বাগুইআটির দুই ছাত্র খুনে প্রধান অভিযুক্ত (মাঝে) সত্যেন্দ্র চৌধুরি। —ফাইল চিত্র।
বাগুইআটির দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী খুনে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরির ফাঁসির দাবি তুললেন নিহত ছাত্র অতনু দে-র মা-বাবা। শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে সত্যেন্দ্রকে পাকড়াও করার খবর টেলিভিশনে দেখার পর আরও এক বার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অতনুর মা। হাহাকার করে তিনি সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘‘ওকে (সত্যেন্দ্রকে) ফাঁসি দেওয়া হোক। পুলিশের গাফিলতিতে আমার ছেলেকে দেখতেও পারিনি।’’
‘পুলিশের গাফিলতি’তেই যে তাঁদের ছেলে অতনু এবং ভাগ্নে অভিষেককে হারাতে হয়েছে, সে অভিযোগ করেছেন অতনুর বাবা বিশ্বনাথ দে। প্রতিবেশী ‘জামাই’ সত্যেন্দ্রর ধরা পড়ার খবরে সন্তোষ প্রকাশ করলেও এই ঘটনার তদন্তে স্ত্রীর মতো তিনিও পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ করেছেন। বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘পুলিশের গাফিলতি অবশ্যই রয়েছে। পুলিশ বলেছিল, আমাদের ছেলেরা চলে আসবে। আমার ছেলে-ভাগ্নে দিঘায় গিয়েছে, এ রকমও বলেছিল পুলিশ।’’
বাগুইআটির হিন্দু বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ছাত্র অতনু দে এবং অভিষেক নস্করের খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই অভিজিৎ বসু-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার আটক করা হয় ভাঙড়ের পোলেরহাটের বাসিন্দা রবিউল মোল্লা নামে এক যুবককে। শুক্রবার সত্যেন্দ্রর গ্রেফতারির পর ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ।
দুই ছাত্রের পরিবার জানিয়েছিল, ২২ অগস্ট থেকে অতনু এবং অভিষেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তার দু’দিন পর বাগুইআটি থানায় অভিযোগ জানায় দুই ছাত্রের পরিবার। তাদের অভিযোগ ছিল, অতনুদের অপহরণ করা হয়েছে। শুক্রবার বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘আমাদের ছেলেদের নিখোঁজ হওয়ার ১২ দিন পরে বর্ধমান থেকে একটা মোবাইল পেয়েছিল পুলিশ। তখন থেকে ওদের (পুলিশের) একটু চিন্তা হয়। ওই মোবাইলটাই শুধু পেয়েছিল পুলিশ।’’ বিশ্বানাথের দাবি ছিল, অতনুরা নিখোঁজ হওয়ার পর বেশ কয়েক বার উড়ো ফোন পেয়েছেন। মুক্তিপণ চেয়ে মেসেজও পেয়েছেন মোবাইলে। তবে মুক্তিপণের অঙ্ক বার বার বদল করলেও ছেলেদের খোঁজ পাননি। এর পর ২৪ অগস্ট থেকে অতনুদের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। তদন্তের পর পুলিশের অনুমান ছিল, পরিচিত কেউ ওই দু’জনকে অপহরণ করেছে। সে সময় প্রকাশ্যে আসে অতনুদের পাশের বাড়ির ‘জামাই’ সত্যেন্দ্র চৌধুরির নাম। পুলিশ জানতে পারে, মোটরবাইক কেনার জন্য সত্যেন্দ্রকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল অতনু। সেই বাইক দেখাতেই অতনুকে ২২ অগস্ট ডেকে পাঠান সত্যেন্দ্র। তাঁর তুতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল অতনু। বিধাননগর পুলিশের দাবি, ওই দিন রাতেই দুই কিশোরকে খুন করা হয়। পরের দিন ন্যাজাট থানা এলাকায় এবং ২৫ অগস্ট হাড়োয়ায় উদ্ধার হয় যথাক্রমে অতনু এবং অভিষেকের দেহ। এই ঘটনায় গোড়ায় বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ ঘটনার তদন্ত করলেও পরে এর দায়িত্বভার দেওয়া হয় সিআইডিকে।
শুক্রবার বিশ্বনাথ সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘ওকে (সত্যেন্দ্র) যে ধরেছে, তাতে আমরা খুশি। আমরা ওর ফাঁসি চাই। যে ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে আমার ছেলেকে আর ভাগ্নেকে ও মেরেছে, তাঁদেরও ফাঁসি চাই। অন্য কেউ যাতে এ ধরনের সাহস না দেখাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কী কারণে এ কাজ করল, তা জানি না। আমরা (মুক্তিপণের) টাকাও জোগাড় করেছিলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy