে আনুক, আর কিছু চাইছি না!”

Russia Ukraine War Ukraine woman India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy