নরমে-গরমে অনুব্রত। একের পর এক জনসভায় এমন কৌশল নিতেই দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে।
আত্মবিশ্বাস দেখাতে জনসভায় দাঁড়িয়ে অনুব্রত বলছেন, ‘‘আমি পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য আসিনি। এসেছি লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে। পঞ্চায়েতের জন্য আমার বুথ, অঞ্চল ব্লক সভাপতিরাই যথেষ্ট।’ কখনও আবার বিরোধীদের চোখ উপড়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। কখনও আবার সুর নরম করে বলছেন, ‘আপনাদের কী চাই বলুন, আমরা সেটা করব। তবে ভুল করে অন্য দলে যাবেন না।’ শনিবার মহম্মদবাজারের কাপিষ্ঠা পঞ্চায়েত এলাকার নবগ্রামের মাঠে আয়োজিত তৃণমূলের জনসভা থেকে তেমনই মেজাজে ধরা দিলেন অনুব্রত।
আরও পড়ুন: মাইক নিয়ে ফের বিতর্ক মান্নান-বিকাশদের সভায়
এ দিনও উপস্থিত ভিড়ের উদ্দেশে অনুব্রতকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে শোনা গেল, ‘‘ভুল করে অন্য দলে যাবেন না। ওরা কালসাপ। কী করতে হবে বলুন, আমরা তা পালন করব। কৈফিয়ত চান, উত্তর দেব। অর্ডার করুন, কাজ করব।’’ এখানেই না থেমে মহম্মদবাজারের আদিবাসীদের উদ্দেশে অনুব্রতর প্রতিশ্রুতি, ‘‘জেলা পরিষদ দিন কয়েকের মধ্যেই আদিবাসী গ্রামে পাতা সেলাইয়ের ২০টি মেশিন দেবে। পানীয় জলের জন্য ১০টি সোলার সিস্টেমের সাবমার্সিবল পাম্প বসাবে।’’
ঘটনা হল, দলের নির্দেশ মেনে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করে সংগঠন মজবুত করতে ব্লকে ব্লকে সভা করছেন অনুব্রতরা। অনেকেরই মনে হয়েছে, প্রায় প্রতিটি সভায় উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরা, বিরোধীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, তাদের বিরুদ্ধে বেলাগাম কথা যেমন বলছেন, তেমনই দলে ভাঙনের প্রশ্নে এবং বিজেপিকে চাপে রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতেও বেশ সচেতন অনুব্রত। মহম্মদবাজারে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে কু-কথা বলেননি। তবে, জেলার অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড পাথর শিল্পাঞ্চল চালু রাখতে আদিবাসীদের অনুরোধ করেন। রাস্তায় তোলা আদায় যাতে না হয়, সেটাও দেখতে বলেন।
তবে, এ দিন দুটি ভিন্ন প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন অনুব্রত। এক, কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরীকে সামনা-সামনি মল্লযুদ্ধে আহ্বান জানানো। দুই, পদ্মাবতী প্রসঙ্গে হরিয়ানার এক বিজেপি নেতার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাক কাটার হুঁশিয়ারি নিয়ে। ঘটনা হল, এ দিনই ময়ূরেশ্বরে সভা ছিল অধীরের। সেখানে অনুব্রতর উদ্দেশে অধীরের বক্তব্য ছিল: পুলিশ ছাড়া পালোয়ানগিরি করে দেখান অনুব্রত। সংবাদমাধ্যমের কাছে এ কথা শোনার পরেই সরাসরি অধীরকে চ্যালেঞ্জ করে অনুব্রত বলেন, ‘‘কবে করতে চায়, ওঁকে জিজ্ঞাসা করুন। কে, কত বাপের ব্যাটা দেখি। পুলিশ ছাড়াই হবে। ওঁর লোক নিয়ে অসুক। আমি আমার লোক নিয়ে যাব।’’ তবে মল্লযুদ্ধের ফয়সালা হওয়ার পরে মিস্টিমুখের কথাও বলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি।
অন্য দিকে, ‘পদ্মাবতী’কে সমর্থন করায় এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাক কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন হরিয়ানার বিজেপি নেতা সুরজ পাল আমু। মমতাকে ‘সূর্পনখা’-র সঙ্গেও তুলনা করেছেন তিনি। সেই প্রসঙ্গ টেনে অনুব্রতর বক্তব্য, ‘‘হরিয়ানা থেকে কোন বিজেপি নেতা নাকি বলছে, দিদির নাক কেটে সূর্পনখা বানাবে। হরিয়ানা থেকে এ কথা বলা অনেক সোজা। হিম্মত থাকলে এ রাজ্যে এসে বলুক। মানুষই ওর জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবে।’’