Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গুলিবিদ্ধ অর্জুন-পত্নী উষা, অভিযুক্ত ভাইপো নিখোঁজ

ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহের স্ত্রীকে গুলি করে খুনের চেষ্টা এবং অভিযোগের তির শাসক দলের ওই দাপুটে নেতার ভাইপোর দিকে। বুধবার সন্ধ্যায় ভাটপাড়ায় নিজের বাড়িতেই গুলিবিদ্ধ হন অর্জুনের স্ত্রী উষাদেবী।

উষা সিংহ, তাঁর স্বামী অর্জুন সিংহ ও অভিযুক্ত কাউন্সিলর সৌরভ সিংহ। — ফাইল চিত্র।

উষা সিংহ, তাঁর স্বামী অর্জুন সিংহ ও অভিযুক্ত কাউন্সিলর সৌরভ সিংহ। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০৪:৪৯
Share: Save:

ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহের স্ত্রীকে গুলি করে খুনের চেষ্টা এবং অভিযোগের তির শাসক দলের ওই দাপুটে নেতার ভাইপোর দিকে।

বুধবার সন্ধ্যায় ভাটপাড়ায় নিজের বাড়িতেই গুলিবিদ্ধ হন অর্জুনের স্ত্রী উষাদেবী। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে অর্জুন এখন বিদেশে।

ভাটপাড়ায় গঙ্গার কোল ঘেঁষা ১১ নম্বর ঘোষপাড়া রোডে পাশাপাশি বাড়ি বিধায়ক এবং তাঁর ভাই অনিল ওরফে ভীম সিংহের। অভিযোগ, ভীমের ছেলে সৌরভই ওই দিন সন্ধ্যায় ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে।

তবে দুই পরিবারের কেউই এ ব্যপারে মুখ খুলতে চাননি। বুধবার রাতে ভীমের পরিবারের লোকজনই রক্তাক্ত অবস্থায় উষাদেবীকে প্রথমে ব্যারাকপুর বিএমআরসি হাসপাতাল নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন ওই বেসরকারি হাসপাতালে। তবে, সে রাতে আর পুলিশকে বিষয়টি জানাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, উষাদেবীর বাঁ দিকে তলপেটে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও গুলির হদিস মেলেনি। তাই বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশকে জানানো হয়নি। ঘটনার রাত থেকেই অবশ্য ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন ভীম ও তাঁর পরিবারের লোকজন। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, তাঁদের প্রথমে বলা হয়েছিল, সিঁড়ি থেকে পড়ে চোট পেয়েছেন ওই মহিলা। পাড়ার লোক এবং দলীয় কর্মীদের অনেকেই এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে জবাব পেয়েছেন—‘কই কিছুই হয়নি তো!’

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্জুন ব্যবসার কাজে দুবাইয়ে আছেন। তাঁর মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফল মেলেনি। ছেলে পবনও ছিলেন দুবাইয়ে।

তবে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতায় ফিরে হাসপাতালে গিয়েছিলেন পবন। সেখান থেকে জগদ্দল থানায় গিয়ে খুড়তুতো ভাই সৌরভের নামে খুনের চেষ্টার লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি বলে জানা গিয়েছে।

ঘটনাটি জানতে পেরে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটও প্রথমে মুখে কুলুপ এঁটে ছিল। এ দিন অবশ্য ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলকাতার ফুলবাগান থানায় গিয়ে বিষয়টি জানায়। সন্ধ্যায় পবন এফআইআর দায়ের করার পরে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার নীরজকুমার সিংহ বলেন, ‘‘অর্জুনবাবুর ছেলে তাঁর খুড়তুতো ভাইয়ের নামে তাঁর মা’কে খুনের চেষ্টার অভিযোগ করেছেন। আমরা মামলা দায়ের করেছি।’’

কিন্তু বুধবার রাতে পুলিশ কেন ঘটনাটি জানতে পারল না? কমিশনারের জবাব, ‘‘হাসপাতালগুলোর কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। পরে উষাদেবীর সঙ্গে কথা বলা হবে।’’

তবে এ দিন রাতেও সৌরভের খোঁজ মেলেনি। নীরজও বলছেন, ‘‘অভিযুক্ত এখনও পলাতক।’’

ভাটপাড়ার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘ধন্দটা অভিযুক্তকে নিয়েই।’’ কেন? দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্জুনের সুপারিশেই মাস কয়েক আগে ভাটপাড়া পুর-নির্বাচনে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে গতবারের বিজয়ী কাউন্সিলর, দলের যুব সভাপতি বাপি মালোর বদলে সৌরভকে টিকিট দিয়েছিল দল। তা নিয়ে দলের অন্দরেই জলঘোলা কম হয়নি।

এখন প্রশ্ন, কাকার পক্ষপাতিত্বে কাউন্সিলর হয়েও পারিবারিক কাঠগড়ায় কেন সৌরভ?

এ দিন পবন খোলাখুলি বলছেন, ‘‘সৌরভ কোনও দিন ভাল ছেলে ছিল না। ওর কূকীর্তির জন্য আমরা ওকে টিকিট না দেওয়ার জন্য বাবাকে বলেছিলাম। জানি না বাবা কোন স্বার্থে ওকে কাউন্সিলর হতে এত সাহায্য করলেন।’’

তাঁর অভিযোগ, বাড়ির নীচে গাড়ি রাখার জায়গা দখল করে ইতিমধ্যেই অফিস বানিয়েছে সে। পবনের দাবি, ‘‘এ ব্যাপারে মায়ের আপত্তি ছিল। মা অনেক বার বলেছেন, সৌরভ আমাদের বাড়িটাই দখল করতে চাইছে।’’ পবনের দাবি, দিন কয়েক আগেই সৌরভ একটি রিভলবার জোগাড় করেছিল। বুধবার উষাদেবীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির জেরে ওই রিভলভার থেকেই গুলি চালিয়েছিল সৌরভ বলে পবনের দাবি।

তবে, স্ত্রী-পুত্রের আপত্তি সত্ত্বেও সৌরভের অফিস খোলা নিয়ে অর্জুন অবশ্য কোনও আপত্তি তোলেননি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বরং পরোক্ষে প্রশ্রয়ই দিয়ে গিয়েছেন ভাইপোকে। কেন? পরিবারের কাছে উত্তর নেই। দলের নেতা-কর্মীদেরও কারণটা অজানা। আর অর্জুন সিংহ?

তাঁকে এ দিন পরিবারের কেউ-ই যোগাযোগ করতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE