Advertisement
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

১৭ বছর বন্ধ প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ, ক্ষোভ ভাতারে

প্রায় আট একর জমি নিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভাতারের ওরগ্রামে তৈরি হয় আবাসিক প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কিন্তু ওই কেন্দ্রের সীমানার মধ্যে থাকা পুকুর, ধান জমিতে গজিয়ে উঠেছে জঙ্গল। দরজা, জানলা ভেঙে পড়ে প্রশিক্ষণ ভবনটি প্রায় হানাবাড়ির চেহারা নিয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি নতুন করে চালু করা হোক কেন্দ্রটি।

জমেছে আগাছা, ভেঙে পড়ছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভবন। নিজস্ব চিত্র।

জমেছে আগাছা, ভেঙে পড়ছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভবন। নিজস্ব চিত্র।

রানা সেনগুপ্ত
ভাতার শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০১
Share: Save:

প্রায় আট একর জমি নিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভাতারের ওরগ্রামে তৈরি হয় আবাসিক প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কিন্তু ওই কেন্দ্রের সীমানার মধ্যে থাকা পুকুর, ধান জমিতে গজিয়ে উঠেছে জঙ্গল। দরজা, জানলা ভেঙে পড়ে প্রশিক্ষণ ভবনটি প্রায় হানাবাড়ির চেহারা নিয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি নতুন করে চালু করা হোক কেন্দ্রটি।

‘লুথান ওয়ার্ল্ড সার্ভিস’ নামের একটি বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই কেন্দ্রটি তৈরি করে। তারপর সাতের দশকে তত্‌কালীন পূর্তমন্ত্রী ভোলানাথ সেন কেন্দ্রটিকে ঢেলে সাজান। ১৯৮১ সালের নভেম্বর মাসে তত্‌কালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু সরকার অধিগৃহীত কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবন্ধী যুবক, যুবতীরা ওই কেন্দ্রে এসে হাতের কাজ শিখতেন। কিন্তু তারপরেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রাক্তন কর্মী দিলীপ আচার্য বলেন, “কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও কর্মীদের ২০০৬ সাল পর্যন্ত কার্যত বসিয়ে রেখে বেতন দেওয়া হয়েছিল, এই ভেবে যে কেন্দ্রটি ফের খোলা হবে। কিন্তু তারপরেই আমাদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেল, ওই কেন্দ্রে সেলাই, তাঁত, কাঠের কাজ-সহ মোট পাঁচটি বিষয়ে প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এক সময় ১২০ জনকে ওই কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ছিলেন ১৪ জন। ওরগ্রামের বাসিন্দা মীর নজরুল ইসলাম বলেন, “এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে বহু যুবক-যুবতী স্বনির্ভরও হয়েছেন। কিন্তু আচমকা কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেলার প্রতিবন্ধীরা নিজের পায়েদাঁড়ানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন। আবার কর্মীরাও কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়লেন।”

ফিরে দেখা

• স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একটি বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে তৈরি হয় এই কেন্দ্র।

• সত্তরের দশকে কেন্দ্রটি ঢেলে সাজান তত্‌কালীন পূর্তমন্ত্রী ভোলানাথ সেন।

• ১৯৮১ সালে সরকার অধিগ্রহণ করে এই কেন্দ্রটি।

• ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণের কাজ চালু ছিল।

• প্রশিক্ষণ বন্ধের পরেও ২০০৬ পর্যন্ত কর্মীদের বেতন দেওয়া হত।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি অনুযায়ী ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি খোলার জন্য স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও রাজ্য সরকার থেকে সেইভাবে সাড়া মিলছে না বলে জানা গেল। স্থানীয় সাহেবগঞ্জ ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সীতারাম সরকার বলেন, “গত পঞ্চায়েত ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসার পরেই ওই কেন্দ্রটিকে ফের চালু করার জন্য জেলা সভাধিপতি ও পঞ্চায়েত মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কয়েক মাস আগে ওরগ্রামে আসেন। তাঁকেও অনুরোধ করা হয় কেন্দ্রটি খোলার জন্য ব্যবস্থা নিতে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও কাজই হয় নি।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “স্থানীয় মানুষের দাবি ওই কেন্দ্রটিকে নতুন করে চালু করতে হবে। ওটি আমাদেরই প্রকল্প। তাই কী করলে ফের কেন্দ্রটিকে চালু করা যায়, তা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE