Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বিয়ে নয় পড়ব, জেদের কাছে হার মানল পরিবার

 কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বাঁকুই গ্রামের বাসিন্দা ওই কিশোরী পালিটা হাইস্কুলের ছাত্রী। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে সে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাসখানেক আগে পাশের তেওড়া গ্রামের এক দিনমজুরের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন কিশোরীর বাবা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪৩
Share: Save:

স্কুল, পড়াশোনা বন্ধ করে কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি নয় সে। কিন্তু বাড়ির লোকেরাই যে ‘বিরোধী’। উপায় না পেয়ে সাহস করে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে পুরো ঘটনা জানায় মেয়েটি। আর বাধা আসেনি। স্কুলের উদ্যোগেই বিয়ে রোখা হয় কেতুগ্রামের পালিটার বছর ষোলোর ওই কিশোরীর।

কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বাঁকুই গ্রামের বাসিন্দা ওই কিশোরী পালিটা হাইস্কুলের ছাত্রী। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে সে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাসখানেক আগে পাশের তেওড়া গ্রামের এক দিনমজুরের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন কিশোরীর বাবা। তবে মেয়েটিকে কিছু জানানো হয়নি। দিন তিনেক আগে পুরো বিষয়টি জানতে পারে ওই কিশোরী। মেয়েটির দাবি, ‘‘তিন দিন পরে বিয়ে জেনে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কী করব। কিন্তু এখন বিয়ে করব না ঠিক করে নিয়েছিলাম। সাহস করে দু’এক জন পড়শির সঙ্গে কথা বলি। তাঁরাই স্কুলে জানানোর পরামর্শ দেন।’’

এ দিকে শুক্রবার মেয়ের বিয়ের জন্য প্রায় সমস্ত প্রস্তুতিই সেরে ফেলেছিল ওই পরিবার। প্যান্ডেলও বাঁধাও হয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যেই দুপুরে পৌঁছে যান পুলিশ, ব্লক প্রশাসন ও চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা। পালিটা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃপাসিন্ধু দাস বলেন, ‘‘বিয়ের আগের দিন বাবার মোবাইল থেকে লুকিয়ে ফোন করেছিল ওই ছাত্রী। বলে, ‘আমি পড়তে চাই, যে কোনও ভাবে বিয়ে বন্ধ করে দিন স্যার।’ আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারিনি।’’ রাতেই থানায় বিষয়টি জানান তিনি। এ দিন ওই কিশোরী পরিবারকে নাবালিকা বিয়ের কুফল বুঝিয়ে ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে না দেওয়ার মুচলেকাও লিখিয়ে নেওয়া হয়।

পরে ওই কিশোরীর বাবা বলেন, ‘‘দিনমজুরি করে সংসার চালাই। অভাবের সংসারে ভাল ছেলে পেয়ে মেয়েটার বিয়ে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু ১৮-র বিয়ে দিতে নেই, তা জানতাম না। আর ভুল হবে না।’’ ওই কিশোরী বলে, ‘‘কলা বিভাগে পড়ার ইচ্ছে আছে। সবই স্যারের জন্য সম্ভব হল।’’ কৃপাসিন্ধুবাবুর দাবি, ‘‘স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা খবর পেলেই নাবালিকা বিয়ে রুখতে এগিয়ে যায়। ওই ছাত্রীর পড়ার সাহায্য লাগলে স্কুল পাশে আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teenage Marriage Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE