Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Credit Card

Credit Card: ব্যবহারই হয়নি ক্রেডিট কার্ড, টাকা দাবি ব্যাঙ্কের

বিমলাদেবী জানান, তাঁর টিপ সই দিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা হয়। তবে তিনি ক্রেডিট কার্ডের বিষয়ে কিছুই জানেন না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:০৮
Share: Save:

তিন বছর আগে বাড়িতে ক্রেডিট কার্ড এসেছে ঠিকই। তবে তা একবারও ব্যবহার করা হয়নি। অথচ সেই কার্ডের জন্য কয়েক হাজার টাকা দাবি করে ফিক্সড ডিপোজ়িটের টাকা তুলতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এমন ঘটনার জেরে বিপাকে পড়েছেন উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের জোয়ারগোড়ি নয়াচক গ্রামের বছর আশির বিমলাবালা মাঝি।

অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী বিমলাদেবী গত দশ বছর ধরে অসুস্থতার জেরে শয্যাশায়ী। দেখতে পান না। তাঁর হয়ে ব্যাঙ্কের লেনদেন করেন ছেলে-বৌমা। বিমলাদেবী জানান, তাঁর টিপ সই দিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা হয়। তবে তিনি ক্রেডিট কার্ডের বিষয়ে কিছুই জানেন না।

বিমলাদেবীর বৌমা নীলিমা মাঝি জানান, বছর তিনেক আগে ওই ব্যাঙ্কের উলুবেড়িয়ার বাণীতবলা শাখা থেকে ফোন করে দেখা করার জন্য জানানো হয়েছিল। তাঁর দাবি, ‘‘ব্যাঙ্কে কয়েকটা কাগজে সই করানো হয়েছিল। একজন বলেছিলেন, আমাদের সুবিধার জন্যই ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। মাস তিনেক পর ক্রেডিট কার্ড আসে। কিন্তু সেটায় আমরা হাতও দিইনি।’’

এর পরই গত দু’বছর ধরে ওই কার্ড ব্যবহারের জন্য টাকা দাবি করে ব্যাঙ্কের তরফে চিঠি পাঠানো শুরু হয়। সেই টাকা মেটাতে পারেনি ওই পরিবার। ওই কার্ডের জন্য ফিক্সড ডিপোজ়িটের টাকাটা গ্যারেন্টি হিসাবে রাখা হয়েছিল। টাকা না মেটানোর মাসুল হিসেবে ওই ফিক্সড ডিপোজ়িটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও সেই টাকা তোলার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

বিমলাদেবীর ছেলে কার্তিক বলেন, ‘‘মায়ের পেনশনের টাকাতেই সংসার চলে। ফিক্সড ডিপোজ়িটের টাকা তুলতে না-পারলে সংসার চালানোই দায় হবে।’’ তার আরও ক্ষোভ, ‘‘কার্ড এসেছে ঠিকই। কিন্তু ওটা ফেরত দেওয়ার জন্য আমরা বহুবার ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি। যে কার্ড আমরা ব্যবহারই করিনি, তার জন্য ক্ষতিপূরণ কেন দেব?’’

ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বাণীতবলা শাখার ম্যানেজার শিবম সিংহ বলেন, ‘‘বিমলাবালা মাঝির তরফে একটি অভিযোগ মিলেছে। অভিযোগপত্রটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের বিষয়টি ব্যাঙ্ক দেখে না। অন্য একটি বিভাগ গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড দেয়।’’

তবে ক্রেডিট কার্ড সেলস বিভাগের হাওড়া ইউনিটের ম্যানেজার ভোলানাথ সাহার দাবি, ‘‘টিপ ছাপ দেওয়া গ্রাহক কখনও ক্রেডিট কার্ডের দাবিদার হতে পারেন না। ওই মহিলা নিজেই আবেদন করেছিলেন। না হলে তার ক্রেডিট কার্ড গেল কী করে? হয়তো গ্রাহকের বদলে অন্য কেউ ব্যাঙ্কে গিয়ে আবেদন করেছেন। পরে ফোন করা হলে তিনি সম্মতি দিয়েছেন। তাই তাঁর নামে কার্ড পাঠানো হয়েছে। তবে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।’’

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ভানুপ্রতাপ সিংহ বলেন, ‘‘বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ডের জন্য বার্ষিক চার্জ দিতে হয়। কার্ড ব্যবহার না করলেও সেটা দিতে হয়। গ্রাহকদের এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।’’

তবে অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার আশিসকুমার জানার মত, ‘‘এটা একটা বড় জালিয়াতি। এখন বহু ব্যাঙ্কে এমন নানা উটকো লোক বসে থাকে। তাদের ব্যাঙ্ক চত্বরে ঢুকতে দেওয়া হয় কেন? মানুষকে এ ভাবে ভুল বোঝানোর কোনও মানে হয়? বিষয়টি ব্যাঙ্ক ম্যানেজারও এড়িয়ে যেতে পারেন না।’’ এ বিষয়ে আইনজীবী রেজাউল করিমেরও মত, ‘‘বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। তবে ব্যাঙ্কের ভূমিকাও সন্দেহজনক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Credit Card bank Fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE