Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সিপিএমের বিধায়ক, প্রাক্তন সাংসদকে রাস্তায় ফেলে পেটাল তৃণমূল

বহরমপুরে শাসকদলের কর্মী সমর্থকদের হাতে বেধড়ক মার খেলেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুধু মইনুল নন, সিমিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সদস্য, জোনাল কমিটির সম্পাদক-সহ প্রায় ২৫ জন সিপিএম কর্মী তৃণমূলের মারে গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ১০ জন সিমিএম কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্য দিকে, সাঁইথিয়ার বাম বিধায়ক ধীরেন বাগদির উপরেও চড়াও হন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। রক্ষা করতে গিয়ে হাত ভাঙে তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীর। তৃণমূলের তরফে যদিও ধীরেনবাবুর উপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

বহরমপুরে রাস্তায় ফেলে পেটানো হচ্ছে এক সিপিএম কর্মীকে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

বহরমপুরে রাস্তায় ফেলে পেটানো হচ্ছে এক সিপিএম কর্মীকে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১২:১৫
Share: Save:

বহরমপুরে শাসকদলের কর্মী সমর্থকদের হাতে বেধড়ক মার খেলেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুধু মইনুল নন, সিমিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সদস্য, জোনাল কমিটির সম্পাদক-সহ প্রায় ২৫ জন সিপিএম কর্মী তৃণমূলের মারে গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ১০ জন সিমিএম কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্য দিকে, সাঁইথিয়ার বাম বিধায়ক ধীরেন বাগদির উপরেও চড়াও হন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। রক্ষা করতে গিয়ে হাত ভাঙে তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীর। তৃণমূলের তরফে যদিও ধীরেনবাবুর উপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

এ দিনের সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘পুলিশ এবং শাসকদল ধর্মঘট ভাঙতে হাত মিলিয়েছে। যেখানে পেরেছে আক্রমণ করেছে। এত আক্রমণ মোকাবিলা করেও ধর্মঘট সর্বাত্মক। পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের প্রাক্ত সাংসদ এবং বিধায়কের উপর হামলা প্রমাণ করে দিচ্ছে, গণতন্ত্রকে কত সম্মান করে তৃণমূল!’’ যদিও মুখমন্ত্রী এ দিন দুপুরে দাবি করেন, ‘‘বন্‌ধ ব্যর্থ। সরকারি ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের উপর হাজিরা। কোনও কোনও জায়গায় গুন্ডামি করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু, মানুষ বন্‌ধ ব্যর্থ করেছে।’’

বহরমপুর শহরের টেক্সটাইল কলেজ মোড়ে রয়েছে সিপিএমের জেলা পার্টি অফিস। তারই ১০০ মিটারের মধ্যেই তৃণমূল বিদ্যুত্ কর্মচারী সমিতির কার্যালয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, ট্রেড ইউনিয়নগুলির একাংশের ডাকা বুধবারের সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে বহরমপুর শহরে এ দিন সকালে একটি কেন্দ্রীয় মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। ওই সময়ে বিদ্যুত্ কর্মচারী সমিতির কার্যালয়ে হাজির হন জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেন। কার্যালয়ের বাইরে তাঁর গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। তৃণমূলের অভিযোগ, সিমিএম কর্মীরা হঠাত্ই মান্নানের গাড়িতে ভাঙচুর করে। আর সেখান থেকেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত।

এর পরই খেপে গিয়ে লাঠি, বাঁশ, ইট নিয়ে সিপিএম কর্মীদের দিকে তেড়ে যান তৃণমূল কর্মীরা। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তৃণমূলের আক্রমণের কাছে কোনও প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি সিপিএম। তাঁদের দাবি, পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ সময়মতো হাজির না হলে এ দিন সিপিএমের পার্টি অফিস দখল করে নিত তৃণমূল। প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের ওই হামলার ঘটনায় জনা পঁচিশেক সিপিএম সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছেন।


বহরমপুরে ভাঙচুর করা হচ্ছে বাইক। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও এলাকায় উত্তেজনা কমেনি। বেলা ১২টা নাগাদ ফের চড়াও হয় তৃণমূল। সিপিএমের কার্যালয়ের সামনে রাখা বাইকগুলিতে ভাঙচুর করা হয়। তার মধ্যে একটি বাইক পুড়িয়েও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনার পর সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তথা সিটুর জেলা সম্পাদক তুষার দে বলেন, ‘‘আমরা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। পরিকল্পিত ভাবে আমাদের উপর তৃণমূল হামলা চালায়।’’ অন্য দিকে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মান্নান হোসেন বলেন, ‘‘আমরা আমাদের কার্যালয়ের ভেতরেই ছিলাম। আমার গাড়ি ভাঙচুর করে ওরা। আমাদের উপর আক্রমণের চেষ্টা করা হয়। দলীয় কর্মীরা প্রতিরোধ করেছে মাত্র।’’

অন্য দিকে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ বীরভূমের মহম্মদবাজারে সিপিএম বিধায়ক ধীরেন বাগদির নেতৃত্বে একটি মিছিল বেরোয়। ধীরেনবাবুর অভিযোগ, পুলিশের আপত্তি থাকায় তাঁরা নির্ধারিত পথের পুরোটা না গিয়ে বাসস্ট্যান্ড থেকেই ফিরে আসেন। সেই সময় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা ওই মিছিলের উপর হামলা চালায়। ইট-পাথর-লাঠি নিয়ে সিপিএম কর্মীদের বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ধীরেনবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের লোকজন আমাদের কর্মীদের ব্যাপক ভাবে মারধর করে। আমাকেও মারে। সেই সময় আমার রক্ষী ঠেকাতে এলে তাঁকেও মারা হয়। ওঁর হাত ভেঙে গিয়েছে।’’ এই ঘটনায় ৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

তৃণমূল যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, পুলিশের কাছে তারা ধর্মঘট বিরোধী মিছিল করার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু, সেই অনুমতি মেলেনি। অথচ বামেদের মিছিল করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই বিষয়ে পুলিশের কাছে প্রতিবাদ জানাতে যাওয়ার সময় সিপিএমের পার্টি অফিস থেকে ইট ছোড়া হয়। তারই পাল্টা হিসেবে কেউ কেউ ইট ছুড়ে থাকতে পারে বলে তৃণমূলের দাবি।


সিপিএম কর্মীদের দিকে ছোড়া হচ্ছে ইট। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

হুগলির কোন্নগরেও এ দিন দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার বিকেলে। ধর্মঘট ব্যর্থ করতে ওই দিন তৃণমূল এলাকায় মিছিল করে। অভিযোগ, সেই সময় সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা তাদের উপর হামলা চালায়। তৃণমূলের অবিযোগ, ওই ঘটনায় তাদের দুই সমর্থক আহত হয়। এর পর এ দিন সকালে স্থানীয় ক্রাইপার রোডে সিমিএমেপ পার্টি অফিসে হামলা চালায় তৃণমূল। সিপিএম পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই ঘটনায় সিপিএমের এক জন এবং তৃণমূলের তিন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের কান্দি এবং উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জেও সিপিএমের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে।


গ্রেফতার করা হচ্ছে মেয়র অশোক ভট্টাচার্যকে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

অন্য দিকে, শিলিগুড়িতে সিপিএমের পার্টি অফিসের সামনে ধর্মঘটীদের সঙ্গে বচসা বাধে পুলিশের। শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে হেনস্থা করে। তাঁর কথায়, ‘‘শহরের এক নম্বর নাগরিক হলেও আমাকে ছাড় দেয়নি পুলিশ।’’ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। হরিহরপাড়ার বিধায়ক ইন্সার আলির উপরও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মেরে তাঁর নাক-মুখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE