পহেলগামে জঙ্গি হানা এবং মঙ্গলবার গভীর রাতে ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাতের পরে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পাকিস্তান সীমান্তে। আগেই রাজ্যগুলিকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির জন্য মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। এমন অবস্থা, জেলার প্রবীণ নাগরিকদের কারও কারও মনে পড়ে যাচ্ছে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশে যুদ্ধের সময়ের পরিস্থিতির কথা।
দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্লান্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রণজিৎ গুহ জানান, বিমান হানার আশঙ্কায় সেই সময়ে কারখানা বড় বড় কালো ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ডিএসপি টাউনশিপের সব কোয়ার্টার্সের জানলায় মোটা কাগজ সেঁটে দেওয়া হয়েছিল, যাতে সন্ধ্যার পরে বাইরে কোনও আলো না বেরোয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার বহু দিন পরেও সেই কাগজ জানলায় রয়ে গিয়েছিল বহু কোয়ার্টার্সেই। এ-জ়োনের হস্টেল অ্যাভিনিউয়ের একাংশে আশ্রয়স্থল তৈরি করা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময়ে তিনি রৌরকিলা ইস্পাত কারখানায় চাকরি করতেন। সেখানে সাইরেন বাজলে কী ভাবে কান চেপে বসে পড়তে হবে, দ্রুত কীভাবে ঘরের মধ্যে ঢুকে যেতে হবে এই সব বিষয়ে তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশ মেনে চলতে হবে সব নাগরিককে। তবেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।’’
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী প্রণয় রায় জানান, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়ে চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ডিএসপি টাউনশিপের বি-জ়োনে তিলক রোডে কাকার কোয়ার্টার্সে থাকতেন। তাঁর বাড়ি বনগাঁর চাঁদপাড়া গ্রামে। দুর্গাপুরে তিনি দেখেছেন, তৎকালীন গ্র্যান্ডট্র্যাঙ্ক রোড ধরে সেনাবাহিনীর গাড়ি সার দিয়ে এগিয়ে চলেছে। ও দিকে, গ্রামের বাড়ি থেকে তখন বহু জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, কারণমাঝে মধ্যেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দিক থেকে পাক বাহিনীর গোলা এসে পড়ত এলাকায়। সন্ধ্যার পরে ‘ব্ল্যাক আউট’ হত। সাইরেন বাজত। মাথার উপর দিয়ে উড়েযেত যুদ্ধবিমান। ঘর থেকে বেরোনো বারণ ছিল। তিনি বলেন, ‘‘অকল্পনীয় ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কেটেছে সে দিনগুলি।’’ তিনি আরও জানান,যুদ্ধের ওই দিনগুলিতে গ্র্যান্ড ট্র্যাঙ্ক রোড ধরে বহু উট ও ঘোড়া যেত। তবে তার সঙ্গে যুদ্ধের কোনওসম্পর্ক আছে কি না, তা তখন তিনি জানতে পারেননি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)