Advertisement
১৮ মে ২০২৪
School Reopening

School reopen: হাজিরায় ভাটা, পড়ুয়া ফেরাতে চান শিক্ষকেরা

দীর্ঘস্থায়ী অতিমারি দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিক্ষারও যে সমধিক ক্ষতি করে দিয়েছে, সচেতন মানুষ মাত্রেই তা জানেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২১ ০৫:২৪
Share: Save:

দীর্ঘস্থায়ী অতিমারি দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিক্ষারও যে সমধিক ক্ষতি করে দিয়েছে, সচেতন মানুষ মাত্রেই তা জানেন। শিক্ষার সেই ক্ষত ও ক্ষতিটা কত বৃহৎ, স্কুল খোলার দিন তিনেকের মধ্যেই সেটা মর্মে মর্মে অনুভব করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সমস্যা মূলত গ্রামাঞ্চলেই। সেখানকার শিক্ষকদের ধারণা ছিল, গ্রামগঞ্জে অনলাইন ক্লাস যে-হেতু তেমন হয়নি, তাই স্কুল চালু শুরু হলেই পড়ুয়ারা দলে দলে উপস্থিত হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বহু স্কুলেই হাজিরার হার বেশ কম। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘদিন ঠিকমতো লেখাপড়া না-হওয়ায় অনেক ছাত্রছাত্রীরই পড়াশোনায় বড়সড় ঘাটতি চোখে পড়ছে।

এই অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপলব্ধি, এখন একসঙ্গে তাঁদের অতি জরুরি দু’টি কাজ করতে হবে। ফেরাতে হবে পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ঘাটতিও মেটাতে হবে অবিলম্বে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লকের হরিপুর গদাধর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রনীল প্রধান জানান, তাঁদের স্কুলে উপস্থিতির হার বেশ কম। বুধবার তিনি নবম শ্রেণির একটি ক্লাসে গিয়ে দেখেন, বেশ কয়েক জন অনুপস্থিত। ইতিমধ্যে ওই ক্লাসের চার ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ইন্দ্রনীলবাবু বলেন, “নবম শ্রেণির ওই মেয়েদের বয়স বড়জোর ১৪ থেকে ১৫। স্কুল খোলা থাকলে হয়তো ওই মেয়েদের বিয়ে হত না। আমরা জানতে পারলে আটকে দিতাম।” শুধু মেয়েরাই যে গরহাজির, তা নয়। নবম ও একাদশ শ্রেণির বেশ কিছু ছাত্রও অনুপস্থিত। কেন তারা আসেনি, তা জানতে চাওয়া হলে কয়েক জন ছাত্র নাকি জানিয়েছে, এখন ধান কাটার মরসুম। অনুপস্থিত ছাত্রদের কয়েক জন মাঠে ধান কাটতে গিয়েছে।

সামনে বোর্ড পরীক্ষা বলে দশম ও দ্বাদশের পড়ুয়ারা স্কুলে কম আসছে বলে মনে করছেন ওই জেলারই ঝাঁপবেড়িয়া হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষক অনিমেষ হালদার। তাঁর পর্যবেক্ষণ, নবম ও একাদশের অনেক ছাত্রছাত্রীর মনোভাব— ‘স্কুলের খাতায় নাম থাকলেই হল। পাশ তো করে যাব। এখনই স্কুলে যাওয়ার দরকার কী!’ অনিমেষবাবু বলেন, “দেড় বছরেরও বেশি স্কুলে না-আসার জেরেই এই মনোভাব তৈরি হয়েছে। অবিলম্বে এটা দূর করতে হবে। ছেলেদের কাউন্সেলিং দরকার। আবার শুনেছি, আমাদের স্কুলের কয়েক জন ছাত্র নাকি দর্জির কাজ করতে চলে গিয়েছে।”

তাঁদের বেশ কিছু পড়ুয়া কাজে চলে গিয়েছে বলে জানতে পেরেছেন মুর্শিদাবাদের সাতুই রাজেন্দ্র নারায়ণ হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক হীরক দাসও। তিনি বলেন, “স্কুল দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এই সমস্যা বেড়েছে। ওই সব পড়ুয়াকে ফেরানোর চেষ্টা করতেই হবে।” পশ্চিম মেদিনীপুরের পশং হাইস্কুলের এক ইতিহাসের শিক্ষক জানান, কয়েকটি শ্রেণির প্রথম দিকের রোল নম্বর অর্থাৎ এক থেকে দশের মধ্যে কয়েক জন, যারা পড়াশোনায় ভাল ছিল, তারাও গত তিন দিন ধরে স্কুলে অনুপস্থিত। ওই পড়ুয়াদের কয়েক জনের পরিবার পড়াশোনার ব্যাপারে তেমন আগ্রহী না-হলেও পড়ুয়ারা নিজেদের চেষ্টায় ভাল ফল করত। স্কুল জানিয়েছে, ওরা কেন অনুপস্থিত, খোঁজখবর করতে হবে।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, নবম ও একাদশের পড়ুয়াদের সাড়ে ৯টার মধ্যে স্কুলে আসতে বলার জন্যও কিছু অসুবিধা হচ্ছে। খবর নিয়ে জানা গিয়েছে, এত সকালে অনেকেই ঠিক সময়ে তৈরি হয়ে স্কুলে পৌঁছতে পারছে না। শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বৃহস্পতিবার বলেন, “দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক ছাত্রছাত্রীই টিউশনের উপরে বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সেই টিউশন তো বন্ধ হয়নি। সকালে টিউটরের কাছে পড়ে বাড়ি ফিরে তৈরি হয়ে সাড়ে ৯টার মধ্যে হয়তো স্কুলে আসতে পারছে না।”

সমস্যা শুধু হাজিরাতেই নয়। তিন দিন স্কুলে ক্লাস করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পর্যবেক্ষণ, করোনা অনেক পড়ুয়ার পঠন-দক্ষতাতেও গভীরতর ক্ষত তৈরি করে দিয়েছে। অনিমেষবাবু বলেন, “দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা বৃত্তের অঙ্ক করতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে। অথচ এটা তাদের আগেই শেখার কথা। অনেকে সরল সমীকরণের অঙ্কও ঠিকমতো করতে পারছে না। কারণ নবম শ্রেণির অঙ্ক তাদের ঠিকমতো করা নেই।” নদিয়া জেলার এক শিক্ষক জানাচ্ছেন, দ্বাদশ শ্রেণির কয়েক জন পড়ুয়া পাঠ্যবইগুলো পর্যন্ত কেনেনি। পড়ুয়ারা জানিয়েছে, টিউশনের নোটেই তাদের কাজ চলে যাচ্ছে। শিক্ষকেরা দেখছেন, মূলত বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতেই পড়ুয়ারা বেশি পিছিয়ে পড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Reopening
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE