Advertisement
E-Paper

বয়কটে বিশ্বাস নেই! নাম না করে কুণালকে খোঁচা দিয়ে অবস্থানে অনড় অভিষেক, পাশে ‘ডাক্তার’ সেনেরও

শিল্পী বয়কট প্রসঙ্গে নিজের পুরনো অবস্থানেই অনড় রইলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি শিল্পী বয়কটের কথা বলেছিলেন, সেই কুণাল ঘোষের নাম না করেও কটাক্ষ করেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:২১
Artist Boycott Issue: Abhishek Banerjee adamant on his position

শিল্পী বয়কট প্রসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফের খারিজ করলেন কুণাল ঘোষের বক্তব্য। —নিজস্ব চিত্র।

আরজি কর নিয়ে শিল্পীদের একাংশকে বয়কট প্রসঙ্গে নিজের পুরনো অবস্থানেই অনড় রইলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বুধবার আবার জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল বয়কটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।

আরজি কর পর্বে যে শিল্পী বা তারকারা রাজ্য সরকার, তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেছিলেন এবং তাঁর ইস্তফা দাবি করেছিলেন, তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেই শিল্পীদের বয়কটের আওয়াজ তুলেছিলেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর পরামর্শ ছিল যে, কোনও শিল্পীকে অনুষ্ঠানে ডাকার আগে দলের কর্মী বা নিচুতলার নেতারা যেন উচ্চতর নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে নেন। কিন্তু কুণালের ‘বয়কট তত্ত্ব’ খারিজ করে দিয়েছিলেন অভিষেক। তাঁর লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচির সূচনায় এক প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বলেছিলেন, তৃণমূল বয়কট করার রাজনীতি করে না। সে দিন যা বলেছিলেন সাংসদ, বুধবারেও সেই কথাই বলেছেন।

তবে এর মধ্যে আদিগঙ্গা দিয়ে জল গড়িয়েছে কিছু। কারণ, অভিষেকের ওই বক্তব্যের জবাবে কুণাল পাল্টা বক্তব্য পেশ করেছিলেন। বুধবার অভিষেক যা বলেছেন, তাতে নাম না করে কুণালের উদ্দেশেই খোঁচা রয়েছে বলে মনে করছেন দলের অনেকে। কারণ অভিষেক বলেছেন, ‘‘আমি যত দূর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিনি, তিনি বয়কট, ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাওয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। যদি করতেন, তা হলে এক সময়ে যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন, তাঁরা দলে ফিরতে পারতেন না।’’

উল্লেখ্য, সারদা মামলায় জেলে থাকাকালীন কুণাল নিয়ম করে নিশানা করতেন মমতাকে। প্রিজ়ন ভ্যান থেকে নেমে কুণাল এ-ও বলেছিলেন যে, ‘‘মমতা সারদার সব থেকে বড় বেনিফিশিয়ারি (সুবিধাভোগী)। যান, গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে অ্যারেস্ট (গ্রেফতার) করুন!’’ অনেকের বক্তব্য, অভিষেক সেই প্রসঙ্গই নতুন করে খুঁচিয়ে দিয়েছেন। যদিও অভিষেকের বক্তব্যের অব্যবহিত পরেই কুণাল কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, কয়েক ঘণ্টা পরে হলেও প্রতিক্রিয়া দেবেন।

বয়কট প্রসঙ্গে কুণালের তত্ত্ব খারিজ করে অভিষেক ১৩ দিন আগে বলেছিলেন, ‘‘দলনেত্রী এ ব্যাপারে কিছু বলেছেন? আমি সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কিছু বলেছি? আপনারা কোনও নোটিস দেখেছেন?’’ অভিষেকের ওই বক্তব্যের পরে মাঠে নেমেছিলেন কুণাল। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আরজি কর পর্বে অভিষেক বাইরে ছিলেন। তিনি সবটা জানেন না। আমরা যাঁরা সামলেছিলাম, তারা জানি। মমতা’দি বলে দিন যে আমি ভুল বলছি!, মেনে নেব।’’ দলীয় নোটিসের প্রশ্নে কুণাল জানিয়েছিলেন, একাধিক হোয়াটস্‌অ্যাপ গ্রুপে দলীয় নেতৃত্বের তরফে এই মর্মে সার্কুলার দেওয়া হয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল, শীতকালীন অনুষ্ঠানে শিল্পী ঠিক করার বিষয়ে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিতে হবে। কুণালের ওই তত্ত্ব আবার সমর্থন করেছিলেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি না হলেও ঠারেঠোরে বয়কট তত্ত্বকে সমর্থনই করেছিলেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। ঘটনাচক্রে, কয়েক মাস আগেও কুণাল-ব্রাত্য তৃণমূলের অন্দরে ‘অভিষেক-ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। ফলে বয়কট তত্ত্বে অভিষেকের উল্টো মেরুতে তাঁদের অবস্থানকে অনেকেই শাসকদলের ‘ভরকেন্দ্র বদলের ইঙ্গিত’ বলে অভিহিত করেছিলেন। বুধবার নাম না করে সেই কুণালের উদ্দেশেই ‘বার্তা’ দিয়েছেন অভিষেক, যা তৃণমূলে নতুন ‘বিতর্ক’ তৈরি করতে পারে।

পাশাপাশিই, দলে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত প্রাক্তন সাংসদ তথা চিকিৎসক শান্তনু সেনকে দল থেকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করার প্রসঙ্গে দলের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিলেও ‘চিকিৎসক’ শান্তনুর পাশেই দাঁড়িয়েছেন অভিষেক। তাঁর সেই মন্তব্যও দলীয় সমীকরণে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। উল্লেখ্য, দলবিরোধী কাজের অভিযোগে শান্তনু এবং ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে একসঙ্গে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল। ঘটনাচক্রে, শান্তনুই অভিষেকের ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচিতে প্রায় ১৫০০ চিকিৎসককে এক জায়গায় আনার নেপথ্য কারিগর। ‘নেতা’ শান্তনুর বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তকে শিরোধার্য করেও অভিষেক ‘চিকিৎসক’ শান্তনুর পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন। শান্তনু এবং আরাবুলের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়ে অভিষেককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর উপরে আমার আর কী পর্যবেক্ষণ থাকতে পারে?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আপনাদের মনে থাকবে, এর আগেও আরাবুল ইসলামকে সাসপেন্ড করেছিল দল। আরাবুল, শম্ভুনাথ কাউকে গ্রেফতার করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারই। এই নামগুলো নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে?’’

কিন্তু সাসপেন্ড হওয়া শান্তনু কী ভাবে সেবাশ্রয়ে ‘মেঘনাদের’ ভূমিকা নিচ্ছেন? অভিষেকের জবাব, ‘‘শান্তনু সেন এক জন চিকিৎসক। তিনি কোন ক্যাম্পে থাকবেন, পাড়ায় ক’টা রোগী দেখবেন, সেটা তাঁর বিষয়। ব্যক্তিগত ভাবে তো তিনি আরও পাঁচটা কাজে যুক্ত থাকতেই পারেন। এতে আমার কী বলার আছে?’’ যে বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিষেক কোনও মন্তব্যে না গেলেও তিনি ‘ডাক্তার’ শান্তনুর পাশেই রয়েছেন।

Abhishek Banerjee Kunal Ghosh Boycott Controversy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy