Advertisement
E-Paper

আক্রমণে অনুব্রতর মুখে সেই কাজলই

তাঁকে দলের কেউ নন বলেই দাবি করে থাকেন দলীয় নেতৃত্ব। নেতাদের একটা অংশ তাঁকে ‘ক্রিমিনাল’ও বলে থাকেন। রবিবার নানুরে তাঁরই গড়ে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্যে ঘুরে ফিরে বারবারই উঠে এলো তাঁর প্রসঙ্গ। সরাসরি নাম না করলেও তাঁদের আক্রমণের লক্ষ ছিলেন নানুরের দাপুটে তৃণমূল নেতা কাজল শেখ।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০৩:৪৬
নানুরের জনসভায় খোসমেজাজে তৃণমূল নেতারা। রবিবার ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

নানুরের জনসভায় খোসমেজাজে তৃণমূল নেতারা। রবিবার ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

তাঁকে দলের কেউ নন বলেই দাবি করে থাকেন দলীয় নেতৃত্ব। নেতাদের একটা অংশ তাঁকে ‘ক্রিমিনাল’ও বলে থাকেন। রবিবার নানুরে তাঁরই গড়ে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্যে ঘুরে ফিরে বারবারই উঠে এলো তাঁর প্রসঙ্গ। সরাসরি নাম না করলেও তাঁদের আক্রমণের লক্ষ ছিলেন নানুরের দাপুটে তৃণমূল নেতা কাজল শেখ। যা দেখে কাজলের অনুগামীরা দাবি করছেন, মুখে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করলেও নানুরের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব যে কাজলের হাতেই রয়েছে, পরোক্ষে তা-ই বুঝিয়ে গেলেন অনুব্রত মণ্ডল!

জেলার রাজনীতিতে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে নানুরের কাজল শেখ (কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানওয়াজের ভাই) গোষ্ঠীর বিবাদ দীর্ঘ দিনের। সেই বিবাদের জেরেই গত পঞ্চায়েত ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নানুর এলাকার সমস্ত আসনে জেতা তৃণমূল হেরে যায় জেলা পরিষদের আসনে। অতীতে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে খুনোখুনি, মারপিট, পরস্পরের কার্যালয় ভাঙচুর থেকে বোমাবাজি— সব ধরনের অভিযোগই উঠেছিল। এরই মধ্যে একদা কাজল শিবিরে থাকা নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরা থেকে প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষের মতো অনেকেই অনুব্রতর কাছে শরণ নিয়েছেন। তার পরেও পঞ্চায়েত সমিতি এবং ১১টি পঞ্চায়েতের অধিকাংশই বর্তমানে কাজলের নিয়ন্ত্রণে। দলের তরফে বহু চেষ্টার পরেও নানুরে কাজল গোষ্ঠীর দাপট কমেনি বলে তৃণমূলেরই একাংশ স্বীকার করে নিচ্ছেন।

“কিছু সিপিএমের মাল এখন আমাদের দলে ঢুকে গিয়েছে। তাদের নিয়ে কাজল নানুরে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে।”

—গদাধর হাজরা, নানুরের বিধায়ক।

“কারা তোলাবাজি করছে, বন্দুকবাজি করছে, বাইক বাহিনী নিয়ে টহল দিচ্ছে, পুলিশ তাদের খুঁজে বার করুক। শাস্তি দিক।”

—কাজল শেখ, তৃণমূল নেতা।

পুরভোটে চার পুরসভা দখল করে ‘চাঙ্গা’ তৃণমূল নেতৃত্ব এ দিন তাই কাজল শেখকে ‘সমঝে’ দিতেই নানুরে জনসভার ডাক দেয় বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। নেতৃত্বে দলের জেলা পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম। অনুব্রত মণ্ডল, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ সিংহ, বিকাশ রায়চৌধুরী, মনিরুল ইসলাম, গদাধর হাজরা, অসিত মাল— ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য ওই সভায় হাজির করতে যেন কাউকেই বাকি রাখেনি তৃণমূল নেতৃত্ব। শুধু ছিলেন না কাজলই। এবং তাঁর অনুগামী অনুগামী বলে পরিচিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিন্তা মাঝি এবং পঞ্চায়েত প্রধানরা। তবে, এ দিনের জনসভায় ভাল ভিড়ও হয়েছিল। পুলিশের হিসেবে জনসভায় লোক হয়েছিল হাজার ছ’য়েক। তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, সভায় ৩০ হাজার লোক হয়েছিল। যদিও সভায় যোগ দেওয়া অধিকাংশকেই বহিরাগত বলে দাবি কাজল গোষ্ঠীর। ওই গোষ্ঠীর এক নেতা বলেন, ‘‘সাকুল্যে হাজার চারেক লোক হয়েছিল। তা-ও লাভপুর বোলপুর, আমোদপুর, বর্ধমান থেকেও লোক নিয়ে আসতে হয়েছে ওদের!’’

এ দিনের জনসভায় উন্নয়নের ফিরিস্তির বদলে বক্তাদের সিংহভাগ জুড়েই ছিল কাজলের প্রসঙ্গ। কেউ নাম করে, কেউ বা আভাসে-ইঙ্গিতে। সকলেরই নিশানায় ছিলেন কাজল শেখই। তাঁর নাম না করেই লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল সরাসরি বলেন, “জেলা সভাপতি, ব্লক সভাপতি এবং বিধায়ককে যারা মানে না, তারা তৃণমূলের কেউ নয়। ওরাই সুব্রত ভট্টাচার্যকে (‌নানুরে জেলা পরিষদের আসনে দলের প্রার্থী) হারিয়েছিল। কিন্তু, সুব্রতকে নয়, আসলে হারিয়েছিল তৃণমূলকে।’’ কাজলের কথা উঠে আসে ফিরহাদের বক্তৃতাতেও। তিনি বলেন, ‘‘একজন ক্রিমিনালের আমাদের দলে জায়গা নেই। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া ভাবেই তার মোকাবেলা করতে বলেছেন। সে জন্য আরাবুল জেলে গিয়েছেন। জেলে গিয়েছেন আমাদের অনেক নেতাও।’’ এমন লোকেদের পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া হাতে দমন করতে হবে বলেই তিনি হুঁশয়ারি দেন। তাঁর সুরে সুর মিলিয়েই অনুব্রতও বলে ওঠেন, “দলে যার কোন পদ-ই নেই, তাকে বহিস্কার করব কী করে! পুলিশ-প্রশাসন যেন কোনও তোলাবাজ, বন্দুকবাজ, বাইক বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছুপা না হয়।”

ফিরহাদ-অনুব্রত মুখে কাজলের নাম না নিলেও একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরা। অতীতে কাজল-গোষ্ঠীর অন্যতম মুখ বলে পরিচিত গদাধরকে অনুব্রতদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে দেখা যেত। সেই গদাধরই এ দিন বললেন, ‘‘কিছু সিপিএমের মাল এখন আমাদের দলে ঢুকে গিয়েছে। তাদের নিয়ে কাজল নানুরে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। এটা তৃণমূলের কাজ হতে পারে না।’’ যদিও, ওই সময়েই মঞ্চে উপস্থিত প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা আব্দুল মান্নান, তাঁর ভাবশিষ্য মনিরুল ইসলাম এবং অভিজিৎ সিংহকে দেখে জনতার একাংশের কাছ থেকে কিছু বিরূপ মন্তব্য ভেসে আসতে শোনা যায়!

গোটা তৃণমূল নেতৃত্বকে যাঁকে নিয়ে এতো প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা যাচ্ছে, সেই কাজল শেখ এ দিনের সভাকে বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ। উল্টে, অনুব্রতর বক্তব্য শুনে কাজলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমিও অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে একমত। কারা তোলাবাজি করছে, কারা বন্দুকবাজি করছে, বাইক বাহিনী নিয়ে টহল দিচ্ছে, পুলিশ তাদের খুঁজে বার করুক। শাস্তি দিক।’’

argha ghosh nanur anubrata mandal kajal sekh manirul islam firhad hakim boby hakim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy