Advertisement
E-Paper

সংশোধিত ওবিসি তালিকার খসড়া অনুমোদন করল রাজ্য মন্ত্রিসভা, ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে শংসাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের তরফে একটি সংশোধিত (আপডেটেড) তালিকা পেশ করা হলে তাতে সিলমোহর দেন মুখ্যমন্ত্রী। তালিকা অনুযায়ী, আইনি জটিলতা দূর করতে আগে থাকা ৬৬টি জাতির সংখ্যা কমিয়ে ৬৪ করা হয়েছে এবং নতুন করে ৭৬টি জাতি সংযোজিত হয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ ২৩:৫৩
রাজ্যের ওবিসি (অনগ্রসর শ্রেণি) সংরক্ষণ নীতি নিয়ে হাইকোর্টের রায় মেনে সংশোধিত তালিকার খসড়া অনুমোদন করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা।

রাজ্যের ওবিসি (অনগ্রসর শ্রেণি) সংরক্ষণ নীতি নিয়ে হাইকোর্টের রায় মেনে সংশোধিত তালিকার খসড়া অনুমোদন করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

রাজ্যের ওবিসি (অনগ্রসর শ্রেণি) সংরক্ষণ নীতি নিয়ে হাইকোর্টের রায় মেনে সংশোধিত তালিকার খসড়া অনুমোদন করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের তরফে একটি সংশোধিত (আপডেটেড) তালিকা পেশ করা হলে তাতে সিলমোহর দেন মুখ্যমন্ত্রী। তালিকা অনুযায়ী, আইনি জটিলতা দূর করতে আগে থাকা ৬৬টি জাতির সংখ্যা কমিয়ে ৬৪ করা হয়েছে এবং নতুন করে ৭৬টি জাতি সংযোজিত হয়েছে। ফলে রাজ্যে স্বীকৃত ওবিসি জনগোষ্ঠীর মোট সংখ্যা দাঁড়াল ১৪০-এ।

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম সোমবার এ কথা জানিয়ে বলেন, “১৪০টি জাতিকে ওবিসি সংরক্ষণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে রাজ্য মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওবিসি তালিকাভুক্ত সম্প্রদায়ের মানুষের পক্ষ থেকে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানাই। এই পদক্ষেপ আগামী প্রজন্মের জন্য এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

সরকারি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, রাজ্য ওবিসি কমিশনের সাম্প্রতিক সমীক্ষা ও সুপারিশের ভিত্তিতেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। মন্ত্রিসভার ছাড়পত্রের পর ৯ জুন থেকে শুরু হতে চলা বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে সংশ্লিষ্ট সংশোধনী পেশ করা হবে। এই সংশোধনী বিধানসভায় পাশ হলেই তালিকা আইনি বৈধতা পাবে । ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায়, একাধিক ক্ষেত্রে শূন্য পদে নিয়োগে দীর্ঘ দিনের অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। আর বিধানসভায় এই তালিকা অনুমোদনের পর তা দূর হয় কি না, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে।

কলকাতা হাইকোর্টের গত বছরের একটি রায়ের প্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ বলে সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে। ওই রায়ে হাই কোর্ট ২০১০ সালের পর রাজ্যের দেওয়া সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র (সার্টিফিকেট) বাতিল ঘোষণা করেছিল। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৭৭টি সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে, যার মধ্যে ৭৫টি মুসলিম ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী ছিল। এই অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, এবং কলকাতা হাইকোর্ট ২০২৪ সালের মে মাসের রায়ে ওই অন্তর্ভুক্তিগুলি ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছিল। আদালত সেই রায়ে উল্লেখ করে যে, এই সম্প্রদায়গুলিকে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে ধর্মীয় মানদণ্ডই প্রধান ভিত্তি ছিল, যা সংবিধানসম্মত নয়। হাই কোর্টের এই নির্দেশের ফলে বাতিল হয়েছিল প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট।

তবে একই সঙ্গে হাই কোর্ট জানিয়েছিল, এই সার্টিফিকেট ব্যবহারকারী যাঁরা ইতিমধ্যে সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন এই রায়ে তাঁদের উপর প্রভাব পড়বে না। সেই প্রেক্ষিতে, রাজ্য সরকার নতুন করে ১৪০টি জাতিকে সংরক্ষণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পাশাপাশি, কলকাতা হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও আবেদন জানানো হয়েছিল রাজ্যের তরফে। শীর্ষ আদালতে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, নতুন সার্ভে শেষ করতে তিন মাস সময় লাগবে। ওই আবেদনের পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত আছে জুলাইয়ে। এদিকে হাইকোর্টেও সমীক্ষা-পদ্ধতি ঘিরে আগামী ১৯ জুন ফের শুনানি হবে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাজ্য সরকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়গুলিকে সংরক্ষণের সুবিধা দিতে চায় বলে সরকারের একটি সূত্রের দাবি। তবে, এই নতুন তালিকা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ইতিমধ্যেই। এ ক্ষেত্রেও ‘ধর্মভিত্তিক ভোটব্যাঙ্ক’ তৈরির চেষ্টা রয়েছে বলে বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ।

ঘটনাচক্রে, গত ৬ মে রাজ্য সরকারের নতুন করে ওবিসি সমীক্ষার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার শুনানিপর্বে হাই কোর্টও কিছু প্রশ্ন তুলেছিল। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, কোর্টের নির্দেশে বাতিল হওয়া ১১৭টি জনগোষ্ঠীকে কেন আবার সমীক্ষার গুরুত্ব দেওয়া হল? নিজেদের ওবিসি বলে দাবি করবেন এমন সম্প্রদায়কে কেন সুযোগ দেওয়া হল না? কেন ওই সমীক্ষা নিয়ে কেউ জানতে পারলেন না? কেন সমীক্ষার বিজ্ঞাপন দিল না রাজ্য? হাই কোর্ট তাঁর পর্যবেক্ষণে বলে, ‘‘কোনও সম্প্রদায় ওবিসি হিসাবে যোগ্য। অথচ তাঁরা এই সমীক্ষার কথা জানতেই পারলেন না। তাঁরা তো নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। কেন সকলকে জানানো হবে না সমীক্ষার বিষয়ে? তাঁদেরকেও তো আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে।’’

গত ৬ মে হাই কোর্টের নির্দেশ দিয়েছিল, সমীক্ষার বিষয়ে গ্রামপঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত বিজ্ঞাপন দিতে হবে। সকলে যেন ওই বিজ্ঞাপন সম্পর্কে জানতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। আদালত জানায়, নির্দিষ্ট কোনও জাতি বা সম্প্রদায় নয়, রাজ্যের সকলকে ওই সমীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। রাজ্য এবং স্থানীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিতে হবে রাজ্যকে। বিজ্ঞাপন দেখার পরে নতুন যাঁরা ওবিসির জন্য আবেদন করবেন, তাঁদের সহযোগিতা করতে হবে বিডিও এবং তাঁর অধীনে থাকা অফিসারদের। তবে বিচারপতি চক্রবর্তী এবং বিচারপতি মান্থার বেঞ্চ জানিয়েছিল, রাজ্যের করা সমীক্ষায় এখনই হস্তক্ষেপ করা হবে না। তাঁরা সমীক্ষা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আদালতের ওই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে, এই মর্মে আগামী ১৯ জুনের মধ্যে আদালতে হলফনামা দিতে হবে রাজ্য এবং কমিশনকে। তার আগেই সংশোধিত ওবিসি তালিকায় অনুমোদন দিল রাজ্য সরকার।

Mamata Banerjee Calcutta High Court OBC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy