E-Paper

অক্ষরজ্ঞান থেকে অঙ্ক, প্রাথমিকের ভয়াবহ রিপোর্ট

মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যানুয়াল স্টেটাস অব এডুকেশন রিপোর্ট, রুরাল’। বহু বছর ধরে ওই সংস্থা শিক্ষার এই সমীক্ষা করছে। দেশ জুড়ে ১৯টি ভাষায় প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকের গ্রামীণ এলাকার পড়ুয়াদের নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:২২

— প্রতীকী চিত্র।

ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ঠিক না-থাকা, নানা কারণে ছুটি দেওয়া এবং দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় পঠনপাঠনের ক্ষতি হচ্ছে বলে শিক্ষকদের একাংশ বার বার অভিযোগ করেছেন। তাঁদের সেই বক্তব্যই একটি বেসরকারি সংস্থার শিক্ষা রিপোর্টে প্রতিফলিত হয়েছে। সেই রিপোর্ট বলছে, এ রাজ্যে এখনও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া ৫.২ শতাংশ পড়ুয়ার বাংলা অক্ষরজ্ঞান পর্যন্ত নেই। ১৬.৪ শতাংশ পড়ুয়া অক্ষর পড়তে পারলেও শব্দ পড়তে পারে না। অঙ্কের অবস্থাও তথৈবচ। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ৪.৪ শতাংশ পড়ুয়া ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা চেনে না। প্রথম শ্রেণির ক্ষেত্রে যা ১৪.৩ শতাংশ। রিপোর্টে উঠে এসেছে, ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারি স্কুলেই ভরসা রাখছেন অধিকাংশ অভিভাবক। সেখানে বেসরকারি স্কুল অনেকটাই পিছিয়ে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যানুয়াল স্টেটাস অব এডুকেশন রিপোর্ট, রুরাল’ (এএসইআর)। বহু বছর ধরে ওই সংস্থা শিক্ষার এই সমীক্ষা করছে। দেশ জুড়ে ১৯টি ভাষায় প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকের গ্রামীণ এলাকার পড়ুয়াদের (৫ থেকে ১৬ বছর) নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে তারা। সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে এই সমীক্ষা হয়েছে। শিক্ষার মান থেকে শুরু করে স্কুলের পরিকাঠামো কেমন, কী কী সুবিধা রয়েছে, সবই সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

রিপোর্ট দেখে শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে ২০২২ সালে তৃতীয় শ্রেণির মাত্র ৩২.৬ শতাংশ পড়ুয়া দ্বিতীয় শ্রেণির কোনও পাঠ্যবই পড়তে পারত। ২০২৪ সালে দেখা যাচ্ছে, ৩৪ শতাংশ তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের নির্বাচিত অংশ পড়তে পারে। ২০২২ সালে তৃতীয় শ্রেণির মাত্র ৩২.৪ শতাংশ পড়ুয়া বিয়োগ অঙ্ক করতে পারত। ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৭.৫ শতাংশ। পঞ্চম শ্রেণির মাত্র ৩৪.৩ শতাংশ এবং অষ্টম শ্রেণির ৩৩.৫ শতাংশ পড়ুয়া ভাগ অঙ্ক করতে পারে। শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০২২ সালে সমীক্ষার আগের বছরগুলিতে করোনার জন্য স্কুল বন্ধ ছিল। তখন যুক্তি ছিল, করোনার জন্য স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনার মান পড়েছে। কিন্তু স্কুল খুলে গিয়েছে দু’বছর হয়ে গেল। এখনও ছবিটা আশাব্যঞ্জক নয়। যদিও শিক্ষকদের একাংশের মতে, কোভিডের পর থেকে পড়াশোনার মান এবং পরিকাঠামোরও কিছুটা উন্নতি হয়েছে, যা এই সমীক্ষাতেও প্রতিফলিত হয়েছে।

১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সিদের স্মার্টফোনের ব্যবহার নিয়েও সমীক্ষা চলেছে। তাদের মধ্যে ৮৪.৪ শতাংশ পড়ুয়ার বাড়িতে স্মার্টফোন আছে। এই পড়ুয়াদের ৬৬.৬ শতাংশ পড়াশোনার কাজে তা ব্যবহার করতে পারে। তবে, সেই ফোন কত জন নিরাপদে ব্যবহার করে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। ৪৯.৭ শতাংশ প্রয়োজনে কাউকে ব্লক করতে পারে। তবে, ডিজিটাল ক্লাসের উপরে জোর দেওয়া হলেও স্কুলে কম্পিউটার নেই ৯৫.৩ শতাংশের।

রিপোর্ট বলছে, মিড-ডে মিলের ছবিটা ভাল। ৮৪.৯ শতাংশ পড়ুয়া এই খাবার পাচ্ছে। ৭৫.৫ শতাংশ স্কুলে পানীয় জল রয়েছে। ৮২.৩ শতাংশ স্কুলে আছে শৌচালয়। তবে, ১৯.৫ শতাংশ স্কুলে মেয়েদের আলাদা শৌচালয় নেই। আলাদা শৌচালয় রয়েছে, কিন্তু সেটি তালাবন্ধ ৫.৪ শতাংশ স্কুলে। মেয়েদের শৌচালয় থাকলেও তা ব্যবহারযোগ্য নয় ৮.৯ শতাংশ স্কুলে। ব্যবহারযোগ্য মেয়েদের শৌচালয় রয়েছে ৬৬.২ শতাংশ স্কুলে।

পড়ুয়া ভর্তির ক্ষেত্রে অবশ্য সরকারি স্কুল অনেক এগিয়ে আছে। ৬ থেকে ১৪ বছরের ৮৯.৬ শতাংশ পড়ুয়া সরকারি স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ৮.৭ শতাংশ ভর্তি হয়েছে বেসরকারি স্কুলে। এই রাজ্য প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির হারে অন্যান্য রাজ্যের থেকে অনেক এগিয়ে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলে পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে ভর্তির হার ছিল ৮৭.৪ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৯১.৭ শতাংশ। তবে, ২০২৪ সালে তা আবার কমে হয়েছে ৮৬.৪ শতাংশ। মেয়েদের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছিল ৮৮.৭ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৯৩.১ শতাংশ। কিন্তু ২০২৪-এ ভর্তি হয়েছে ৮৯.৪ শতাংশ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Primary Education Education system

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy