Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Anis Khan

Anis Khan: আনিস কি নিজে পড়ে যান, না তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল? বলবে কি ময়নাতদন্ত

ফরেন্সিক বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, ময়নাতদন্তে আঘাতের চিহ্ন দেখে উঁচু থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে কি না, তা বলা সম্ভব।

আনিস-কাণ্ডে বাড়ছে রহস্য।

আনিস-কাণ্ডে বাড়ছে রহস্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:২৬
Share: Save:

নিজের বাড়ির তেতলার ছাদ থেকে ছাত্রনেতা আনিস খান কি নিজেই পড়ে গিয়েছিলেন? না, তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলা দেওয়া হয়েছিল? একমাত্র ময়না-তদন্তেই এই রহস্যের জবাব পাওয়া সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু ময়না-তদন্তই যদি ‘ঠিকঠাক’ না-হয়? এই সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করেছেন হাওড়ার আমতার ওই ছাত্রনেতার বাবা সালেম খান। আনিসের পরিবারের বক্তব্য, পুলিশের করা ময়না-তদন্তের রিপোর্টের উপরে তাঁদের ভরসা নেই। পুলিশে তাদের অনাস্থা এতটাই যে, সিবিআই-কে দিয়ে এই অপমৃত্যুর তদন্ত করানোর দাবি উঠেছে ইতিমধ্যেই।

এই অবস্থায় প্রাক্তন এবং বর্তমান পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ঠিক কী ভাবে আনিসের মৃত্যু হয়েছে, তা জানতে ফরেন্সিক বিভাগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সেই সঙ্গে সত্য উদ্ঘাটনে ময়না-তদন্তের রিপোর্টও হতে পারে বড় হাতিয়ার।

পুলিশের করা ময়না-তদন্তে মৃতের পরিবারের আস্থা নেই কেন? আনিসের বাবা সালেমের অভিযোগ, তাঁর ছেলের মরদেহের ময়না-তদন্ত নিয়ে চোর-পুলিশ খেলেছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের দেহ তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের থানায় যেতে বলা হয়েছিল। সেখান থেকে আমাদের সঙ্গে নিয়েই ময়না-তদন্তের জন্য উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে যাওয়ার কথা। কিন্তু থানায় গিয়ে আমরা জানতে পারি, পুলিশ তত ক্ষণে দেহ নিয়ে চলে গিয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, ময়না-তদন্ত ঠিক ভাবে হবে না। পুলিশ তাদের মনের মতো করে রিপোর্ট করাবে। এতে আমাদের আস্থা নেই।’’

পুলিশের বক্তব্য, যা করা হয়েছে, আইন মেনেই করা করা হয়েছে। কিন্তু ময়না-তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তদন্তকারীরা। আনিসকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাক পরা দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। পুলিশের বক্তব্য, তাদের কেউই শুক্রবার ঘটনার রাতে আনিসের বাড়িতে যাননি। পুলিশ এ কথা জানানোর পরে ওই ছাত্রনেতার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা গাঢ়তর হয়েছে।

উঁচু থেকে পড়লে যে-কারও দেহে আঘাতের চিহ্ন থাকবে এবং ময়না-তদন্তে তা ধরা পড়া উচিত। কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন ডেপুটি কমিশনার বৈদ্যনাথ সাহা বলেন, “প্রথমত, এই সব ক্ষেত্রে দেখতে হয়, মৃতের দুই হাতে ‘ডিফেন্স উন্ড’ বা আত্মরক্ষা করতে গিয়ে পাওয়া কোনও চোটের চিহ্ন রয়েছে কি না। কারণ, কাউকে ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেললে নিহতের সঙ্গে আততায়ীদের ধস্তাধস্তির সম্ভাবনা থাকে। এতে তাঁর হাতে আঘাতের চিহ্ন থাকবে। দ্বিতীয়ত, উঁচু বহুতল থেকে কেউ যদি ঝাঁপ দেন, তাঁর দেহ একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে পড়বে। আর সেখান থেকে কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে দেহটি অন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পড়বে। তৃতীয়ত, দুর্ঘটনার জেরে উঁচু থেকে নীচে পড়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। সে-ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু প্রমাণ রয়েছে, যা ঝাঁপ দেওয়া বা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চিহ্নপ্রমাণের সঙ্গে মেলে না।” ওই প্রাক্তন পুলিশকর্তা জানান, পারিপার্শ্বিক সমর্থনযোগ্য তথ্যপ্রমাণ মিলিয়ে দেখা খুবই জরুরি। সর্বোপরি ময়না-তদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখারও দরকার আছে।

ফরেন্সিক বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, ময়না-তদন্তে আঘাতের চিহ্ন দেখে উঁচু থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে কি না, তা বলা সম্ভব। কিন্তু সেটি আত্মহত্যা না খুন কিংবা দুর্ঘটনা, সেটা শুধু ময়না-তদন্ত থেকে বলা সম্ভব নয়। সে-ক্ষেত্রে দেহটি ছাদ থেকে কত দূরে এবং কী ভাবে পড়েছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে ঠেলে ফেলা হলে তিনি প্রতিরোধ করবেন। পরস্পর বিপরীতমুখী বলের ক্রিয়ার ফলে তাঁকে বেশি দূরে ফেলা সম্ভব নয়। আবার কেউ আত্মহত্যা করলে দেহ তুলনায় বেশি দূরে গিয়ে পড়বে।

এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ জানান, সাধারণত লাফ দেওয়ার সময় ক্রীড়াবিদেরাও সর্বাধিক ৪৫ ডিগ্রি কোণে লাফ দিতে পারেন। সে-ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে লাফ দেওয়ার কোণের মাপ আরও কম হবে। দেহ সর্বাধিক ১৩ থেকে ১৫ ফুট দূরে পড়তে পারে। আবার দুর্ঘটনা ঘটে থাকলে অনেক সময়েই একেবারে দেওয়ালের গা ঘেঁষে পড়ে। তখন কার্নিসে বা কোথাও ধাক্কা লাগতে পারে। কেষ্টপুরে এক বিমানসেবিকার মৃত্যুতে এমনই উদাহরণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পরীক্ষা মৃত্যুর কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরে। তার সঙ্গে অন্যান্য সাক্ষ্য মিলিয়ে ঠিক কী ঘটেছিল, তার ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব।

কয়েক বছর আগে দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটি আবাসন থেকে তিন মহিলার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। ঠিক কী ঘটেছিল, সেই সময় মৃতাদের চেহারার আকৃতির মতো মোটা বালিশ ফেলে তা বোঝার চেষ্টা করেছিলেন গোয়েন্দা এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। এক পুলিশকর্তার মতে, উঁচু জায়গা থেকে পড়ার সময় দেহ বেঁকে যেতে পারে বা সুইং করতে পারে। সেটাও মাথায় রাখতে হয়।

পুলিশ ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, আনিসের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শী আছেন এবং নানান সাক্ষ্য রয়েছে। তদন্তে বড় হাতিয়ার হতে পারেন সেই সব প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anis Khan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE