Advertisement
E-Paper

হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, তবু টাকা খসল প্রৌঢ়ের

হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও কোনও নার্সিংহোম রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকলে সেটা বেআইনি।”

সুব্রত জানা

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩৪
বাগনানে নিজের বাড়িতে সঞ্জয় সাঁতরা। নিজস্ব চিত্র

বাগনানে নিজের বাড়িতে সঞ্জয় সাঁতরা। নিজস্ব চিত্র

‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড থাকলে নির্দিষ্ট হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে নিখরচায় চিকিৎসা (৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত) করা যাবে, বলছে রাজ্য সরকার। বাগনানের এক প্রৌঢ় দিনমজুরের অন্য অভিজ্ঞতা হল। ওই কার্ড থাকা সত্ত্বেও বুকের ব্যথার চিকিৎসা করাতে গিয়ে উলুবেড়িয়ার একটি নার্সিংহোমে তাঁকে ধার করে ১৫ হাজার টাকার বিল মেটাতে হল। এখনও পাঁচ হাজার টাকা বাকি।

বাকি টাকা কী ভাবে মেটাবেন আর কী ভাবেই বা ওষুধ কিনবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না বাগনানের হাটুরিয়া পঞ্চায়েতের খানপুরের সঞ্জয় সাঁতরা নামে ওই প্রৌঢ়। তিনি মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন।

হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও কোনও নার্সিংহোম রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকলে সেটা বেআইনি। রোগীর পরিবারের তরফে স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত অভিযোগ করলে ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক (উলুবেড়িয়া) অরিন্দম বিশ্বাসও। গত মাসে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে বুকে চোট পান সঞ্জয়। ব্যথা না-কমায় ১০ ডিসেম্বর তাঁকে উলুবেড়িয়ার নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। নার্সিংহোমটি ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। অনেক আগেই সঞ্জয় ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড করিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, সরকারের ঘোষণামতো সেখানে নিখরচায় চিকিৎসা পাবেন। কিন্তু তা হল না।

প্রৌঢ়ের স্ত্রী করুণা জানান, ওই কার্ড দেখিয়েই স্বামীকে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁর অবস্থা খারাপ হতে দেখে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অন্য কথা বলেন। করুণার দাবি, ‘‘নার্সিংহোম থেকে বলা হয়, রোগীর যা অবস্থা, ওই কার্ডে চিকিৎসা হবে না। বাধ্য হয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ওষুধ কিনে দিই। চার দিন থাকার জন্য নাসিংহোম ৩১ হাজার ১৩০ টাকা বিল করে। অনেক অনুরোধে ২০ হাজার টাকায় নামে। ধার করে ১৫ হাজার টাকা জোগাড় করে দিতে ১৫ ডিসেম্বর স্বামীকে ছাড়ে। বাকি পাঁচ হাজার টাকা শীঘ্রই মেটাব, এ কথা লিখে দিয়ে আসতে হয়।’’ সঞ্জয়ের দাদা নিখিলের ক্ষোভ, ‘‘সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কথা প্রচার করছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।’’ ওই প্রৌঢ়ের চিকিৎসা খরচ নেওয়ার কথা মানছেন উলুবেড়িয়ার ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। নার্সিংহোমের ম্যানেজার অসীম দাসের দাবি, ‘‘আমাদের নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ‘বি-গ্রেডে’ রয়েছে। রোগীপ্রতি প্রতিদিন ৭০০ টাকা বরাদ্দ করে সরকার। ওই টাকায় ওই রোগীর চিকিৎসা সম্ভব ছিল না। ওঁর পরিজনদের অন্যত্র নিয়ে যেতে বলি। ওঁরা রাজি হননি। টাকা দিয়েই চিকিৎসা করাতে রাজি হন। ওঁদের যা বিল হয়েছে, তার থেকে অনেক কমই নেওয়া হয়েছে।’’

‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে সরকারের বরাদ্দ এবং চিকিৎসার প্রকৃত খরচের মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন রয়েছে বিরোধীদেরও। শাসক দল অবশ্য এ সব প্রশ্নকে আমল দিচ্ছে না। উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সকল মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতে হবে। তা না হলে তদন্ত করে প্রয়োজনে ওই নার্সিংহোমের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’’

Bagnan Swastha Sathi Card
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy