Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ-পারে স্বামীর দেহ ও-পারে ছেলের

এসেছিলেন তিনজন। স্বামী, স্ত্রী আর দশ বছরের ছেলে। ফেরার সময় ছেলের কফিন-বন্দি দেহ বাংলাদেশে নিয়ে গেলেন আসমা বিবি।

স্বজনহারা: পেট্রাপোলে আসমা বিবি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

স্বজনহারা: পেট্রাপোলে আসমা বিবি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সীমান্ত মৈত্র
কলকাতা ও বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২৬
Share: Save:

এসেছিলেন তিনজন। স্বামী, স্ত্রী আর দশ বছরের ছেলে। ফেরার সময় ছেলের কফিন-বন্দি দেহ বাংলাদেশে নিয়ে গেলেন আসমা বিবি। আর স্বামীর দেহ পড়ে রইল কাঁটাতারের এ পারেই, বনগাঁ হাসপাতালের মর্গে।

ক্যান্সার আক্রান্ত ছেলে আসাদের চিকিৎসা করাতে কলকাতায় এসেছিলেন ঢাকার গাজিপুরের বাসিন্দা আসমা বিবি ও তাঁর স্বামী মহম্মদ রফিক। রবিবার কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় আসাদ। ছেলে হারানোর যন্ত্রণার সঙ্গে যোগ হয় সীমান্ত পেরনোর ঝক্কি। কাগজপত্রের জটিলতায় সোমবার সন্ধ্যায় পেট্রাপোল সীমান্তে এসেও ছেলের দেহ নিয়ে ফেরার ব্যবস্থা করতে পারেননি আসমা আর রফিক। দিনভরের লড়াই আর মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন বছর পঁয়তাল্লিশের রফিক। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।

স্বামী আর ছেলের দেহ আগলে এরপর এক অন্য লড়াই শুরু হয় বছর চল্লিশের আসমার। অভিবাসন দফতরের নিয়মকানুন মেনে দেহ দু’টো দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াই। শেষে কাগজপত্রের জটিলতায় আটকে যায় স্বামীর দেহ। মঙ্গলবার শুধু ছেলের দেহ নিয়েই গাজিপুর ফিরেছেন আসমা। যাওয়ার আগে বলেছেন, ‘‘ভাল চিকিৎসার জন্য বিদেশে এসে কারও যেন এমন পরিণতি না হয়।’’

আরও পড়ুন:নারদ-কাণ্ডে নজরবন্দি আরও দুই বড় নেতা

কিন্তু কেন এই হয়রানি? অভিবাসন দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের কেউ এ দেশে মারা গেলে প্রথমে মৃত্যুর শংসাপত্র নিয়ে যেতে হয় কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনে। সেখান থেকে ‘এনওসি’ (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) নিয়ে যেতে হয় ‘রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারের’ কাছে। সেখান থেকে ‘এনওসি’ পেলে মেলে দেহ নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র। গোটা প্রক্রিয়াটাই সময় সাপেক্ষ। তারপর অনেকে নিয়মের খুঁটিনাটি জানেনও না। এ সব জানানোর সরকারি ব্যবস্থাও নেই।

সন্ধে ছ’টার পরে আবার কোনওভাবেই সীমান্ত পেরোতে দেওয়া হয় না। পেট্রাপোলে মৃতদেহ রাখার ব্যবস্থাও নেই। আসাদের দেহ তাই সোমবার সারা রাত ভ্যান রিকশাতেই পড়েছিল। বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার জকি আহাদ অবশ্য বলেন, ‘‘এ সব ক্ষেত্রে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই এনওসি দিয়ে দিই।’’ কিন্তু নিয়ম জানানোর ব্যবস্থা নেই কেন, কেনই বা অনলাইন ব্যবস্থা চালু হয়নি? অভিবাসন দফতরের এক কর্তার জবাব, ‘‘সবই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি।’’

পাসপোর্ট হাতে নিয়েও তাই মাসুল গুনতে হচ্ছে আসমাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE