উপরে, কর্মীদের সঙ্গে টিভি দেখছেন বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। নীচে, সুকুল শিকদার।—নিজস্ব চিত্র।
পাশেই বসে টেলিভিশনের চ্যানেল ঘোরাচ্ছিলেন এক যুবক। দাদা আসতেই রিমোট চলে গেল তাঁর হাতে। দেখতে শুরু করলেন খবরের চ্যানেলে।
সবে একটু খবরের কাগজ নিয়ে বসেছিলেন। আচমকা মোবাইলটা বেজে উঠল। ‘দাদা লিড হচ্ছেই।’ শুনেই খানিক নিশ্চিন্ত তিনি।
প্রথম জন কালনার তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। দ্বিতীয় জন সিপিএমের সুকুল শিকদার। দল আলাদা, তবে একটা বিষয়ে ভারি মিল দু’জনের। ভোট মিটেছে সেই কবেই। তার পর কালনার জমি কার দখলে যাবে, তা জানতে আর তর সইছে না দুই প্রার্থীর। প্রতিদিনই চড়ছে উৎকণ্ঠার পারদও।
২১ এপ্রিল ভোটের দিনেই বিশ্বজিৎবাবু খবর পান, ভগ্নিপতি অসুস্থ, ভর্তি হাসপাতালে। ভোট মিটতেই ছুটে যান কলকাতায়, ভগ্নিপতির কাছে। শহরে না থাকলেও দলের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে ছাড় নেই বিশ্বজিৎবাবুর। প্রতিনিয়ত সঙ্গীদের ফোন আসতে থাকে। কারও গলায় খানিক উৎকণ্ঠা, ‘দাদা কী হবে?’ কেউ বা আবার প্রত্যয়ের সঙ্গে জানিয়ে দিচ্ছেন কোন পঞ্চায়েতে কত লিড হবে এ বার। তবে তাতে কী বা এসে যায়। দলীয় সূত্রে খবর, ফল না বেরনো পর্যন্ত কোনও আশ্বাসেই নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না বিশ্বজিৎবাবু।
আত্মীয়ের ঘর থেকে কালনায় ফিরতেই বিশ্বজিৎবাবুকে প্রতিদিন সকালে শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার দলীয় কার্যালয়ে দেখা যায়। সেখানেও চলছে ভোটের ফল নিয়ে বিস্তর জল্পনা। আড্ডা মারতে মারতেই দলের নেতা, কর্মীদের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছেন কোথায় কেমন ভোট হয়েছে। ফলের সম্ভাবনাই বা কেমন। তবে এ সব থেকে খানিক রেয়াত মিলছে মন্দিরে। ঈশ্বর বিশ্বাসী বিশ্বজিৎবাবুকে প্রায়শই শহরের বৈদ্যপুর, গোপালদাসপুর, ধামাস মন্দিরে গিয়ে দীর্ঘ সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে। প্রার্থনা একটাই, ‘ভোট বৈতরণী’ পার করার। কখনও চকবাজারের পারিবারিক দোকানে বসে ব্যবসা সামলাতেও দেখা যাচ্ছে তাঁকে। তবে উৎকণ্ঠা যে সবসময় তাড়া করছে, তা নিয়ে কোনও রাখঢাক নেই বিশ্বজিৎবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘এত দেরিতে ভোটের ফল। ১৯ তারিখটা গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি যেন।’’
ভোট ময়দানে বিশ্বজিৎবাবুকে জোর টেক্কা দিয়েছেন কালনার সিপিএম প্রার্থী সুকুল শিকদার। সুকুলবাবুর উৎকণ্ঠাও কিছু কম নয়। টেলিভিশন দেখা তেমন পছন্দের নয় এই বাম নেতার। বদলে ফাঁক পেলেই চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন খবরের কাগজে। দলের প্রার্থীর পাশাপাশি জোনাল সম্পাদকও বটে সুকুলবাবু। ভোট মিটেছে। তাড়া নেই প্রচার, মিটিং-এর। এখন প্রতিদিন সকালে সুলতানপুরের বাসিন্দা সুকুলবাবু বেরিয়ে পড়ছেন কালনা শহরে জোনাল অফিসের উদ্দেশে। অফিসে পৌঁছেই নেতা, কর্মীদের সঙ্গে গল্পগুজব করতে বসছেন তিনি। খোঁজ নিচ্ছেন, কোথায় কেমন সম্ভাবনা। বিকেল হতেই দলের মৃত কর্মীদের জন্য চাঁদা সংগ্রহেও বেরোচ্ছেন তিনি। চাপ কাটাতে দলের বইপত্র পড়া অনেক দিনের পুরনো অভ্যাস এই বাম নেতার। তবে পাশ থেকে কেও ভোটের কথা পাড়লেই মাথায় উঠছে পড়াশোনা। ফল নিয়ে উৎকণ্ঠা? সুকুলবাবুর জলদি জবাব, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে সকলেই উৎকণ্ঠায় ভোগেন। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। এ বর ফল প্রকাশে দেরি হচ্ছে বলে উৎকণ্ঠা খানিক বেশিই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy