অর্কপ্রভ মহাপাত্র ও তনয়া দাস। —নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যমিকে জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছিল বাঁকুড়া শহরের ছেলেরা। এ বার উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম দশের মেধা তালিকায় বাঁকুড়ার নাম ধরে রাখল জঙ্গলমহলের ছেলে অর্কপ্রভ মহাপাত্র।
রাইপুর সবুজ বাজারের বাসিন্দা অর্কপ্রভ বাঁকুড়ার কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুল থেকে এ বার উচ্চমাধ্যমিকে (৪৮১) নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধা তালিকায় দশম স্থান দখল করেছে। তাই তার এই সাফল্যে যতটা খুশি তার স্কুল তথা বাঁকুড়া শহর, ততটাই উচ্ছ্বসিত রাইপুরও।
গড় রাইপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করে বাঁকুড়ায় বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে আসে অর্কপ্রভ। তার বাবা দিলীপকুমার মহাপাত্র হাইস্কুল শিক্ষক, মা ভারতীদেবী গৃহবধূ। বাঁকুড়ায় এসে দাদা সৌরভ মহাপাত্রের সঙ্গে শহরের রামপুর এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত অর্কপ্রভ। রাইপুর ছেড়ে বাঁকুড়ায় কেন, জানতে চাওয়া হলে সে বলে, “জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ভাল কোচিং নেই রাইপুরে। তাই বাঁকুড়ায় এসেছি।” ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে নিয়ে সে এ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়েছে। তাতেও ভাল ফলের আশাবাদী এই মেধাবী।
অর্কপ্রভর প্রিয় বিষয় জীববিজ্ঞান। উচ্চমাধ্যমিকে মোট আটটি বিযয়ে সে টিউশন নিয়েছিল। বাড়িতেও সে অনেকক্ষণ বই নিয়ে পড়ে থাক। তবে শুধু বই আঁকড়ে থাকাই নয়, পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলতেও সে ভালবাসে। এ দিন টিভিতে উচ্চমাধ্যমিকের মেধা তালিকা প্রকাশের সম্প্রচার দেখতে দেখতে দশম স্থানে নিজের নাম শুনেই চমকে গিয়েছিল অর্কপ্রভ। সে বলে, “ভাল ফল হবে আশা করেছিলাম। তবে মেধা তালিকায় আসতে পারব ভাবতে পারিনি। তাই নামটা শুনে সবাই প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম। পরে ধাতস্থ হওয়ার পরে সবাই খুব খুশি হই।’’ এরপরেই সে বাঁকুড়ায় নিজের স্কুলে রওনা দেয়।
এ দিন অবশ্য বাঁকুড়ায় আসেননি অর্কপ্রভর বাবা-মা। তাঁরা মার্কশিট নিয়েই ছেলেকে সটান বাড়িতে চলে আসতে বলেছেন। অর্কপ্রভ জানিয়েছে, এই সাফল্য এসেছে তার বাবা-মায়ের জন্য। তার কথায়, ‘‘বাবা-মা সব সময় আমাকে ভাল ফলের জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।”
এ বার মাধ্যমিকেও কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুলের ছাত্রের নাম মেধা তালিকায় উঠে এসেছে। তার এক সপ্তাহের মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকেও সফল হল এই স্কুলের আর এক ছাত্র। জোড়া সাফল্যের পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিয়কুমার পালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা আমাদের কাছে খুবই গর্বের। তবে আগামী দিনেও যাতে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে তার জন্য আমাদের শিক্ষকরা সচেষ্ট রয়েছেন। ছাত্রদেরও আশাকরি এই সাফল্য অনুপ্রেরণা দেবে।”
অন্যদিকে, উচ্চমাধ্যমিকে মেয়েদের মধ্যে জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে সোনামুখীর বি জে হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তনয়া দাস। সে পেয়েছে ৪৭৯ নম্বর। অর্কপ্রভর মতো তনয়ারও প্রিয় বিষয় জীববিজ্ঞান। সেও ডাক্তার হতে চায়। তবে সংসারের অনটন পায়ের বেড়ি হয়ে দাঁড়াচ্ছে তার ভবিষ্যতের পথে। তনয়ার বাবা গনেশ দাসের বিড়ি তৈরি পারিবারিক ব্যবসা। মা চিত্রাদেবীও বিড়ি তৈরির কাজে হাত লাগান। তবে এই ব্যবসা থেকে মাসের শেষে মেরেকেটে হাজার চারেক টাকা রোজগার। তনয়ার এক ভাই রয়েছে। সে দশম শ্রেণির ছাত্র। টানাটানির সংসারে তনয়ার জন্য সাতটি টিউশনির ব্যবস্থা কোনওরকমে করা হয়েছিল।
তবে ডাক্তারি পড়ার খরচ অনেক। তাই গনেশবাবু মেয়েকে কলেজে অনার্স নিয়ে পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “ছেলের সামনের বছর মাধ্যমিক। এই পরিস্থিতিতে মেয়েকে ডাক্তারি পড়ার খরচ জোগানো সম্ভব নয়। তাই কলেজে অনার্স নিয়ে ভর্তি হতে বলছি।” তনয়া বলে, “ডাক্তার হব বলে স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যার জেরে ভবিষ্যৎ কী হবে বুঝে উঠতে পারছি না।” বি জে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন চোংরে বলেন, “তনয়া খুবই মেধাবী ছাত্রী। কিন্তু ওর পরিবারে আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। তবে আমি নিশ্চিত সুযোগ পেলে ও লক্ষ্যে সফল হবে।”
(বিভিন্ন স্কুল থেকে পাওয়া পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন। পরে আরও ভাল ফল করা পরীক্ষার্থীর খবর পেলে তা তুলে ধরা হবে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy