Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
মুণ্ডেশ্বরী নদীর চরে মিলেছিল দুই তৃণমূল কর্মীর দেহ

জামালপুরে জোড়া খুনে দোষী ১৮

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জামালপুরের উজিরপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর।

আট বছর আগে এখানেই ফেলে রাখা হয়েছিল দু’টি দেহ। ফাইল চিত্র

আট বছর আগে এখানেই ফেলে রাখা হয়েছিল দু’টি দেহ। ফাইল চিত্র

 নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:০৮
Share: Save:

বিধানসভা ভোট আসতে তখনও দেরি। কিন্তু, গ্রাম দখলের রাজনীতি পুরোমাত্রায় শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই লড়াইয়েরই বলি হয়েছিলেন জামালপুরের দুই তৃণমূল কর্মী। ঘটনার আট বছর পরে আর এক ভোটের মরসুমে ওই জোড়া খুনের দায়ে মঙ্গলবার ১৮ জনকে দোষী সাব্যস্ত করলেন বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (প্রথম) মহম্মদ রেজা। আজ, বুধবার সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জামালপুরের উজিরপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। হুগলি ঘেঁষা পূর্ব বর্ধমানের (তখন সাবেক বর্ধমান জেলা) ওই এলাকায় ঈশা হক মল্লিক (৫৪) ও পাঁচু দাসের (৬২) দেহ মেলে মুণ্ডেশ্বরী নদীর চরের ভিতর থেকে। প্রথম জনের বাড়ি উজিরপুরে। পাঁচুবাবুর ছিলেন স্থানীয় অমরপুর গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে পাঁচুবাবুর ভাইপো প্রবীর দাস সিপিএমের ১৮ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি দাবি করেছিলেন, ঘটনার দিন বেলা ১১টা নাগাদ চাল কিনতে বাজারে বেড়িয়েছিলেন ঈশা হক মল্লিক। ফেরার পথে উজিরপুরে সিপিএমের সশস্ত্র মিছিলের সামনে পড়ে যান তিনি। আর ঘরে ফেরেননি চাষবাস করে দিন কাটানো ঈশা। অভিযোগ, ওই ঘটনার পরেই অমরপুরে প্রবীরবাবুদের বাড়ি আক্রমণ করে সিপিএম। সে সময় বাড়িতে ভাত খেতে বসেছিলেন তাঁর জ্যাঠামশাই বৃদ্ধ পাঁচুবাবু। ভাতের থালা ফেলে দিয়ে পাঁচুবাবুকে তুলে নিয়ে যায় অভিযুক্তেরা। এলাকা জুড়ে তাণ্ডব চালানো হয়। পরে গ্রাম থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে নদীর চরে ওই দু’জনের ক্ষতবিক্ষত দেহগুলি মেলে।

সরকারি আইনজীবী শিবরাম ঘোষাল বলেন, “ডাক্তারি রিপোর্টে নিহতদের দেহে ৫২-৫৫টি ক্ষত চিহ্ন মিলেছে। এক জনের পিঠে তিরও গেঁথে ছিল। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের কাছ থেকে পাওয়া ওই তির পুলিশ বজেয়াপ্ত করে। চিকিৎসক ও পুলিশকর্মীরা সাক্ষ্য দিতে এসে সে কথা আদালতকে জানিয়েছিলেন। এ ছাড়াও ঘটনার চার জন প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে দাঁড়িয়ে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেন।” জোড়া খুনের ঘটনার চার মাস পরে, ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি ওই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার সুজিত ভট্টাচার্য অভিযুক্ত ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করেন। অভিযুক্তেরা পিটিয়ে ও তির মেরে এলাকা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে চার্জশিটে জানানো হয়।

পরে ওই ১৮ জনই জামিনে ছাড়া পান। এ দিন তাঁদের সকলকেই আদালতে হাজির করানো হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৮/৩০২/৩৪ ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল। বিচারকও ওই ধারাতেই দোষী সাব্যস্ত করেছেন অভিযুক্তদের। রায়ের পরেই তাঁদের বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

জামালপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল প্রামাণিক বলেন, “সিপিএম তাদের ৩৪ বছরে কী ধরনের সন্ত্রাস চালিয়েছে, তা এই ঘটনায় আরও এক বার প্রমাণ হয়েছে। ওই দু’জন নিহত হওয়ার পরে দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জামালপুরে এসেছিলেন। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে আদালতে লড়াই চালিয়েছি।” অভিযোগকারী প্রবীরবাবু বলেন, “অনেক হুমকির কাছে আমরা মাথা নত করেনি। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।” একই কথা জানিয়েছেন ঈশা হকের ভাই মহম্মদ হোসেন মল্লিক। তাঁর কথায়, “রাজনীতির সঙ্গে দাদার প্রত্যক্ষ যোগযোগ ছিল না। স্পষ্টবাদী ছিলেন বলে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। দোষীদের চরম সাজা ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না।”

যদিও সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, জামালপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমর ঘোষ দাবি করেন, ‘‘ঘটনার দিন তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনী রেশলাতপুর গ্রাম দখল করতে এসেছিল। গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করেছিলেন। দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। রায়ের কপি না দেখে মন্তব্য করব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC workers Murder Convicted
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE