Advertisement
১৮ মে ২০২৪
পুলিশ ফাইল থেকে

পার সতেরো বছর, শুরুই হয়নি সাক্ষ্য

তোলাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন ব্যবসায়ীরা। গরমের সকালে সেই দৌরাত্ম্য শুরু হয়ছিল হাটে। খবর পেয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতা। বন্দুক বের করে সটান গুলি চালিয়ে দেয় দুষ্কৃতী। লুটিয়ে পড়েন নেতা।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া: শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০১:২৭
Share: Save:

১৯৯৯ সালের ১৩ এপ্রিল জামুড়িয়ার কেন্দা হাটতলায় গুলিতে খুন সিপিএম নেতা মোহিত বাউরি। ছ’জনের নামে অভিযোগ দায়ের। সকলেই জামিনে ছাড়া পান। মূল অভিযুক্ত সাধন বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘ দিন নিখোঁজ। পুলিশ চার্জশিট জমা দিয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি।

তোলাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন ব্যবসায়ীরা। গরমের সকালে সেই দৌরাত্ম্য শুরু হয়ছিল হাটে। খবর পেয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতা। বন্দুক বের করে সটান গুলি চালিয়ে দেয় দুষ্কৃতী। লুটিয়ে পড়েন নেতা।

১৯৯৯ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল ১০টা নাগাদ জামুড়িয়ার কেন্দা গ্রামে গুলিতে খুন হয়ে যান বছর আঠাশের মোহিত বাউরি। তিনি তখন সিপিএমের কেন্দা গ্রামের ইউনিট সম্পাদক। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হাটে তোলাবাজির প্রতিবাদ করায় তাঁকে খুন করে নানা দুষ্কর্মে অভিযুক্ত স্থানীয় বাসিন্দা সাধন বন্দ্যোপাধ্যায়। গুলি চালিয়ে সাধন সকলের সামনে দিয়েই পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে সতেরো বছর। ছ’জনের নামে অভিযোগ করেছিল নিহতের পরিবার। মূল অভিযুক্ত সাধন এখন নিখোঁজ। পুলিশ চার্জশিট জমা দিলেও এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময়ে সাধন এলাকার মানুষের কাছে কার্যত আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছিল। তার নানা কাজকর্মে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন বাসিন্দারা। এলাকায় পরিষ্কার ভাবমূর্তির মোহিত খুন হওয়ার পরে তাই ক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। সাধনের আত্মীয় মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতিবেশী সুকুমার ভট্টাচার্য, বাসু বিশ্বাসদের বাড়ি-আবাসনে ভাঙচুর চালানো হয়।

গোলমাল-গণ্ডগোলের মাঝেই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি জামিন পান মাস তিনেক পরে। তার পরে অভিযুক্ত সাধন, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রণব বিশ্বাস আত্মসমর্পণ করে। মাস দুয়েকের মধ্যে তারাও জামিনে ছাড়া পায়। ঘটনার প্রায় দশ মাস পরে আত্মসমর্পণ করেন জয়ন্তবাবু ও সুকুমারবাবু। তাঁরাও পরে জামিন পান। বর্তমানে এলাকার যুব তৃণমূল নেতা জয়ন্তবাবু দাবি করেন, ‘‘আমি তখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। পরের দিন পরীক্ষা ছিল। আমি বাড়িতে পড়াশোনা করছিলাম। হঠাৎ এক বন্ধু এসে জানায়, মোহিত বাউরি খুন হয়েছেন। খুনে যুক্ত সাধনদাকে ধরতে না পেরে সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা দল বেঁধে আমার বাড়ির দিকে আসছে। শুনে আমি বাড়ি থেকে পালাই। তবে ওরা বাড়ি তছনছ করে যায়।’’

জয়ন্তবাবু জানান, সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি এখনও। মামলার রায়ে বেকসুর খালাস হবেন, এই আশায় রয়েছেন তাঁরা। জয়ন্তবাবু দাবি করেন, ‘‘মোহিতের উত্থানে তখন সিপিএম নেতা শ্যামল ভট্টাচার্যের গোষ্ঠীর অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছিল। তারাই সাধনকে কাজে লাগিয়ে থাকতে পারে।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, জামিন পাওয়ার কিছু দিন পর থেকে সাধনের হদিস নেই। মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘সাধনকে সিপিএমের লোকজন পরিকল্পিত ভাবে খুন করে দেহ লোপাট করেছে। ও বেঁচে থাকলে হয়তো মোহিত-খুনের মামলায় সিপিএমের জনা কয়েক নেতার নাম জড়িয়ে যেত। ঘটনার নিরপক্ষে তদন্ত জরুরি।’’ সিপিএম নেতা শ্যামলবাবু যদিও বলেন, ‘‘এ সব অপপ্রচার। এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে, আমরা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। সাধন বরাবরই বাম-বিরোধী। ঘটনার সময়ে তৃণমূলের সঙ্গে ছিল।’’

অভিযুক্তদের আইনজীবী শান্তনু চক্রবর্তী জানান, সাধনের ব্যাপারে পুলিশ কোনও রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। মামলা এসডিজেএম আদালতে রয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি। নিহতের স্ত্রী সান্ত্বনাদেবী ইসিএলে কাজ করেন। তিনি বলেন, “প্রকাশ্যে বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ওই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা শুনে আমি ছ’জনের নামে অভিযোগ করি। তখন আমার মেয়ের বয়স ছ’মাস ও ছেলে এক বছরের। এখন তারা পড়াশোনা করছে। ওদের নিয়ে বিচারের আশায় বেঁচে আছি। শুধু কঠোর সাজা চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police file
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE