Advertisement
০৩ মে ২০২৪

মহিলারা পথে নেমেছেন, মদ-কারবারিরা হুঁশিয়ার

অণ্ডালের শ্রীরামপুরের বাউরিপাড়ার ওই প্রমীলা বাহিনীর উদ্দেশ্য একটাই, এলাকা থেকে অবৈধ মদের কারবার ও কারবারিদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করা। গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার এই টহলে সাফল্যও মিলেছে বলে জানান ওই মহিলারা।

শ্রীরামপুরে প্রমীলা-বাহিনীর টহল। নিজস্ব চিত্র

শ্রীরামপুরে প্রমীলা-বাহিনীর টহল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
অণ্ডাল শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০৮:৪০
Share: Save:

ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যা ৬টা। একে একে গ্রামেরই এক জায়গায় জড়ো হলেন মহিলারা। কারও হাতে বাঁশের লাঠি, কারও বা ঝাঁটা। এর পরে কয়েক ঘণ্টা টানা টহল। বোতল দেখলেই তা কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেওয়া, তাতেও না হলে একটু ‘সমঝে’ দেওয়া— সব ভূমিকাতেই দেখা যায় এই বাহিনীকে। অণ্ডালের শ্রীরামপুরের বাউরিপাড়ার ওই প্রমীলা বাহিনীর উদ্দেশ্য একটাই, এলাকা থেকে অবৈধ মদের কারবার ও কারবারিদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করা। গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার এই টহলে সাফল্যও মিলেছে বলে জানান ওই মহিলারা।

কিন্তু ক’মাস আগেও গ্রামের ছবিটা কেমন ছিল? টহল দিতে দিতেই সুমিত্রা বাউরি, ঝর্ণা বাউরিরা জানান, এলাকায় প্রায় দু’হাজার জনের বাস। বাড়ির পুরুষদের বেশির ভাগেরই পেশা দিনমজুরি। কিন্তু সেই দিনমজুরি করে যে ক’টা টাকা হাতে আসত, তার বেশির ভাগটাই মদের নেশায় উড়িয়ে দিতেন পুরুষদের একটা বড় অংশ। নেশা ছড়াতে ‘ভূমিকা’ নিয়েছিল পা়ড়ায় গজিয়ে ওঠা পাঁচটি মদের দোকান। এমনকি, কয়েক জন পাড়়ায় ছিলেন, যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই গোপনে মিলত মদের ‘ডেলিভারি’। নেশার খপ্পরে পড়়ে অসুস্থ হওয়া, মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান সুমিত্রারা। শুধু তাই নয়, এর জেরে বাড়িতে অশান্তি যেমন বাড়ছিল, তেমনই পড়াশোনার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছিল।

এ সব কারণে কয়েক বার পুলিশের কাছেও ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয় বলে জানান ঝর্ণাদেবী। পুলিশ অভিযান চালিয়ে দোকান ভেঙে দেয়। কিন্তু মদের ‘ডেলিভারি’ বন্ধ হয়নি। তা ছাড়া কয়েক দিন পরে সব থিতিয়ে গেলে ফের চালু হত মদের দোকান। বার বার এমনটা দেখেই পরিকল্পনাটা মাথায় আসে গ্রামের মহিলাদের। তাঁরা জানান, প্রায় ৮০ জন মহিলা রয়েছেন এই বাহিনীতে। সুমিত্রাদেবী বলেন, “দুই ছেলে নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়া। আমরা পরিচারিকার কাজ করি। এর পরেও ছেলেমেয়েদের মানুষ না করতে পারলে তো সব কষ্টই বেকার হবে।’’

পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মদ-বিরোধী অভিযানে নামেন মহিলারা। তাঁরা জানান, অন্তত পাঁচ বার ওই ভ্রাম্যমাণ কারবারিদের থেকে মদের বোতল কেড়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর চালানো হয়েছে মদের দোকানগুলিতেও। ঝর্ণাদেবীদের কথায়, ‘‘আসলে ধারাবাহিক অভিযান না চালালে নেশার কবল থেকে কেউ বাঁচবে না। তাই এই টহল। আগামী দিনেও এটা চলবে। আমরা শুধু বলি, মহিলারা পথে নেমেছেন, মদ-কারবারিরা হুঁশিয়ার।’’

প্রমীলা বাহিনীর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন স্তরের মানুষ। অণ্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ কাঞ্চন মিত্র বলেন, “রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সব মহিলারা সচেতনতা আন্দোলনে নেমেছেন। এলাকাবাসী উপকৃত হচ্ছেন। আমরা পাশে আছি।’’ পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন স্থানীয় শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রদীপ মণ্ডলও। এখানেই শেষ নয়। এলাকারই একটি জুনিয়র স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শিউলি মজুমদার পড়ুয়াদের নিয়ে নেশার বিরুদ্ধে সচেতনতা নাটক ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন বলে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Liquour Women Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE