Advertisement
E-Paper

ঘাঁটি-সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন, শুরু ফৌজি তদন্তও

বর্ধমান বিস্ফোরণ-কাণ্ডের সূত্রে দেশের সামরিক নিরাপত্তার প্রশ্নটিও জড়িয়ে গিয়েছে। তাই এ বার ওই ঘটনা সম্পর্কে পৃথক তদন্ত শুরু করল সেনাবাহিনী। গোয়েন্দা-সূত্রের খবর, বৃহস্পতি ও শুক্রবার সেনা-গোয়েন্দাদের একটি দল বর্ধমানে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থলে গিয়েছিল। বেশ কিছু তথ্যও জোগাড় করে এনেছেন তারা।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৭

বর্ধমান বিস্ফোরণ-কাণ্ডের সূত্রে দেশের সামরিক নিরাপত্তার প্রশ্নটিও জড়িয়ে গিয়েছে। তাই এ বার ওই ঘটনা সম্পর্কে পৃথক তদন্ত শুরু করল সেনাবাহিনী। গোয়েন্দা-সূত্রের খবর, বৃহস্পতি ও শুক্রবার সেনা-গোয়েন্দাদের একটি দল বর্ধমানে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থলে গিয়েছিল। বেশ কিছু তথ্যও জোগাড় করে এনেছেন তারা।

খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ নিয়ে ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। কেন্দ্রীয় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-ও খোঁজখবর চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় আলাদা ফৌজি-অনুসন্ধানের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে সামরিক নিরাপত্তার দিকটি তুলে ধরছেন সেনা-কর্তৃপক্ষ। “নিরাপত্তা ও কৌশলগত (স্ট্র্যাটেজিক) কারণেই ঘটনাটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে” বলেছেন সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় মুখপাত্র, গ্রুপ ক্যাপ্টেন তরুণ সিঙ্ঘা। সেই ‘স্ট্র্যাটেজিক’ কারণগুলো কী?

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, বর্ধমান বিস্ফোরণের পরিপ্রেক্ষিতে পানাগড়ের সেনাঘাঁটি তো বটেই, মুর্শিদাবাদের নির্মীয়মাণ ঘাঁটির সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, খাগড়াগড়ের সাকুল্যে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে পানাগড় সেনাঘাঁটি, যা কিনা এই মুহূর্তে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফৌজি ঘাঁটি হয়ে ওঠার পথে। পানাগড় ঘাঁটির সংস্কারে কেন্দ্র ৬৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। নানা নিরিখে পানাগড়ের গুরুত্ব কয়েক গুণ বাড়ানো হচ্ছে। কী রকম?

সেনা-সূত্রের ব্যাখ্যা: পার্বত্য যুদ্ধে পারদর্শী বিশেষ বাহিনীর (মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর) সদর হবে পানাগড়। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বাহিনীকে পৌঁছে দেওয়ার উপযোগী ‘সি-১৩০ জে সুপার হারকিউলিস’ বিমানবহরের ঘাঁটিও গড়ে তোলা হচ্ছে ওখানে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, সামরিক ক্ষেত্রে চিনই এখন ভারতের সামনে প্রধান বিপদ। তাই দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব সীমান্তের সুরক্ষাবৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। এর অঙ্গ হিসেবে নাগাল্যান্ডের রঙ্গপাহাড় ও অসমের মিসামারিতে গড়ে তোলা হয়েছে দু’টো নতুন মাউন্টেন ডিভিশন, যার কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণের ভার এখন পানাগড়ের হাতে। উপরন্তু তেজপুর-ছাবুয়ায় সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানের ঘাঁটি এবং যোরহাট-বাগডোগরা-হাসিমারা-মোহনবাড়ির বিমানঘাঁটিও পানাগড় থেকে পরিচালিত হয়।

আর এ হেন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কেন্দ্রের প্রায় নাকের ডগায় জঙ্গিরা যে ভাবে একাধিক ডেরা ফেঁদে বসেছিল, সে খবর সেনা-গোয়েন্দা কর্তাদের যারপরনাই উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে। তাঁরা বিশেষ করে জানতে চাইছেন, পানাগড়ের ঘাঁটিতে আঘাত হানার কোনও মতলব চক্রীদের ছিল কিনা। পূর্বাঞ্চলের এক সেনাকর্তার কথায়, “পানাগড়ে গোলাবারুদ ও উন্নত সমরাস্ত্রের ভাঁড়ার রয়েছে। তার উপরে ফৌজের শীর্ষ অফিসারেরা এখানে নিয়মিত আনাগোনা করে থাকেন। ফলে জঙ্গিদের কাছে পানাগড় বড় টার্গেট হতেই পারে।” উল্লেখ্য, গত ২৩ অগস্ট খোদ সেনাপ্রধান, জেনারেল দলবীর সিংহ সুহাগ পানাগড়ের ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। ২৭ অগস্ট ঘুরে এসেছেন বায়ুসেনার তদানীন্তন পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, এয়ার মার্শাল রবিকান্ত শর্মা।

এর ক’সপ্তাহের মাথায় খাগড়াগড়-কাণ্ড সেনা-কর্তৃপক্ষের কপালে স্বাভাবিক ভাবেই ভাঁজ ফেলেছে। বিস্ফোরণের প্রেক্ষাপটে মুর্শিদাবাদের নির্মীয়মাণ সেনা-ঘাঁটির নিরাপত্তার কথা ভেবেও তাঁরা চিন্তিত। কেন?

গোয়েন্দা-সূত্রের খবর: মুর্শিদাবাদে বহরমপুর ও ফরাক্কার মাঝে নতুন সেনা-ঘাঁটিটি গড়ে তোলা হচ্ছে, কলকাতা-শিলিগুড়ি সংযোগকারী ঘাঁটি হিসেবে। পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ নদী সীমান্তে নজরদারি এবং নদীপথে সেনা ও সমর সরঞ্জাম বহনের ব্যবস্থাও সেখান থেকে করা হবে। অর্থাৎ, দেশের নিরাপত্তার নিরিখে এটিরও গুরুত্ব হবে যথেষ্ট। এ দিকে বর্ধমান বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার সম্পর্ক উঠে এসেছে। সেখানেও বেশ কিছু জায়গায় জঙ্গি তালিম, অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও মডিউল তৈরির আস্তানার হদিস পেয়েছেন তদন্তকারীরা। উপরন্তু মুর্শিদাবাদ সেনা ছাউনির আশপাশে বাংলাদেশের জামাতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) কার্যকলাপ নজরে এসেছে। তাদের কয়েকটা গোপন ঘাঁটিরও সন্ধান মিলেছে। গত ২৪ অগস্ট প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি ও জেনারেল সুহাগ মুর্শিদাবাদের প্রস্তাবিত ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।

এই পরিস্থিতিতে সেনা-কর্তৃপক্ষ জানতে চাইছেন, পানাগড় বা মুর্শিদাবাদ ফৌজিঘাঁটিতে হানাদারির কোনও ছক জঙ্গিদের ছিল বা রয়েছে কি না। ফৌজি-সূত্রের দাবি: এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতেই সেনা-গোয়েন্দারা খাগড়াগড়ে গিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে আরও একটা দল যেতে পারে। ফৌজি তদন্ত প্রসঙ্গে রাজ্যের পুলিশ-কর্তারা অবশ্য খুব বেশি মুখ খুলতে চাননি। বর্ধমানের পুলিশ সুপার এসএমএইচ মির্জা শুধু বলেছেন, “সেনা-গোয়েন্দারা এসেছিলেন। ওঁদের পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।”

khagragarh blast military investigation jagannath chattopadhyay nia burdwan blast army investigation security purpose state news online state news country security reason
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy