E-Paper

এসএসসিতেও ‘কাকু’, দাবি সিবিআইয়ের চার্জশিটে

এই চার্জশিটের ভিত্তিতে অনেকেরই প্রশ্ন, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তও সিবিআইয়ের হাতে আছে। সেই চাকরির নামে টাকা তোলা হলেও সুজয়কৃষ্ণ-সহ বাকি অভিযুক্তদের সেই মামলায় কেন গ্রেফতার করা হল না?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৩০
সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র।

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। —ফাইল চিত্র।

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’-কে গ্রেফতার করেছিল ইডি এবং সিবিআই। দু’টি মামলাতেই জামিন পেয়ে আপাতত তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তবে আদালতে জমা দেওয়া চতুর্থ চার্জশিটে সিবিআই অফিসার দাবি করেছেন, সুজয়কৃষ্ণ, তাঁর সহযোগী অরুণ হাজরা ওরফে চিনু এবং আর এক অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ শুধু প্রাথমিক নয়, মাধ্যমিক শিক্ষক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী পদের চাকরির জন্যও চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। টাকা নেওয়া হয়েছিল রেল এবং কর্মশিক্ষা-শারীরশিক্ষার শিক্ষক পদেরচাকরির জন্যও, বলে চার্জশিটে সিবিআই দাবি করেছে।

এই চার্জশিটের ভিত্তিতে অনেকেরই প্রশ্ন, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তও সিবিআইয়ের হাতে আছে। সেই চাকরির নামে টাকা তোলা হলেও সুজয়কৃষ্ণ-সহ বাকি অভিযুক্তদের সেই মামলায় কেন গ্রেফতার করা হল না? বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এবং বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে সুজয়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার কথা সিবিআই জানতে পারল, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির চার্জশিটে লিখল। অথচ গ্রেফতার করল না! ওই তদন্তে তো হেফাজতে নিয়ে জেরার প্রয়োজন ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেরই প্রশ্ন, তা হলে কি শুধু টাকা তোলা হয়েছিল, এটুকু উল্লেখ করেই সিবিআই দায় ঝেড়ে ফেলেছে? নাকি শুধুই আলটপকা অভিযোগ হিসেবে ওই তথ্য এসেছে চার্জশিটে? এই প্রসঙ্গেই এই চার্জশিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামোল্লেখ প্রসঙ্গও উঠেছে। চার্জশিটে কোনও পরিচয় এবং বিস্তারিত তথ্য ছাড়াই ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়’ নাম এবং ১৫ কোটি টাকা চাওয়ার প্রসঙ্গ লেখা হয়েছে। যা নিয়ে পাল্টা তোপ দেগেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রাথমিক নিয়োগে সুজয়কৃষ্ণের ‘সুপারিশে’ কে কে চাকরি পেয়েছেন, তা-ও জানতে পেরেছে সিবিআই। চার্জশিটে বলা হয়েছে যে ২৪২ জন চাকরিপ্রার্থীর নাম ‘সুপারিশ’ করেছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। তার মধ্যে ৬১ জন চাকরি পেয়েছেন। তদন্তকারী অফিসারের দাবি, সুজয়কৃষ্ণের পাঠানো তালিকা ধরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সচিবের কাছে যাচাই করা হয়েছিল। সচিবই ওই ৬১ জনকে চিহ্নিত করেছেন।

এই প্রাথমিক নিয়োগের দুর্নীতির প্রসঙ্গের পাশাপাশি চার্জশিটে বলা হয়েছে যে এই দুর্নীতিতে সুজয়কৃষ্ণ ‘দালাল’ হিসেবে অরুণ হাজরা ওরফে চিনুকে নিয়োগ করেছিলেন এবং চিনু প্রাথমিক শিক্ষক, গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদের শিক্ষাকর্মী, এসএসসি-র মাধ্যমে নিযুক্ত শিক্ষক, কর্মশিক্ষা-শারীরশিক্ষার শিক্ষক, সংগঠক শিক্ষক এবং রেলে চাকরির জন্য মোট ৭৮ কোটি টাকা চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে তুলেছিলেন। তার মধ্যে ১১.৫০ কোটি প্রাথমিক শিক্ষক পদের জন্য ‘কাকু’-কে দেওয়া হয়েছিল।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী পদে চাকরির জন্য কুন্তল ঘোষও চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ২৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন বলে সিবিআই চার্জশিটে দাবি করেছে। তাদের আরও দাবি, এই মামলায় আরেক অভিযুক্ত তাপসকুমার মণ্ডলের একটি ডায়েরি থেকে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যে তিনি বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থীদের সংগ্রহ করা ১৯ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা কুন্তলকে দিয়েছিলেন। এই চক্রে জুড়েছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সিবিআইয়ের দাবি, শান্তনু, সুজয়কৃষ্ণ এবং কুন্তল মিলে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে নিয়োগের বেআইনি চক্র বা ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সে সব চাকরির বিস্তারিত তথ্যও চার্জশিটে দেননি তদন্তকারী অফিসার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sujay Krishna Bhadra Kalighater Kaku CBI Primary Recruitment Case

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy