মন্দির-মসজিদ বানানো রাজনীতিকদের কাজ নয়। তাঁদের কাজ মানুষকে পরিষেবা দেওয়া। আর মন্দির-মসজিদ বানাতে হলে রাজতীনি ছেড়ে দিয়ে তা করা উচিত। হুমায়ুন কবীরের বাবরি মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আপনি মন্দির-মসজিদ বানাতেই পারেন, কিন্তু রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে বানান!’’
২০২১ সালে ভরতপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতে বিধায়ক হন হুমায়ুন। তবে বিধানসভা ভোটের বেশ কিছু দিন পর থেকেই তিনি এমন কিছু মন্তব্য করতে শুরু করেন, যা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তৃণমূলকে। দলের সর্বময়নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। শো কজ়ও করা হয় হুমায়ুনকে। তবে হুমায়ুন বদলাননি! দিন কয়েক আগে তিনি নতুন দল গড়ার কথা এবং বেলডাঙায় ‘বাবরি মসজিদ’ তৈরির ঘোষণা করেন তিনি। তার পরেই দল থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল। এ বার সেই হুমায়ুনের বাবরি মসজিদ নির্মাণ এবং দলগঠন নিয়ে মুখ খুললনে অভিষেক।
শনিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে হুমায়ুনের ‘বাবরি মসজিদ’ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অভিষেক বলেন, ‘‘কোথায় তৈরি হচ্ছে? আমি তো শুধু দেখছি ইট পড়ে আছে। আগে শুরু হোক। কোনও ঘোষণার ভিত্তিতে কিছু বলা যায় না।’’ তার পরেই অভিষেক স্পষ্ট বলেন, ‘‘আপনাকে যদি মন্দির-মসজিদের রাজনীতি করতে হয় তো আপনার আর বিজেপির পার্থক্য কোথায়?’’
আরও পড়ুন:
অভিষেক মনে করেন, ‘‘মন্দির-মসজিদ বানানো অধিকার সকলের আছে। তাতে কোনও অসুবিধা নেই। আপনি মন্দির বানান, মসজিদ বানান, গুরুদ্বার বানান, চার্চ বানান— কিন্তু রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে।’’ তৃণমূল সাংসদের মতে, রাজনীতিকদের একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত— জনতার সেবা! অভিষেক বলেন, ‘‘রাজনীতিক হিসাবে আপনি হাসপাতাল বানান, স্কুল বানান, বিশ্ববিদ্যালয় বানান। মানুষের স্বার্থে কাজ করুন। ধর্ম আপনার ঘরে করুন। এক জন রাজনৈতিক নেতার মন্দির-মসজিদ বানানো এবং তা নিয়ে রাজনীতি করা শোভা দেয় না।’’
বাবরি মসজিদ নিয়ে হুমায়ুনকে কটাক্ষ করতে গিয়ে অভিষেক টেনে এনেছেন ২০১৯ সালের প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, ‘‘হুমায়ুন কবীর ২০১৯-এ বিজেপির প্রার্থী ছিলেন। বাবরি মসজিদের যে ঘটনা ঘটেছিল, সেটা ১৯৯২ সালে। যে দল বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল, সেই দলের প্রার্থী হতে দিল্লি গিয়েছিলেন। তখন আপনার কিছু মনে হল না? এখন বোধদয় হল?’’
গত ২২ ডিসেম্বর বড় সভা করে নিজের দলের নাম ঘোষণা করেছিলেন হুমায়ুন। দলের নাম ‘জনতা উন্নয়ন পার্টি’। শুধু তা-ই নয়, কিছু কেন্দ্রে প্রার্থীও ঘোষণা করেন হুমায়ুন। কংগ্রেস-সিপিএম-আইএসএফের সঙ্গে জোট বেঁধে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিজেপিকে হারানোর হুঙ্কারও দিয়েছেন তিনি। তবে সাসপেন্ডেড দলীয় নেতার নতুন দলকে বিশেষ পাত্তা দিতে রাজি নন অভিষেক। এক বার হুমায়ুন বা তার দলের নাম না-করে তিনি বলেন, ‘‘দল গঠনের অধিকার সকলের সকলের রয়েছে। কেউ যদি দল শুরু করতে চায় তবে তাতে অসুবিধা কোথায়? কেউ যদি নিজেকে নেতা মনে করেন, জনতাকে আপনাকে সমর্থন নিয়ে আসতে হবে। আসুন, তার পর দেখা যাবে। এখন দেখার বিষয়, জনতা কাকে সমর্থন করে।’’ অভিষেক স্পষ্ট জানান, ‘‘জনতা বোকা নয়। আমাদের কিছু নেতা আছেন, যাঁরা মনে করেন জনতাকে বোকা বানানো যায়। কিন্তু ভুল, জনতা সব কিছু বোঝে।’’ তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘কারও যদি মনে হয় তৃণমূলকে হারাব, তবে দল তৈরি করুন, নির্বাচনে লড়ুন, হারান তৃণমূলকে, জিতে আসুন।’’